মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিচারকদের অপসারণ আইনের খসড়া অনুমোদন

প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪২ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইন, ২০১৬-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম একথা জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই আইনটি বিচারপতিদের অসদাচরণের তদন্তের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। এক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগের বিচারপতিরাও অন্তর্ভুক্ত। বিচারকদের জন্য কিছু কোড অব কন্ডাক্ট তৈরি করা আছে। কোড অব কন্ডাক্টের ব্যত্যয় হলেই মনে করা হবে বিচারপতি অসদাচরণ করেছেন। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গৃহীত ষোড়শ সংশোধনী অনুযায়ী সংবিধানের ৯৬ (৩) ধারায় সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী আইন ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ খসড়া আইনটি উপস্থাপন করেছে। সংশোধনীতে ৯৬ ধারার ২, ৩ ও ৪ উপধারার পরিবর্তে উপধারা ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ ও ৮ সংশোধন করে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী এই আইনটি প্রণয়ন করা হচ্ছে। সারা বিশ্বের অন্যান্য সকল গণতান্ত্রিক দেশের মতোই সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ সংক্রান্ত আইনগত প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের মূল আইনে ফিরে যাওয়ার লক্ষ্যে খসড়া আইনটি অনুমোদন করা হয়েছে। ১৯৭২ সালের সংবিধানে অনুরূপ একটি আইন ছিল এবং সুপ্রিম জুডিশিয়িাল কাউন্সিল গঠনের বিধি যুক্ত করার মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের পর তা পরিবর্তন করা হয়েছিল। তিনি আরো বলেন, একমাত্র পাকিস্তান ছাড়া কোনো দেশেই এখন এই ধরনের কাউন্সিল নেই।
সচিব বলেন, অপসারণের প্রক্রিয়া বিস্তারিত বলা আছে এই আইনে। কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে অসদাচরণের জন্য অভিযোগ আনতে চাইলে জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে তা জমা দিতে হবে। সেখানে সংশ্লিষ্ট বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিস্তারিত লিখতে হবে। অভিযোগকারী নিজ হাতে এফিডেভিট দেবেন যে, অভিযোগকারীর জ্ঞান ও বিশ্বাস মতে, অভিযোগটি সত্য। অভিযোগকারীকে জমা করা অভিযোগের উৎসও উল্লেখ করতে হবে। ১০ জন সংসদ নিয়ে স্পিকার একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে অভিযোগের সত্যতা নিরূপণ করবেন। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে স্পিকার বিষয়টি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির কাছে পাঠাবেন। তদন্ত গোপনে করতে হবে। প্রাথমিক তদন্ত শেষ করতে হবে ১০ দিনের মধ্যে। কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন সাবেক একজন প্রধান বিচারপতি বা আপিল বিভাগের একজন সাবেক বিচারপতি। এছাড়া ওই কমিটিতে সাবেক একজন অ্যাটর্নি জেনারেল এবং একজন সম্ভ্রান্ত নাগরিককে রাখার কথা বলা হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেলের ক্ষেত্রে বয়স ৬৭ বছরের কম হলেও চলবে। তবে অন্যান্যেদের ক্ষেত্রে ৬৭ বছরের বেশি হতে হবে।
অভিযোগটির প্রাথমিক সত্যতা নেই বলে প্রতীয়মান হলে স্পিকারকে তা জানাতে হবে এবং তা ক্লোজ করে দেওয়া দেবে। আর তা প্রাথমিকভাবে সত্য মনে হলে একটি প্রতিবেদন স্পিকারের কাছে দেবে কমিটি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অভিযোগটি নিয়ে জাতীয় সংসদে গোপন বৈঠক হবে। বৈঠকে অধিকাংশ সদস্যের ভোটে (দুই-তৃতীয়াংশ) প্রস্তাবিত অভিযোগের তদন্ত করার প্রয়োজন মনে করলে তখন তার জন্যও একটি আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটিতে জাতীয় সংসদ সদস্য থাকবেন না।
তদন্ত-প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত ফলাফল জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করতে হবে। এরপর সংবিধানের ৯৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচারককে অপসারণ-সংক্রান্ত প্রস্তাব জাতীয় সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় গ্রহণ করতে হবে। এরপর প্রেসিডেন্ট ওই বিচারককে অপসারণ করবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, অভিযোগ গঠন করার আগে ১০ দিনের মধ্যে বিচারপতিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে। বিচারপতি শারীরিক বা মানসিক অসমর্থ হলে ভিন্নতর তদন্ত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে তা তদন্ত হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধান বিচারপতি এই আইনের উপর মতামত দেননি, তবে সেই সুযোগ আছে। তিনি আইনটি ভারসাম্যপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন, জাতীয় সংসদ করলে জনস্বার্থে যেকোনো আইন করতে পারে।
জাতীয় গৃহায়ণ নীতিমালা অনুমোদন : মন্ত্রিসভায় জাতীয় গৃহায়ণ নীতিমালা-২০১৬ এর খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য আবাসন সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে ‘জাতীয় গৃহায়ণ নীতি ২০১৬’র খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
তিনি বলেন, এই নীতিতে যথাযথ গৃহায়ণ ও টেকসই মানববসতি উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও রীতিনীতি বিবেচনা করা, বন ও প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণের বিধান রেখে পরিবেশ সুরক্ষার উপর গুরুত্বারোপ, বিভিন্ন গৃহায়ণ প্রকল্প প্রণয়নকালে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা, প্রাকৃতিক জলধার সুরক্ষা, ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ডিএপি) সম্পর্কে আলোচনা, বৃষ্টি পানি সংরক্ষণ এবং পরিবেশগত বিষয়গুলো মোকাবিলাসহ বিভিন্ন ইস্যু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এছাড়া খসড়ায় মধ্যবিত্ত ও নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য শহর ও গ্রামে খাস ও অব্যবহৃত জমি নিয়ে ভূমি ব্যাংক ও গৃহায়ণ ঋণ তহবিল গঠনের প্রস্তাব রয়েছে। এতে ভবনের মান ও নিরাপত্তায় জাতীয় বিল্ডিং কোড নিশ্চিত করার প্রস্তাব রয়েছে।
সচিব বলেন, ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে জাতিসংঘ পরিবেশ বিষয়ক সম্মেলনে এনিয়ে দাবি উত্থাপিত হলে সরকার ১৯৯৩ সালে প্রথম এই নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ১৯৯৯ সালে তা হালনাগাদ করা হয়। এবার এটি বিস্তারিতভাবে প্রণীত হয়েছে।
তিনি বলেন, মন্ত্রিসভা একটি স্বাধীন কমিটির মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের কন্টেইনার পরিবহন সার্ভিস পরিচালনার জন্য কন্টেইনার কমিটি অব বাংলাদেশ গঠনের অনুমোদন দিয়েছে।
এর আগে মন্ত্রিসভায় জাতিসংঘ পানি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের প্যানেলের একজন সদস্য মনোনীত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সর্বসম্মত এক প্রস্তাব নেওয়া হয়।
জাতিসংঘ মহাসচিব এবং বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট ২১ এপ্রিল এই প্যানেলের সদস্য হিসেবে শেখ হাসিনার নাম ঘোষণা করেন। ১০ জন রাষ্ট্র প্রধান বা সরকার প্রধান ও ২ জন উপদেষ্টার সমন্বয়ে এই প্যানেল পরবর্তী ২ বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
শিমুল ২৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১:৩৯ পিএম says : 0
আরো যে কত আইন হবে ????????
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন