স্টাফ রিপোর্টার : রাজনৈতিক দল হিসেবে ভবিষ্যতে বিএনপির কোনো অস্তিত্ব থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা এবং সমন জারি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) কখনোই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন না, কোনোদিন থাকবেনও না। দেশের স্বীকৃত ইতিহাস নিয়ে বিএনপির নেতিবাচক মনোভাব থেকে দলটি এক ইঞ্চিও সরবে না। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কখনোই বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিলেন না, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেও ছিলেন না; আর হবেনও না। তিনি তার অবস্থান থেকে এক ইঞ্চিও সরে দাঁড়াবেন না। তাই তিনি স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করতে চান। এমনকি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে বিতর্কিত করতে চান। পুরো দেশকে তিনি বিতর্কিত করতে চান।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকম-লীর এক বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ।
জন প্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ বলেন, ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে খালেদা জিয়া এবং তার দল। মিথ্যা একশ’ বার, এক হাজারবার বলা যায়। তবে মিথ্যা কখনও সত্য হবে না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা এখনও বিশ্বাস করি বিএনপি সঠিকপথে ফিরে আসবে। তিনি বলেন, রাজনীতিক মাঠে পরাজিত হয়ে কে কি বললো তা নিয়ে সময় নষ্ট না করে আগামী নির্বাচন নিয়ে ভাবুন। পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনও যদি বয়কট করেন তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি আর থাকবে না। কারণ অনেক রাজনৈতিক দলের ফালাফালি আমরা দেখেছি। ভুল সিদ্ধান্তের কারণে এখন তাদের কেউ মনে রাখে না। দেশের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু নিয়ে অহেতুক মন্তব্য বন্ধ না করলে বিএনপিও ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ হবে।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বক্তব্য প্রসঙ্গে সৈয়দ আশরাফ বলেন, তার এ বক্তব্য তিনি একটি সেমিনারে বলেছেন। এটা কোনো রায় নয়। আমাদের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাংবিধানিক বোর্ড আছে। ওনারাও কোনো রায় দেননি। সুপ্রিম কোর্টে একক ব্যক্তির কোনো রায় হয় না। অন্য কোনো বিচারকও এ বিষয়ের স্বপক্ষে কোনো বক্তব্য দেননি। আর এটাতো আদালতের কোনো বিচারের বিষয় নয়।
আগামী ২৮ মার্চ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের প্রতিটি সম্মেলনে দেশের গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ঐতিহাসিক ৬ দফা, বাংলাদেশ স্বাধীন করার প্রত্যয়, তার মধ্যে সেরা সিদ্ধান্ত। এবারের সম্মেলনেও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে আওয়ামী লীগ ইতিহাস সৃষ্টি করবে। আর আওয়ামী লীগ যে সিদ্ধান্ত নেয় তার বাস্তবায়ন না করে ঘরে ফিরে যায় না।
সম্মেলন প্রস্তুতি সম্পর্কে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের ৭৭টি সাংগঠনিক কাউন্সিলের মধ্যে ইতোমধ্যেই ৬৯টির সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। বাকিগুলোতে সম্মেলনের তারিখ দেয়া হয়েছে। সময়মত সব শাখার সম্মেলন করে আমরা এবারের টার্গেট পূরণ করতে পারবো বলে আশা রাখি। তাহলে নতুন রেকর্ড হবে। এবারের সম্মেলন আমরা উৎসবমুখরভাবে জাতীয় অনুষ্ঠানের ন্যায় পালন করতে চাই।
এবারের সম্মেলনে দলীয় গঠনতন্ত্রের কোনো পরিবর্তন হবে কী না; এমন প্রশ্নের উত্তরে আশরাফ বলেন, জাতীয় কাউন্সিলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হলে গঠণতন্ত্র পরিবর্তন হতে পারে। তাহলে দলীয় সদস্যপদের সংখ্যা বাড়তে পারে। সম্মেলনের আগে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের সমালোচনা করে আশরাফ বলেন, ঢাকায় বসে বিভিন্ন জেলা-উপজেলার কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি। পত্র-পত্রিকায় হঠাৎ দেখা যায়, অমুক নেতা হয়েছেন। এটা আবার ফলাও করে ছাপানো হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ ছোট-খাটো কমিটিও নির্বাচন ও সম্মেলন করে ঘোষণা করে।
এ সময় তিনি গণমাধ্যমের সমালোচনা করে বলেন, আজ (সোমবার) বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সাক্ষাৎ করবেন, এই সংবাদটি পত্রিকায় তিন থেকে চার কলামে কভারেজ করার কি দরকার ছিল? তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এভাবে সংবাদ প্রকাশিত হলে আপনারা সাংবাদিকরা কি করেন?
সৈয়দ আশরাফ বলেন, একটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত প্রতিদিনই স্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এধরনের একটি সংবাদ এতো গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করার কি দরকার ছিল?
এর আগে সৈয়দ আশরাফের সভাপতিত্বে দলটির সম্পাদকম-লীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন