শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রানা প্লাজা ট্যাজেডির তিন বছর বিক্ষোভ ও দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে নিহতদের স্মরণ

প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে ; ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ভবন ধসের তৃতীয় বছর পূর্তি হলো। ২০১৩ সালের এই দিনে সাভারে বাজার বাসস্ট্যান্ডে নয়তলাবিশিষ্ট রানা প্লাজা ধসে পড়ে নিহত হয় ১১৩৬ জন তৈরি পোশাক শ্রমিক। আহত হয় আরও অন্তত ২ হাজার ৪৩৮ জন শ্রমিক।
দিনটিকে স্মরণ করতে রোববার সকাল থেকেই ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে জড়ো হতে থাকে আহত শ্রমিক, নিহত ও নিখোঁজের স্বজনেরা। তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচী পালন করেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলো। সকালে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি কালো ব্যাজ ধারণ করে ঢাকা আরিচা-মহাসড়কে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় নিহত ও আহত শ্রমিকদের স্বজনরা রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পরে শ্রমিকরা রানা প্লাজার সামনে মালিক সোহেল রানার ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসুচী পালন করে। এসময় রানা প্লাজার নিহত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরা অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ভবন ধসের ৩ বছর পার হলেও এখনও অনেক নিহত শ্রমিকদের স্বজন ও আহত শ্রমিকরা পায়নি প্রয়োজনীয় আর্থিক ক্ষতিপূরণ। ফলে অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিতে না পারায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি অনেক আহত শ্রমিক।
আজও নিহত অনেক শ্রমিকের লাশের খোঁজ পায়নি স্বজনেরা। মেলেনি নিহত-নিখোঁজের সঠিক সংখ্যা।
অন্যদিকে রানা প্লাজা ধসের তিন বছর পূর্তিতে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে এবং শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এসময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান।
এর আগে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্থদের স্মরনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান জেলা প্রশাসন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম মোল্লাসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন কিছু দিনের মধ্যে রানা প্লাজার স্থলে একটি স্থায়ী শহীদ বেদী নির্মানের আশ্বাস দিয়েছেন।
এছাড়া নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার রানা প্লাজার সামনে নির্মিত শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় রানা প্লাজা স্মরনে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর। আলোকচিত্রী তাসলিমা আখ্তার, আবীর আব্দুল্লাহ, শুভ্রকান্তি দাস ও রাহুল তালুকদারের রানা প্লাজার ঘটনার দিন থেকে তোলা বেশ কিছু ছবি প্রদর্শিত হয়। এসময় বিভিন্ন যায়গা থেকে আগত আহত, নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকের স্বজনসহ দর্শনার্থীরা ভির জমায় প্রদর্শনীতে। এসময় প্রিয় স্বজনের ছবি ও স্মৃতি তুলে ধরে অঝোরে কেদেছেন অনেকেই।
এছাড়াও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, বাংলাদেশ এন্ট্রি ফায়ার এন্ড ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্ট ফাউন্ডেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, রেডিমেট গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে ২৪ এপ্রিল শোক ও শ্রমিক নিরাপত্তা দিবস পালনে কালো ব্যাজ ধারণ করে দোষীদের শাস্তি প্রদানসহ আহত, নিহত ও নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবী করেন।
বিশ^ কাপানো রানা প্লাজা ধ্বসের দুর্ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি শহীদ বেদি নির্মানসহ নিহতদের সারাজীবনের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টিও বিবেচনার দাবী জানিয়েছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন।
অন্যদিকে রানা প্লাজা ধ্বসের তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে ছুটি ঘোষণা না করায় সাভার পাকিজা ডাইং, জিহান নিট কম্পোজিট লিমিটেড, হাই পয়েন্ট, আজিম গ্রুপ, ভিশন গার্মেন্টসসহ অন্তত ১০টি পোশাক কারখানায় ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।
এ সময় মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন শ্রমিক আহত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন