শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত ওলামা লীগের ইতিহাস কতিপয় নেতা অস্বীকার করছেন

প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ওলামা লীগ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের এবং আওয়ামী ঘরানার কতিপয় নেতার অশালীন বক্তব্য প্রমাণ করে, তারা অতীত ইতিহাস অস্বীকার করছেন। রাজপথে নির্যাতিত ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করছেন না। তারা রাজপথে নির্যাতিত, ত্যাগী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মূল্যায়ন করেন না। এ ধরনের কিছু নেতা এবং কোনো কোনো মন্ত্রী-এমপি খোদ ছাত্রলীগ ও যুবলীগকেও সন্ত্রাসী বলে ঢালাও দোষারোপ করছেন। যে কারণে গত বছর ২৪ আগস্ট ছাত্রলীগ নেতারা বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগ মন্ত্রী-এমপিদের রক্তচক্ষুকে ভয় পায় না। ছাত্রলীগ ছাড়া আপনারা ঘর থেকে বের হতে পারবেন কি? আপনারা ভুলে যাবেন না এই ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ, এই ছাত্রলীগ শেখ হাসিনার ছাত্রলীগ। সুতরাং ছাত্রলীগকে নিয়ে দয়া করে কিছু বলতে গেলে বুঝে-শুনে বলবেন।’ এসব নেতা ও এমপি-মন্ত্রীদের প্রতি ওলামা লীগের বক্তব্যও অনুরূপ। কারণ ওলামা লীগ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। ওলামা লীগ বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ইসলামি ভাবধারার সংগঠন। ওলামা লীগ গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুর সে ঐতিহাসিক বক্তব্য Ñ ‘যে দেশের মানুষ জমি বিক্রি করে হজে যায়, সে দেশে ইসলামকে অবজ্ঞা করে রাজনীতি করা যায় না।’ শুধু বঙ্গবন্ধুই নন বর্তমান ক্ষমতাসীন জননেত্রীও একথা অন্তর থেকে বিশ্বাস করেন এবং দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে তা ঘোষণা দেন যে, এদেশে কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন হবে না এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও কটাক্ষ করলে বরদাশত করা হবে না। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও ইসলামি রাজনীতির পক্ষে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন। ওলামা লীগকে ব্যঙ্গ করলে বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকেও ব্যঙ্গ করা হয়। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ এবং নেতৃত্বেই বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী ওলামা লীগ দেশব্যাপী সুসংগঠিত।
গতকাল ুজাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন ওলামা লীগ নেতৃবৃন্দ। কেন্দ্রীয় আওয়ামী ওলামা লীগের প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেনÑপীরজাদা, পীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বর্ষীয়ান বিপ্লবী জননেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মাওলানা মুহম্মদ আখতার হুসাইন বুখারী, সভাপতিÑবাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ। আলহাজ কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী, সাধারণ সম্পাদকÑবাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ, আলহাজ হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাত্তার, সহ-সভাপতিÑবাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ, শায়েখ আলহাজ্জ মুফতি মাসুম বিল্লাহ নাফেয়ী, সহ-সভাপতিÑবাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ, আলহাজ লায়ন মাওলানা মুহম্মদ আবু বকর ছিদ্দীক্ব, সহ-সভাপতিÑবাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ, মাওলানা মুহম্মদ শওকত আলী শেখ ছিলিমপুরী, দপ্তর সম্পাদকÑবাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ, মাওলানা মুজিবুর রহমান চিশতি, সহ-সভাপতিÑবাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ। হাফেজ মাওলানা মোস্তফা চৌধুরী বাগেরহাটি সহ-সভাপতি- বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ, হাজী মুহম্মদ হাবীবুল্লাহ রূপগঞ্জী, আলহাজ্জ মাওলানা মুহম্মদ আতাউর রহমান বঙ্গ, ডা. মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সোবহান, মাওলানা মুহম্মদ তাজুল ইসলাম, মাওলানা মুহম্মদ মুজিবুর রহমান, মাওলানা মুহম্মদ সোলায়মান, ডা. মাওলানা ক্বারী মুহম্মদ লোকমান হুসাইন প্রমুখ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ওলামা লীগ কারো পকেটের সংগঠন নয় যে, কেউ ‘না’ বললেই ওলামা লীগ ‘না’ হয়ে গেল এবং বাটপাড় বললেই ওলামা লীগ বাটপাড় হয়ে গেলো। আজ যারা ওলামা লীগকে বাটপাড় সংগঠন বলছে, বিভ্রান্ত বলছে তাদের কেউ কেউ ওলামা লীগের সমাবেশে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি থেকে বক্তব্য দিয়েছেন। তখন ওলামা লীগের কাঁধে চড়ে তারা বক্তব্য দিয়েছেন। এমনকি ওলামা লীগের জন্যই রাজপথে রক্ষা পেয়েছেন। ওলামা লীগই বর্তমানের কোনো কোনো মন্ত্রী-এমপিকে বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় রাজপথে পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি করে পুলিশ কাছ থেকে ছুটিয়ে এনেছেন।
২০০১ সালে নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে যখন আওয়ামী লীগকে পরাজিত করানো হয়, তখন আওয়ামী ওলামা লীগ, ওলামা-আ’লীগ নেতৃবৃন্দ ও পীর-মাশায়েখগণ সুদাসদনে গিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সান্ত¦না দেন এবং বলেন, ‘আপা আপনি ধৈর্য ধারণ করুন, আপনার জয় সামনে আসছে, ইনশাআল্লাহ।’ তখন শেখ হাসিনা হুকুম দেন, ‘প্রত্যেক জেলায় জেলায়, থানায় থানায় ওলামা লীগের কমিটি গঠন করুন। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের আলেম সমাজকে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলুন।’
২০০২ সালে চারদলীয় জোট সরকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মারধর করে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কার্যালয় বন্ধ করে দেয়। তখন আওয়ামী লীগের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল জলীল এবং বর্তমান সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ওলামা লীগকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘হুজুর, আওয়ামী লীগ অফিস বর্তমানে কেবল আপনারাই চালু করতে পারবেন।’ তখন ওলামা লীগই রমনা মসজিদে নামায পড়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গিয়ে কুরআন শরীফ পাঠ করে মীলাদ শরীফ পড়ে অফিস চালু করেন এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় পাঞ্জেগানা নামাজ শুরু করেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, আবেদ খান, মাহবুবুল আলম হানিফ, ড. হাসান মাহমুদসহ যারা ওলামা লীগের বিষোদ্গার করছেন তারা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্য কতটি ভোট এনেছিলেন? এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান তাদেরকে কতটুকু পছন্দ করে? পাশের দেশের সাথে এদের যোগসূত্র খুঁজে বের করতে হবে। ওলামা লীগ যদি এভাবে কথা না বলে তাহলে জামায়াত-হেফাজত প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগকে ইসলামবিদ্বেষী ও হিন্দুবান্ধব আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিকৃত সমালোচনা করে অতীতের মতো ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের উস্কে দিত। তখন আজকের যুগ্ম সম্পাদকরা, রাজনৈতিক উপদেষ্টারা এই ওলামা লীগকেই ডেকে পাঠাতে বাধ্য হতো। তাই আওয়ামী ওলামা লীগই আওয়ামী লীগের পক্ষে এদেশে ধর্মপ্রাণ জনগণকে অনুপ্রাণিত করে নীরব বিপ্লব চালিয়ে যাচ্ছে। আর ৯৫ ভাগ মুসলমান জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্য নাস্তিক, প্রগতিবাদী হিন্দুরা ন্যূনতম কোনো ফ্যাক্টর নয়। সুতরাং ফু দিয়ে ওলামা লীগকে উড়িয়ে দেয়া যাবে না। গলাবাজি করে ওলামা লীগকে ম্লান করা যাবে না। ওলামা লীগের সক্রিয় উদ্দেশ্য এবং কর্মকা- ও বিবৃতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথেই সংগতিপূর্ণ ও সাদৃশ্যপূর্ণ।
অথচ আজ সুবিধাজনক সময়ে কোনো কোনো নেতা বলছেন, ওলামা লীগ আওয়ামী লীগের কেউ নয়। ইসলামের কথা বলায় আওয়ামী লীগের কিছু নেতা ওলামা লীগকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে চাইছে। উনাদের উচিত ৯৮ ভাগ মুসলমানের এই দেশে ওলামা লীগ সম্পর্কে সাবধানে ও গ্রহণযোগ্য কথা বলা। ওলামা লীগকে বাটপাড়ের দল বলে দেশের লাখ লাখ আলেম-ওলামার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ওলামা লীগের বক্তব্যের কারণ হলো, মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাহেবের একটি মন্তব্য। তিনি বলেছিলেন, পহেলা বৈশাখ পালন করলে মুসলমানিত্ব যায় না এবং ঈমান যায় না। ইনু সাহেবের এই বক্তব্যে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দারুণ ক্ষুব্ধ। এরূপ কথা বলার যোগ্যতা উনার নেই।
উল্লেখ্য, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ওলামা লীগ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রকাশে চুমু খাওয়ার উৎসব বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল, কিন্তু ওলামা লীগ পহেলা বৈশাখের উৎসব প্রতিহত করবে এমন কোনো কথা তখন বলা হয়নি। বরং ওলামা লীগ পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে যে কোনো সন্ত্রাসী হামলা বা নাশকতা চালানোর বিরুদ্ধে কথা বলেছে। তবে একথা বাস্তব যে, বর্তমান পহেলা বৈশাখের নামে ইসলামী মূল্যবোধের বিপরীত অনেক অপসংস্কৃতি রয়েছে। সুতরাং এক্ষেত্রে ইসলাম মূল্যবোধকে ওলামা লীগ ব্যক্ত করেছে মাত্র। কিন্তু পহেলা বৈশাখ পালন করার ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা আরোপ করেনি। আওয়ামী ওলামা লীগের অবস্থান হচ্ছেÑইসলাম অবমাননার বিরুদ্ধে, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত ও ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। মূলত ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সেতুবন্ধন হচ্ছে ওলামা লীগ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ‘কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন পাস হবে না’ বর্তমান সরকারের এই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি আরেকটি প্রতিশ্রুতি ছিল, ‘ইসলামী শিক্ষা ও মূল্যবোধ উজ্জীবিত করা হবে।’ এই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির আলোকে বর্তমান সরকার যাতে সফল হয় এবং জামায়াত জোট তথা ধর্মব্যবসায়ী সব মহলের সব ষড়যন্ত্র থেকে বর্তমান সরকারকে রক্ষা করার জন্যই ওলামা লীগ নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছে, তাই ওলামা লীগ ছিল, আছে এবং থাকবে। ইনশাআল্লাহ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন