মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এ দেশে অনেক ভালো পোশাক কারখানা আছে যুক্তরাষ্ট্র সাথে আছে- থাকবে

প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন ব্লুম বার্নিকাট বলেছেন, সস্তা শ্রম নয়, শ্রমিকদের কাজের নৈপুণ্যে যে পোশাক তৈরি হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী সেটার জনপ্রিয়তার কারণেই তৈরি পোশাক খাতের বিস্তার হয়েছে। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের সঙ্গে আছে এবং থাকবে। গতকাল শনিবার ‘রানা প্লাজা দিবস’ উপলক্ষে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘রি ইমার্জিং ফ্রম রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি : অ্যান অ্যাকাউন্ট অন দ্য থার্ড এনিভারসারি’ শীর্ষক এক সংলাপে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট এ কথা বলেন। মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির তিনবছরের প্রেক্ষাপটে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে ধসে পড়ে সাভারের রানা প্লাজা; সেখানে পাঁচটি পোশাক কারখানা ছিল। এতে অন্তত ১ হাজার ১৩৫ জন নিহত হন। এ ঘটনাটি সারা বিশ্বে ভবন ধসে সবচেয়ে বড় প্রাণহানির ঘটনা।
কারখানা পরিদর্শনে আসা ক্রেতাদের দুটি সংগঠন অ্যাকোর্ড এবং অ্যালায়েন্স বাংলাদেশে কতদিন তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে এমন তর্কে নিজ দেশের অবস্থান তুলে ধরে বার্নিকাট বলেন, অ্যাকোর্ড, অ্যালায়েন্সের অবদান প্রথম দিকে বোঝা না গেলেও, এখন এটার ফল পাওয়া যাচ্ছে। কারণ, তারা গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করেছে।
রানা প্লাজা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রানা প্লাজার মতো একটি খারাপ ঘটনা পুরো খাতকে কলঙ্কিত করে। কিন্তু এর পরও তো অনেক ভালো কারখানা রয়েছে। ভালো পোশাক কারখানার কথা বলবে না। তাই অনিরাপদ একটি পোশাক কারখানাও দেশের পোশাক খাতের জন্য ঝুঁকি।
বার্নিকাট বলেন, পোশাক কারখানার সার্বিক মান নিশ্চিত করলে উৎপাদনশীলতা বাড়ে। এটা ব্যবসায়িক দিক দিয়েও লাভজনক এবং তা পরিসংখ্যানগতভাবে প্রমাণিত।
বাংলাদেশের পোশাক খাতের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে উল্লেখ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, কারখানা সংস্কার ও কর্মপরিবেশের উন্নয়নে বাংলাদেশ নেতৃত্ব পর্যায়ে আছে। আশা করি, বাংলাদেশ এটা ধরে রাখতে পারবে এবং প্রতিযোগিতায় সক্ষম থাকবে।
নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত লিওনি মার্গারেথ বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে আদর্শিক ও ভালো কারখানাগুলোর বেশ কয়েকটি বাংলাদেশে অবস্থিত। তবে বিশ্বব্যাপী এটির খুব একটা প্রচারণা নেই। রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে।
রানা প্লাজার উপর তৈরি করা পঞ্চম গবেষণা প্রতিবেদনে সিপিডি’র অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ৩ হাজার ৬৩২টি কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে। তবে এখনো একটি বড় অংশ পরিদর্শনের বাইরে রয়েছে। এর সংখ্যা ৯০৯টি।
সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গত তিন বছরে হালনাগাদ তথ্য নিয়ে এবারের প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ৫টি বিষয়কে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নিখোঁজ শ্রমিক, আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা, পুনকর্মসংস্থান, আইনি পরিস্থিতি ও আর্থিক সহায়তার বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
সিপিডি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সিপিডি ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় এতে আরো উপস্থিত ছিলেন- সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান, অ্যাডিশনাল রিসার্চ ডিরেক্টর ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন, সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমসহ শ্রমিক নেতারা। এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, স্পেন, সুইডেন, নরওয়ের রাষ্ট্রদূতসহ আইএলও, অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স প্রতিনিধিরা।
এর আগে রাজধানীর গুলশানে স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে ব্র্যাকের আয়োজনে ‘ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবনের পথে’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে মার্শা বার্নিকাট বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ও আহত শ্রমিকদের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। বাংলাদেশের শ্রমিকদের পেশাগত ও স্বাস্থ্যগত সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের পোশাক কারখানার অগ্নি ও ভবননিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাকে ১৫ লাখ ডলার দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের অগ্নি ও ভবন নিরাপত্তা-বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য সলিডারিটি সেন্টারকে ১০ লাখ ডলার দেয়া হয়েছে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শ্রমিকেরা অগ্নিনিরাপত্তা ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
তিনি শ্রমিকদের জোরালো মত প্রকাশের সুযোগ থাকা অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘যেখানে তারা বলতে পারবে, আমরা এমন ফেটে যাওয়া ভবনে কাজ করবো না’। তাই আমরা শ্রমিকদের উন্নয়নের কর্মসূচি সমর্থন করি এবং সেই মতামতকে শক্তিশালী করতে সরকার, আইএলও, ব্যক্তিগত খাত ও অন্যান্য মিশনের সঙ্গে আছি।
এ সময় রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, কর্মস্থলের দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব হলেও বন্ধ করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আহতদের আমরা কিভাবে সাহায্য করবো সেটা গুরুত্বপূর্ণ।
ব্র্যাকের আয়োজনে এ আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- ব্রাকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ূ পরিবর্তন বিষয়ক পরিচালক গহ্বর নাইম ওয়ারা, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ব্যবস্থাপনার বোর্ডের যুব প্রতিনিধি রেজওয়ান নবীন প্রমুখ। সভায় দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের জীবন যুদ্ধ ও শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি প্রকাশনা উদ্বোধন করা হয়। এছাড়া এসব শ্রমিকের সাফল্য ও প্রয়োজন ভিত্তিক একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় এ সভায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন