রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অভ্যন্তরীন যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিসের করুণ হাল

প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : বিঅইডব্লিউটিসি’র যাত্রীবাহী স্টিমারগুলোর ঝুকিপূর্ণ পরিচালনসহ এর যাত্রী সেবার মান সর্বকালের নি¤œপর্যায়ে পৌঁছায় এসব নৌযানে ভ্রমণকারী সাধারণ যাত্রীদের জীবন যেমনি ঝুকিপূর্ণ, তেমনি সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটিতে ভ্রমণে সাধারণের অনিহাও ক্রমশ বাড়ছে। অতি সম্প্রতি বেসরকারি নৌযান ধর্মঘটের মধ্যেও সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির নৌযানে ভ্রমণে যাত্রীদের চরম অনাগ্রহ তার প্রমাণ বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহাল মহল। এমনকি আসন্ন রমজান ও ঈদ-উল-ফিতরের আগে-পরে যাত্রী পরিবহনে সংস্থাটির ৪টি প্যডেল জাহাজের তিনটিই এখন প্রস্তুত নয় বলে মনে করছেন মহলটি। প্রায় সব প্যডেল জাহাজেরই সার্ভে মেয়াদ পর্যন্ত শেষ হয়ে গেছে। ৪টি জাহাজের তিনটিই বিগত দীর্ঘদিনেও ডকিং ও মেরামত হয়নি। ফলে এর তলার অবস্থা খুব ভাল নয়। ১৯৯৫-৯৬সালে দ্বিতীয় দফায় পূণর্বাসনের পরে ৩টি প্যডেল জাহাজের কোনটিরই মূল ইঞ্জিন মেজর ওভারহলিং হয়নি। ২০০২সালে ‘পিএস টার্ন’ জাহাজটিতে নতুন ইঞ্জিন সংজোযনের পরে সেটিরও কোন ওভারহলিং হয়নি। এমনকি ‘পিএস মাহসুদ’ জাহাজটি গত ৪মাসে ছয়বার দুর্ঘটনার কবলে পরলেও এর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে ঐ জাহাটিতে ভ্রমণে যাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এমনকি রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠানটির একমাত্র অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিসটির জন্য নৌযান সংকট না থাকলেও তার বেশীরভাগই চলছে সম্পূর্ণ জোড়াতালী দিয়ে। সংস্থাটির বাণিজ্য ও কারিগরি পরিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহলের সীমাহীন উদাশীনতায় এসব নৌযানে যাত্রী সেবার মান বলতে এখন তেমন কিছু না থাকলেও তা ‘কতিপয় দূর্ণীতিবাজ কর্মকতাদের আখের গোছাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে’ বলে অভিযোগ রয়েছে। ঢাকাÑচাঁদপুরÑবরিশালÑঝালকাঠীÑপিরোজপুর হয়ে বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জ পর্যন্ত চলাচলকারী রকেটি স্টিমার সার্ভিসে যে ৪টি প্যডেল জাহাজ রয়েছে, তা বিশ্বঐতিহ্যের ধারক হলেও সেসব নৌযান নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষনে উদাশীন কতৃপক্ষ। ‘পিএস অস্ট্রিচ,পিএস মাহসুদ, পিএস টার্ন ও পিএস লেপচা’ জাহাজ ৪টির মধ্যে দীর্ঘ কালক্ষেপণের পরে সম্প্রতি শেষেরটির ডকিং ও আংশিক মেরামত করা হয়েছে। এমনকি নৌযানটির বহিরাংশে পূর্ণাঙ্গ রং পর্যন্ত করা হয়নি। তবে ডকিং করে তলা মেরামত করতে গিয়ে বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে যান কতপক্ষ। ৪টি এমএস প্লেট পরিবর্তনের প্রাক্কলন নিয়ে মেরামত শুরু করার পরে নৌযনটিতে ৪০টি প্লেট পরিবর্তন করতে হয়। কতৃপক্ষের ভাষায় নৌযানটি মারাত্মক ঝুকি নিয়েই যাত্রী পরিবহন করছিল।
পিএস টার্ন জাহাজটির অবস্থাও যেমনি ঝুকিপূর্ণ, তেমনি করুন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। নৌযানটি অবিলম্বে ডকিং সহ মেরামতে বাণিজ্য পরিদপ্তর থেকে বলা হলেও সংস্থার ডকইয়ার্ডে বেশ কয়েকটি ফেরি মেরামতে থাকায় কারিগরি পরিদপ্তর টার্ন মেরামতে সুযোগ দিতে পারছে না বলে জানা গেছে। এমনকি অপর পিএস অস্ট্রিচ ও পিএস মাহসুদ-এর ডকিংসহ পূর্ণাঙ্গ মেরামত জরুরি হলেও সে লক্ষে কোন উদ্যোগ নেই। অথচ গত ৪ মাসে পিএস মাহসুদ জাহাজটি ৬বার দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে। ফলে এর উপরী কাঠামোসহ হাল ও খোল-এর যথেষ্ঠ ক্ষতি হলেও এর জন্য দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ দুরের কথা তাকে নৌযানটি থেকে অপসারণেরও কোন উদ্যোগে নেই। তবে ‘আরো কত বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে এসব অঘটনের জন্য দায়ী ব্যক্তিকে নৌযানটি থেকে প্রত্যাহার করা হবে’, এমন প্রশ্নের জবাবে সংস্থার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ‘বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন’ বলে জানিয়েছেন।
তবে বিআইডব্লিউটিসি’র কারিগরি পরিদপ্তরের দায়িত্বশীল একটি মহল বিশ্ব ঐতিহ্যের ধারক এসব প্যডেল জাহাজ বিক্রী করে দেয়ার কথাও জানিয়েছেন। অথচ নৌযানগুলোর প্রতিটিতেই অত্যন্ত ভালমানের মূল ইঞ্জিন রয়েছে। শুধুমাত্র এর হাল, খোল ও উপরীকাঠামোর মেরামত সহ প্যাডেলগুলোর পূণর্বাসনসহ মূল ইঞ্জিনসমুহ ওভারহলিং করলে প্রতিটি নৌযানই আরো অন্তত ২০বছর নির্বিঘেœ যাত্রী পরিবহন করতে পারবে বলে মনে করছেন কারিগরি বিশেষজ্ঞগন। তবে এসব জ্বালানী সাশ্রয়ী নৌযানের পরিবর্তে সংস্থার বাণিজ্য পরিদপ্তর প্রায় দ্বিগুণ পরিচালন ব্যয়ের ‘এমভি মধুমতি ও এমভি বাঙালী’ নৌযান দুটি চালাতে আগ্রহী বলেও জানা গেছে। যেখানে বেশী যাত্রী বহক্ষম প্যাডেল জাহাজগুলোতে প্রতি ঘন্টায় ডিজল পুড়ছে ১শ’ লিটারেরও কম, সেখানে গত দুবছরে নির্মিত ‘এমভি বাঙালী ও এমভি মধুমতি’ নৌযান দুটির জ্বালানী ব্যয় প্রায় ২শ’ লিটার। কিন্তু এসব নৌযান যাত্রী বান্ধব না হওয়ায় তাতে ভ্রমণেও অনিহা সাধারণ মানুষের। তার পরেও জ্বালানী সাশ্রয়ী প্যাডেল জাহাজের পরিবর্তে এদুটি নৌযানকেই অধিক দুরত্বের রকেট সার্ভিসে চালিয়ে সংস্থা তার যাত্রী সেবা ইউনিটের লোকশানের বোঝা ভাড়ী করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অথচ এমভি বাঙালী ও এমভি মধুমতি জাহাজ দুটি শুধুমাত্র ঢাকা-বরিশাল রুটের জন্য নির্মিত হয়। কিন্তু সে সার্ভিসটি বন্ধ করে দিয়ে অধিক দুরত্বের রকেট সার্ভিসে চালাতে গিয়ে প্রতি ট্রিপে প্রায় ৩ লাখ টাকা লোকশান গুণছে। অপরদিকে এমভি বাঙালী জাহাজটির যাত্রী সুবিধা সম্প্রসারণসহ নানা ত্রুটি বিচুতি দুর করতে দু’মাসের জন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানর কাছে দেয়া হলেও গত ছয় মাসেও সেব কাজ সম্পন্ন করে নৌযানটি সংস্থার বহরে ফেরেনি।
এদিকে সংস্থার রকেটি স্টিমার সার্ভিসের প্রতিটি জাহাজেই যাত্রী সেবার মান এখন সর্বকালের নি¤œ পর্যায়ে। এসব নৌযানরে ডেক শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণি পর্যন্ত যাত্রী ভাড়া যেমনি বেসরকারি নৌযানের তুলনায় বেশী, তেমনি সেবার মানও তলানীতে। এমনকি নৌযানগুলোর দ্বিতীয় শ্রেণির খাবার ঘরে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের জন্য পর্যাপ্ত ফ্যানসহ চেয়ার পর্যন্ত নেই। লোয়ার ডেক ও আপার ডেক-এ ফ্যানের স্বল্পতায় যাত্রীরা গরমে কষ্ট পাচ্ছেন। তৃতীয় শ্রেণির শৌচাগার থেকে খাবার ঘর পর্যন্ত সর্বত্রই যাত্রীদের দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ‘পিএস লেপচা’ ছাড়া অন্য সবগুলো প্যাডেল জাহাজের ছাদ চুইয়ে যাত্রীদের মাথায় পানি পড়ছে । প্রতিটি নৌযানেই ডেক থেকে প্রথম শ্রেণির খাবারের মান নিয়ে যথেষ্ঠ অভিযোগ যাত্রীদের। তবে এসব কোন অভিযোগই সংস্থাটির যাত্রী সেবা(?) ইউনিটসহ উর্ধ্বতন মহলে পৌঁছে না।
এসব বিষয়ে যাত্রী সেবা ইউনিট প্রধানের সাথে তার সেল ফোনে আলাপ করা হলে তিনি জানান, এমভি বাঙালী যাত্রী পরিবহনে ফিরলে পিএস টার্ন মেরামতে পাঠানো হবে। চলমান প্যাডেল জাহাজ সহ সবগুলো যাত্রীবাহী নৌযানে যাত্রী সেবার মান উন্নয়নে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন