পরিকল্পনামন্ত্রী বললেন বিশেষ অর্জন
দারিদ্র্যের হার কমে ২১.৮%
মাথাপিছু আয় ১৭৫১ ডলার
বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চূড়ান্ত হিসেবে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। টাকার অঙ্কে ওই বছরের জিডিপির আকার ২২ লাখ ৫০৪ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। এছাড়া দেশে এখন দারিদ্র্যের হার ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। সংখ্যায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবসা করছে। আর মাথাপিছু জাতীয় আয় এখন এক হাজার ৭৫১ ডলার। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ এক লাখ ৪৩ হাজার ৭৮৯ টাকা। অর্থ্যাৎ মাসে একজন মানুষের গড় আয় ১১ হাজার ৯৮২ টাকা। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আজকের (মঙ্গলবার) দিনটি আমাদের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। বিশেষ দিন। বিশেষ অর্জন। আমরা নিজেদের রেকর্ড নিজেরাই ভাঙ্গছি। আমাদের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে’।
বিবিএসের দেওয়া তথ্য নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, গত অর্থবছর ছয় মাসের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আমরা প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ অর্জনের একটা সাময়িক প্রাক্কলন করেছিলাম। কিন্তু পুরো বছরের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গেছে, আমাদের প্রবৃদ্ধির হার রেকর্ড ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ হয়েছে। এর ফলে পরপর তিন বছর সাত শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করল বাংলাদেশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সাত দশমিক ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। এর আগে বছরে (২০১৫-১৬) প্রবৃদ্ধি ছিল সাত দশমিক ১১ শতাংশ।
রেকর্ড প্রবৃদ্ধির পেছনে কৃষি খাতের অভাবনীয় সাফল্যের কথা উল্লেখ করেন মন্ত্রী। একই সঙ্গে শিল্প খাতের অবদানও ছিল। তবে সেবা খাতে আমাদের অবস্থা ততটা ভালো নয়। সেবা খাতের অবস্থা আগের মতো নেই। তবে এগুবে। সেবা খাতের অবদান বাড়লে অর্থনীতিতে গতি আসবে।
বিবিএসের দেওয়া তথ্য মতে, গত অর্থবছর মাথাপিছু জাতীয় আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছিল ১৭৫২ ডলার। কিন্তু বছর শেষে দেখা গেছে, মাথাপিছু জাতীয় আয় এক ডলার কমেছে। মাথাপিছু জাতীয় আয় এক হাজার ৭৫১ ডলার। এক ডলার কমার কারণ হিসেবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, টাকার বিপরীতে ডলার শক্তিশালী হওয়ায় মাথাপিছু জাতীয় আয় কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে জাতীয় আয় কমেনি। বরং বেড়েছে।
বিবিএসের তথ্য বলছে, দেশে এখন দারিদ্র্যের হার ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। সে হিসেবে তিন কোটি ৪৮ লাখ মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। এছাড়া ১১ দশমিক ৩ শতাংশ এখনো অতি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। সে হিসেবে এই সংখ্যা এক কোটি ৮ লাখ মানুষ অতি দরিদ্র। এক বছর আগে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৩ দশমিক ১ শতাংশ। আর অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ১২ দশমিক ১ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ডলারের হিসেবে দেশে গত অর্থবছরের জিডিপির আকার ২৭৪ বিলিয়ন ডলার। গত বছর জিডিপির অনুপাতে বিনিয়োগ হয়েছে ৩১ দশমিক ২৩ শতাংশ। এরমধ্যে সরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২৩ দশমিক ২৬ শতাংশ হয়েছে। তবে জিডিপির অনুপাতে জাতীয় সঞ্চয়ের হার কমে ২৭ দশমিক ৪২ শতাংশে নেমে এসেছে। আগের বছর যা ছিল ২৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ। মন্ত্রী বলেন, দেশে যখন ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ হয় না, তখন সরকারকে চালকের আসনে বসতে হয়। আমাদের অবস্থা এখন সেরকম হয়েছে। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ হচ্ছে না দেশে। তাই সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন