ফিরোজ আহমাদ
খোদাভীরুতা একটি নূর। বান্দা যখন অদৃশ্য স্রষ্টার দৃশ্যমান উপস্থিতি সর্বত্র অনুভব করেন তখন মানুষ খোদাভীরু হয়। আমি আল্লাহকে দেখি না। আল্লাহ আমার ভালোমন্দ কাজগুলো দেখেন। এই ভাবনাগুলো অন্তরে দৃঢ়ভাবে পোষণের মাধ্যমে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকাই হলো খোদাভীরুতা। খোদাভীরু ব্যক্তিই পরহেজগার মুত্তাকি। এবং জান্নাতের পথিক। খোদাভীরু ব্যক্তিকে সহযোগিতার পুরস্কার হলো জান্নাত। জুলুমবাজ অত্যাচারী ব্যক্তিকে মন্দ কাজে সহযোগিতার পুরস্কার হলো জাহান্নাম। যারা আল্লাহকে ভয় করবে এবং খোদাভীরুদের সহযোগিতা করবেন তাদের দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ অনেক নেয়ামত দান করবেন। খোদাভীরুতার কাজে সহযোগিতার জন্য আল্লাহ তাঁর কালামুল্লাহ শরীফে বান্দাদের নির্দেশ করেছেন। সূরা মায়েদার ২নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, তোমরা কল্যাণমূলক ও খোদাভীরুতার কাজে পরষ্পর সহযোগী হও, মন্দ ও সীমা লঙ্ঘনের কাজে পরষ্পর সহযোগী করো না। আল্লাহ তাঁর বান্দাকে মন্দ পথে যেতে ও মন্দ কাজে সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন। সূরা নিসার ৮৫ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে, কেহ কোন ভাল কাজের সুপারিশ করলে উহাতে তাহার অংশ থাকিবে এবং কেহ কোন মন্দ কাজের সুপারিশ করলে উহাতে তাহার অংশ থাকবে। যারা আল্লাহর বিধানকে অস্বীকার করে অশ্লীল পাপ কাজ, মদ গাঁজা, হিরোইন, খুন, ধর্ষণের কাজে পরষ্পর সহযোগিতা করে এবং এতিমের সম্পদ ভোগ দখল, নিরীহ মানুষের বসত ভিটা দখল, অফিস আদালতে ঘুষ বাণিজ্যে সহযোগিতা করে। আল্লাহ তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন প্রস্তুত রেখেছেন। আল্লাহ তাঁর বান্দাকে সৎ কাজে দ্বীনের কাজে পরষ্পরের ঐক্য মজবুত রাখার নির্দেশ করেছেন। সূরা আল ইমরানের ১০১-১০২ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে যথাযথ ভয় কর আর মুসলমান হওয়া ব্যতীত কখনো মৃত্যুবরণ করো না। আর তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধর এবং পরষ্পর বিছিন্ন হয়ো না।
মুসলমানের কাজ হলো অন্য মুসলমানকে দ্বীন ও কল্যাণের পথে সাহায্য সহযোগিতা করা। যারা মানুষকে হেদায়াতের পথে আহ্বান করে তাদের সহযোগী হওয়া। দ্বীনের আলোচনা মিলাদ মাহফিল ও সমাজসেবা মূলক কাজে আর্থিক শারীরিক মানসিকভাবে খেদমত করা। শীতার্তদের শীত বস্ত্র দেয়া, বন্যার্তদের সাহায্য দেয়া, মসজিদ মাদরাসা খানকায় সহযোগিতা করা ঈমানদারের অন্যতম কাজ। যে আল্লাহকে ভয় করে তাকে অনুসরণ করে ঈমানী জিন্দেগি কাটানো এবং যে ভোগ বিলাস বেহায়াপনা বেল্লেপনা অশ্লীল মন্দ কাজে সম্পৃক্তদের সঙ্গ ত্যাগ করা মুসলমানের নিত্যদিনের দায়িত্ব। সূরা আল ইমরানের ১০৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, তোমাদের মধ্যে থেকে একটি দল থাকা উচিত যারা আহ্বান জানাবে সৎকর্মের প্রতি নির্দেশ দিবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম। দ্বীনের পথে রাসূল (সা.)-এর আহ্বানকে সাহাবারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করেছেন। হযরত রাসূল (সা.) দ্বীনের পথে সকলের নিকট আর্থিক সহযোগিতার আহ্বান জানানোর ফলে হযরত আবু বকর (রা.) তাঁর গৃহের সমস্ত মালামাল হযরত রাসূল (সা.)-এর নিকট নিয়ে হাজির করেছিলেন। হযরত ওমর (রা.) তাঁর সম্পদের অর্ধেক নিয়ে এসেছিলেন। হযরত উসমান (রা.) তাঁর নিকট থাকা ১০০০ স্বর্ণ মুদ্রা দিয়ে দিয়েছিলেন। একজন সাহাবা অন্য একজন সাহাবাকে দ্বীনের পথে যেভাবে সহযোগিতা করেছেন। মানব ধর্মের ইতিহাসে রাসূল (সা.)-এর সাহাবাদের খেদমত ও আনুগত্যতার বিরল ঘটনা। রাসূল (সা.)কে যখন কাফেররা মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল। রাতের অন্ধকারে হযরত আলী (রা.)কে নিজ ঘরে শুইয়ে হযরত রাসূল (সা.) মদিনার পথে হিজরতের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে ছিলেন। হযরত আলী (রা.) জানতেন তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত। তারপর হযরত আলী (রা.) আমি পারব না কিম্বা আমার ভয় হচ্ছে এ জাতীয় একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। হযরত রাসূল (সা.)-এর প্রতি দ্বীনের পথে আলী (রা.) ত্যাগের ঘটনা অন্য কোন ধর্মের অনুসারীদের ইতিহাসে পাওয়া যায় না। সাহাবারা ছিলেন প্রকৃত খোদাভীরু। দ্বীনের খেদমতে রাসূল (সা.) যখন যা আদেশ করেছেন। সাহাবারা না শব্দ উচ্চারণ করেননি।
মক্কায় যখন কাফেরদের অত্যাচার নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেল। তখন নবীজি হিজরতের সিদ্ধান্ত নিলেন। নবীজি (সা.) আবুবকরকে ডেকে বললেন, তোমাকে আমার সাথে মদিনায় হিজরত করতে হবে। নবীজি এ কথা বলার পর ইতিমধ্যে ৪ মাস অতিবাহিত হয়ে গেল। হঠাৎ একদিন রাতে আবুবকরের দরজায় নবীজি উপস্থিত হয়ে কড়া নাড়লেন। প্রথম ডাকের সাথে সাথে আবুবকর সাড়া দিলেন। নবীজি আর্শ্চায্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আবুবকর! তুমি এখনো ঘুমাওনি? এতো রাতে জেগে আছো? আবু ববকর বললেন, হুজুর আপনি যে দিন হিজরতের কথা বলেছেন, সেদিন থেকে আমি আর বিছানায় গা লাগাইনি। আমি রোজ দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করি। যদি রাসূল (সা.) আমার ঘরের দরজায় এসে আমাকে না পেয়ে ফিরে যায়।
তিরমিজি শরীফে হযরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা.)-এর নিকট এরূপ এক ব্যক্তির আলোচনা হলো, যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকে কিন্তু গুনাহ হতে বেঁচে থাকার প্রতি মনোযোগ দেয় না। আর এমন একব্যক্তির আলোচনা হলো, যে তুলনামূলক ইবাদত কম করে কিন্তু সে খোদাভীরুতায় অধিক অগ্রগামী। তখন রাসূল (সা.) বলেন, ইবাদত করা খোদাভীরুতার সমান হতে পারে না। দ্বীনের পথে সাহাবারা যেভাবে হযরত রাসূল (সা.) কে সহযোগিতা করেছেন। আমাদেরকে ও খোদাভীরুদের সহযোগিতা করতে হবে। যারা রাসূল (সা.) এর সুন্নত পালন করবে তাদের সহযোগিতা করতে হবে। তাহলে হযরত রাসূল (সা.) এর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা হবে।
লেখক : ধর্ম ও সুফিবাদ গবেষক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন