শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

প্রমোদ ভ্রমণে বিআইডব্লিউটিসি’র যাত্রীবাহী নৌযান : সাধারণের দুর্ভোগ

প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠান-বিআইডব্লিউটিসি যাত্রী পরিবহন থেকে জনগুরুত্বপূর্ণ নৌযানসমুহ প্রত্যাহার করে প্রমোদ ভ্রমণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগকে ক্রমশ বাড়িয়ে তুলছে। এমনকি এসব যাত্রীবাহী নৌযান নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ভাড়া নিলেও মূলত তার চেয়ে অনেক বেশি সময় প্রমোদ ভ্রমণে খাটানো হচ্ছে। ফলে সংস্থাটির লাভের পরিবর্তে লোকশানের পরিমাণ আরো বাড়ছে। অপরদিকে প্রমোদ ভ্রমণে ভাড়া দিতে গিয়েই দেশের একমাত্র অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিসটি এখন ঢাকা থেকে প্রতি শুক্রবার ও বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে রোববারে বন্ধ রাখা হচ্ছে। উপরন্তু, প্রমোদ ভ্রমণের স্বার্থেই সংস্থাটির ঢাকা-চাঁদপুরÑবরিশাল ÑঝালকাঠীÑপিরোজপুর হয়ে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ পর্যন্ত রকেট স্টিমার সার্ভিসটিতে ব্যয় সাশ্রয়ী প্যাডেল জাহাজের পরিবর্তে অধিক ব্যয়বহুল ‘স্বেতহস্তী এমভি মধুমতি’ জাহাজটি সপ্তাহে দু’দিন করে চালান হচ্ছে। অথচ এ নৌযানটিতে জ্বালানি ব্যয় প্যাডেল জাহাজগুলোর দ্বিগুণেরও বেশি। যাত্রী সুবিধাও কম। ফলে তা যাত্রীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও পায়নি। এসব বিষয়ে গত কয়েকদিন ধরে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহীসহ বাণিজ্য পরিদফতরের জিএম-এর সাথে আলাপের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।
বিআইডব্লিউটিসি’র রকেট স্টিমার সার্ভিসের জন্য ৪টি প্যাডেল জাহাজের মধ্যে দীর্ঘ কালক্ষেপনের পরে ‘পিএস লেপচা’ জাহাজটি বাড়ি মেরামতে নেওয়া হয়েছে মাস দুয়েক আগে। দীর্ঘদিন নৌযানটির ডকিং ও সার্ভেসহ এর তলা ও উপরিকাঠামোর কোনো মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। এমনকি নৌযানটির যান্ত্রিক ত্রুটির পরে মেরামতে ডকইয়ার্ডে নেওয়ার পরে এর তলার ৪টি প্লেট পরিবর্তনের লক্ষে কাজ শুরু করে ইতোমধ্যে ৪০টি প্লেট পরিবর্তন করতে হয়েছে। এত ঝুঁকি নিয়ে নৌযানটির বাণিজ্যিক পরিচালন-এর কারণ সম্পর্কে এখন আর কেউ কিছু বলতে নারাজ।
অপর প্যাডেল জাহাজ পিএস মাহসুদ, পিএস অষ্ট্রিচ ও পিএস টার্ন জাহাজগুলোও চলছে কমবেশি ঝুঁকি নিয়ে। কিন্তু এর পরেও এ তিনটি নৌযান দিয়ে সপ্তাহে ৬ দিন রকেট স্টিমার সার্ভিসটি পরিচালনা সম্ভব হলেও দ্বিগুণ জ্বালানি ব্যয়ের এমভি মধুমতি সপ্তাহে দু’দিন চালিয়ে সংস্থাটির যাত্রীবাহী সেক্টরে লোকশানের বোঝা বাড়ি করার কারণ সম্পর্কে কেউ কিছু বলতে নারাজ। উপরন্তু, ঢাকা থেকে শুক্রবারে সার্ভিসটি বন্ধ রাখা হচ্ছে। অথচ রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো নৌ-পথেই বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার সর্বাধিক যাত্রী পরিবহন করছে বেসরকারি নৌযানগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৯ ডিসেম্বর ঢাকাস্থ হাইমচর সমিতি, ২৩ ডিসেম্বর সাবেক নৌ-পরিবহন সচিব শফিকুর আলম মেহেদীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, ১৬ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ ব্যচের লোক প্রশাসন বিভাগ এবং ২৩ জানুয়ারি পিজিসিবি’র শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নকে নৌ-ভ্রমণের জন্য সংস্থাটির একটি করে প্যাডেল জাহাজ রেয়াতী দরে ভাড়া দেওয়া হয়। কিন্তু রেয়াতী দরে ভাড়া দেওয়া হলেও প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় এসব নৌযান প্রমোদ ভ্রমণে চলমান ছিল। ফলে অতিরিক্ত জ্বালানি পুড়লেও সংস্থাটির কোষাগাড়ে বাড়তি সময়ের অর্থ জমা হয়নি। এমনকি এসব প্রমোদ ভ্রমণেই সংস্থাটির নির্ভরযোগ্য ও যাত্রীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নৌযান ‘পিএস অষ্ট্রিচ’কে ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও পিএস টার্ন জাহাজটিও একদিন প্রমোদ ভ্রমণে ভাড়া দেওয়া হয়েছে ইতোমধ্যে।
কিন্তু এসব নৌযান যাত্রী পরিবহন-এর পরিবর্তে প্রমোদ ভ্রমণের যৌক্তিকতা সম্পর্কে কেউ কিছু বলছেন না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন