স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেছেন, ঢাকায় মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য আগামী দুই বছরে পর্যায়ক্রমে তিন হাজার বাস নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএনসিসি। এছাড়া ঢাকা শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য পাঁচ হাজার ডাস্টবিন, নিরাপত্তার জন্য আরো সিসি ক্যামেরা স্থাপন, শহরের পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য পরিবেশ পুলিশ গঠনের কথাও ভাবছেন তিনি।
গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে মেয়রের দায়িত্ব নেয়ার আট মাস উপলক্ষে টেলিভিশন প্রধান নির্বাহী কর্মকতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।
আনিসুল হক বলেন, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম’র আওতায় আগামী ২০১৭ সালের মার্চের মধ্যে ঢাকায় তিন হাজার পাবলিক বাস নামাতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গণপরিবহন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে রাজধানীর দেড় কোটি মানুষ। বাস মালিকদের একটি চক্র নতুন গাড়ি নামাতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। রাজধানীর অর্ধেক এলাকার মেয়র আনিসুল বলেন, এ জায়গায় হাজার কোটি টাকার সিন্ডিকেট কাজ করে, গত ৬ মাস ধরে মালিক কর্তৃপক্ষ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সবাইকে নিয়ে বসা হয়েছে।
ঢাকায় ১৯০টি বাস কোম্পানিকে পাঁচটি কোম্পানিতে আনতে রাজি করানোর প্রাথমিক কাজটি হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, পাঁচটি কোম্পানি হলে রাস্তার মারামারি কমে যাবে, আধুনিক টিকেটিং ব্যবস্থা হবে।
আবারও বলি, হাজার কোটি টাকার সিন্ডিকেট, মালিকদের রাজি করানো হয়েছে ফিন্যান্স ও কারিগরি সহয়তা এবং ৪.৫% সুদের ব্যবস্থা করার আশ্বাসে। ২০১৭ সালের মার্চের মধ্যে তিন হাজার বাস নামাতে পারলে পরিবহন ব্যবসায়ীরা পুরনো বাস ও মিনিবাস তুলে নেবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন।
দায়িত্ব নেয়ার আট মাসে ঢাকা শহরকে যানজটমুক্ত এবং ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত করতে নানা ধরনের কর্মসূচিও তুলে ধরেন আনিসুল হক।
গাবতলী, আমিনবাজার, মিরপুর ১২, মোহাম্মদপুরসহ ঢাকার ১০টি স্থানে রাস্তা-ফুটপাত থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এর পেছনে যে হাজার কোটি টাকার সিন্ডিকেট ছিল, তা বন্ধ করা গেছে। যাদের বড় ব্যবসা নষ্ট হয়ে গেছে, তারা ফিরে আসতে চেষ্টা করবে। এটা যেন আর বসতে না পারে সেজন্য সহযোগিতা চাচ্ছি।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি বাজারটি স্থানান্তরের চেষ্টায়ও ফল আসছে বলে জানান আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা কারওয়ান বাজার তিন স্থানে শিফট হোক। এক ধরনের বরফ গলতে শুরু করেছে, কেউ কেউ রাজি কেউ কেউ রাজি নয়। আমি হতাশ নই, সবাই আপ্রাণ চেষ্টা করছি।
সভার শুরুতে মেয়র জানান, বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযানে ২০ হাজার ছোট-বড় বিলবোর্ড নামানো হয়েছে, যারা এখনও নামায়নি তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে।
আগামী অগাস্টের মধ্যে দুই হাজার ডাস্টবিন, ১০০টি পাবলিক টয়লেট স্থাপন ও মোবাইল টয়লেট চালুর পরিকল্পনাও জানান তিনি।
আগামী তিন মাসের মধ্যে দেওয়াল লিখন বন্ধ করার কথাও বলেছেন মেয়র।
সভায় চ্যানেল আইয়ের বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ নিরাপদ গণপরিবহনের নিশ্চিয়তা, রাতে পুলিশি হয়রানি বন্ধের উদ্যোগ, পানিবদ্ধতা এবং গ্যাস সংকট সমাধানে উদ্যোগ নিতে মেয়রের প্রতি আহ্বান জানান।
সময় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহমেদ জুবায়ের বছর ধরে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধের আহ্বান জানান।
মেয়র এসব বিষয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে সমন্বয় করে কাজ করার আশ্বাস দেন।
তিনি সরকারের কাছে পরিবেশ পুলিশ চান। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে পরিবেশ রক্ষায় মেয়রের কর্তৃত্বে একশ থেকে দেড়শ পুলিশ চেয়েছেন আনিসুল হক।
তিনি বলেন, ১০০ থেকে ১৫০ ইনভায়রনমেন্ট পুলিশ দিলে ভালো হয়, তারা মেয়রের কন্ট্রোলে থাকবে, তাহলে তাদের জবাবদিহিতা থাকবে। এখানে আমি পুলিশের সঙ্গে কোনো দ্বৈততা চাই না, এ বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।
ঢাকা উত্তরের ২৫ শতাংশ বাড়ির ছাদে বাগান করার পরিকল্পনা জানিয়ে সার ও মাটি সরবরাহে তিনটি ইকো-বাস চালুর পরিকল্পনা জানান মেয়র।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ বছরের শেষ নাগাদ পুরো নগরীকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে পুলিশের সঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
মেয়র টিভি কর্মকর্তাদের কাছে জনসচেতনতার জন্য এক মিনিট সময় চান। ঢাকা নগরীকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান পরিবেশনের জন্য টেলিভিশনগুলোকে প্রতিদিন ৩০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিট সময় বরাদ্দ চেয়েছেন এক সময়ের টিভি উপস্থাপক আনিসুল হক।
মতবিনিময় সভায় টেলিভিশনগুলোর প্রতি মেয়র এই অনুরোধ রাখলে এটিএন নিউজের বার্তা প্রধান মুন্নী শাহা বলেন, এ প্রচারণার জন্য কোনো বাজেট থাকবে কি না?
জবাবে আনিসুল হক বলেন, কোনো বাজেট থাকবে না, এ বিষয়ে সহযোগিতা চাচ্ছি। মুন্নি শাহা ঢাকা শহরে আরও সিনেমা হলসহ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান করার অনুরোধ করেন মেয়রের কাছে।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, একুশে টিভির সিইও মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, চ্যানেল আই পরিচালক ও হেড অব নিউজ শাইখ সিরাজ, সময় টিভির এমডি ও সিইও আহমেদ জুবায়ের, মাছরাঙ্গা টিভির সিইও সৈয়দ ফাহিম মনোয়ার, ইনডিপেনডেন্ট টিভির সিইও শামসুর রহমান, বাংলাভিশনের ডেপুটি ম্যানিজিং ডিরেক্টর ইশতিয়াক হোসাইন, মোহনা টিভির এমডি জিয়াউদ্দিন আহমেদ, এটিএননিউজ’র সিইও সরকার ফিরোজ, হেড অব নিউজ মুন্নী সাহা, আরটিভির সিইও সৈয়দ আশিক রহমান, এনটিভির হেড অব নিউজ খায়রুল আনোয়ার, একাত্তর টিভির এডিটর ও সিইও সামিয়া জামান, বিটিভির পরিচালক এস এম হারুন অর রশীদ, এটিএন বাংলার সিইই জ. ই. মামুন প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন