শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সারাদেশে শৈত্যপ্রবাহ

গোপালগঞ্জে মৌসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস

প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব রিপোর্ট : চলমান শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বেশিরভাগ এলাকায়। গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় গোপালগঞ্জে তাপমাত্রার পারদ নেমে আসে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এটি বর্তমান শীত মৌসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড। হিমেল কনকনে হাওয়ার সাথে পড়ছে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা। এতে করে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বেড়েছে দুর্ভোগ। বৃদ্ধ ও শিশুদের কষ্ট পোহাতে হচ্ছে বেশি। দিনে এনে দিনে খাওয়া হতদরিদ্র দিনমজুর, নিম্নআয়ের লোকজনদের আয়-রোজগারের ক্ষেত্রে দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে।
গোপালগঞ্জে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা
গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : গোপালগঞ্জে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস হয়েছে। এটাই সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বলে জেলা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
আজ সোমবার ভোর রাতে গোপালগঞ্জ আবহাওয়া অফিস এ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। (মঙ্গলবারের) তাপমাত্রা ৬ এর কাছাকাছি থাকতে পারে বলেও ওই অফিসের কর্মকর্তা আভাস দিয়েছেন।
গোপালগঞ্জ কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, বর্তমানে গোপালগঞ্জের ওপর দিয়ে মাঝারী ধরণের শৈত্যপ্রবাহ প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত এ শৈত্যপ্রবাহ বিদ্যমান থাকতে পারে বলে তিনি আভাস দিয়েছেন। এ কারণে আজকের তাপমাত্রা গতকালের রেকর্ডকৃত সর্বনি¤œ তাপমাত্রার কাছাকাছি থাকতে পারে বলে তিনি জানান। দিনের বেলায় ঝলমলে রোদ থাকায় আবহাওয়া উষ্ণ থাকবে। বাতাসের সাথে কনকনে শীতও থাকবে বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে, গোপালগঞ্জে শীত জেঁকে বসেছে। হঠাৎ করে তামমাত্রা কমে যাওয়ায় জেলার ছিন্নমূল, দিন মজুর ও খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট চরম আকার ধারন করেছে। শিশু, বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষ ঠা-া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ ধরনরে আবহাওয়ায় জেলার কৃষকরা ফসলের ক্ষতির আশংকা করছেন।
কুড়িগ্রামে কুয়াশা ও ঠা-ার প্রকোপ বৃদ্ধি
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা : কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠা-ায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। ঠা-ার প্রকোপ থেকে বাঁচতে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর হতে বের হচ্ছে না মানুষজন। এ জেলায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
গত ৩ দিন ধরে দিনের বেশির ভাগ সময় সুর্যের দেখা না মেলায় বেড়েই চলেছে শীতের তীব্রতা। এ অবস্থায় গরম কাপড়ের অভাবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন ছিন্নমূল মানুষসহ শিশু ও বৃদ্ধরা। ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৫৬ জন রোগী। এদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। প্রচ- ঠা-ায় কাবু হয়ে পড়েছে গবাদি পশুও। অনেকে খর-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন। উত্তরীয় হিমেল হওয়ায় ঠা-ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় কাজে যেতে পারছে না শ্রমজীবী মানুষেরা। বোরো মৌসুম শুরু হলেও কনকনে ঠা-ায় মাঠে কাজ করতে পারছে না কৃষি শ্রমিকরা। অনেকে কাজের সন্ধানে বের হলেও কাজ জুটছে না তাদের।
কুড়িগ্রাম উলিপুর উপজেলার ম-লের হাট এলাকার এরশাদুল আলম জানান, এবছরের সবচেয়ে বেশি ঠা-া পড়েছে। ঘর থেকে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে। কাজতো করতে পারছি না। তার উপর গরম কাপড়ের অভাবে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বিপদে আছি।
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, গত ৩ দিন ধরে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে শীত জনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে ইনডোরে ডায়রিয়ায় ৩০ ও নিউমোনিয়ায় ৩০ শিশুসহ মোট ১৫৬ জনকে ও আউটডোরে প্রতিদিন আড়াইশ থেকে ৩শ রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, আজ এ জেলার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এ অবস্থা আরো দু-একদিন চলতে পারে বলে জানান তিনি।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জবুথবু জনজীবন
খুলনা ব্যুরো : হিমেল হাওয়ায় তীব্র শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। হাড় কাঁপানো শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের জনজীবন। বেকায়দায় পড়েছে সব প্রাণীকুল। শিশু, বৃদ্ধাসহ কম-বেশি সকলেই আক্রান্ত হচ্ছে ঠা-াজনিত রোগে।
খুলনার দাকোপে গত তিনদিনে অন্তত তিনজন বৃদ্ধ মারা গেছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা জেনারেল হাসপাতাল ও খুলনা শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন শতাধিক শিশু ও নর-নারী। প্রচ- ঠা-ায় শিশুর ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। সুস্থ নেই গৃহপালিত পশু-পাখিও। ঠা-ায় দাকোপের চালনার ৩নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আলী কেলে (৬৭), পার চালনা গ্রামের মকবুল শেখ (৭০) ও দুলাল কৃষ্ণ ম-ল (৬৮) এর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুয়ায়ী, খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। খুলনার তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যশোরে ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সাতক্ষীরায় ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চ চাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। খুলনা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্য প্রবাহ বিরাজ করছে। শীতের এই তীব্রতা আরো বাড়তে পারে। যা দু’দিন স্থায়ী হতে পারে। এ সপ্তাহের শেষের দিকে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে এ অঞ্চলে কুয়াশার তীব্রতা আর কণকণে শীতে সবচেয়ে বেশী কষ্ট পাচ্ছে শ্রমজীবী মানুষ। তারা সময়মতো কাজ করতে পারছে না। পরিবার নিয়ে তারা কষ্টকর সময় পার করছে।
খুলনার সুন্দরবন ঘেঁষা দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের গোলখালী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল জলিল জানান, প্রচ- শীতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কাহিল হয়ে পড়েছি। সময়মত কাজে যেতে পারছি না।
ডুমুরিয়ার এলাকার ইটভাটা শ্রমিক শাহিনুল ইসলাম বলেন, শীতের কারণে খুব কষ্ট হচ্ছে। ভোরে উঠে ঠিকমতো কাজে যেতে পারছি না। তাছাড়া গরম কাপড় নেই। আগুন জ্বালিয়ে বাড়ির সবাই উষ্ণ হওয়ার চেষ্টা করছি।
এদিকে শীতের তীব্রতার সাথে সাথে বাড়ছে ঠা-াজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব। জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মানুষের ভীড় বেড়েছে বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (আরএমও) আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাঃ আবু সুফিয়ান জানান, শীতের তীব্রতার কারণে বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর খুলনার ইনচার্জ মোঃ আমিরুল ইসলাম জানান, আগামী সপ্তাহে কুয়াশার প্রভাব বাড়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে শীতের প্রভাব বেশি থাকবে।
পাবনায় জন-জীবন অচল
পাবনা জেলা সংবাদদাতা : পাবনাসহ এর আশপাশের জেলা উপর দিয়ে মাঝারি থেকে ভারি ধরণের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তীব্র শীতে জন-জীবন কার্যত: অচল হয়ে পড়েছে। গতকাল (সোমবার) সূর্যের তাপ শৈত্যপ্রবাহের প্রকোপ থামাতে পারেনি। দিনে রোদ আর রাতে গুঁড়িগুঁড়ি শীলা বৃষ্টি হচ্ছে। পাবনা জেনারেল হাসপতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠা-া জনিত রোগ নিয়ে শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের ভীড় বাড়চ্ছে । জনবল সংকটে এদের চিকিৎসা সেবা ব্যহত হচ্ছে। দিন-মজুর মানুষের কষ্ট আরও বেড়েছে। কোন স্থানে কোন স্থানে বেসরকারিভাবে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে।
শৈত্যপ্রবাহ আরো ছড়িয়ে পড়েছে
আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, গতকাল ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১.৫, ফরিদপুরে ৬.১, চট্টগ্রামের সীতাকু-ে ও শ্রীমঙ্গলে ৮.৭, রাজশাহীতে ৭.৬, রংপুরে ৮.৮, খুলনায় ৮.২. বরিশালে ৭.৬, যশোরে ৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ২৬.১ ডিগ্রি সে.।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমাংশ ও এর সংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মওসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরণের কুয়াশা পড়তে পারে।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, সীতাকু- ও শ্রীমঙ্গল অঞ্চলসহ রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরণের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে, তবে দিনের তাপমাত্রা ১/২ ডিগ্রি সে. বৃদ্ধি পেতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে শীতের প্রকোপ কমে আসতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন