শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সর্বত্রই উৎকণ্ঠা

প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪১ পিএম, ২৬ এপ্রিল, ২০১৬

স্টালিন সরকার : দেশের লেখকদের ‘লেখক’ হাসান আজিজুল হক। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে প্রখ্যাত এই কথাসাহিত্যিক বলেছেন, ‘নিরাপত্তা নিয়ে আমরা চরম আতঙ্কিত। কী পরিমাণ আতঙ্ক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে তার কোনো পরিমাপক নেই। প্রতিটি মানুষ নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত। কীভাবে চললে এ ধরনের হামলা থেকে মুক্তি পাবেন তা তারা বলতে পারছেন না।’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হাসান আজিজুল হকের মতো শত শত অধ্যাপক-শিক্ষক ও কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। গত এক বছরে মুঠোফোন, টেলিফোন ও চিঠির মাধ্যমে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ জন শিক্ষককে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। মোবাইলে তারা ‘জীবন শেষ’ করে দেয়ার বার্তা পান। জীবন নিয়ে রীতিমতো শঙ্কায় পড়েছেন মানুষ গড়ার কারিগররা।
শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের ১৬ কোটি মানুষের কেউ এখন নিরাপদ নয়। খুন আর গুম আতঙ্কে মানুষ দিশেহারা। কোথাও নিরাপত্তা নেই, স্তস্তি নেই মনে। কি রাজধানী, কি জেলা-উপজেলা শহর, কি গ্রাম কোথাও নিরাপত্তাবোধ করছেন না মানুষ। কর্মস্থলে নিরাপত্তা নেই; পথেঘাটে নিরাপত্তা নেই; এমনকি ঘরেও নিরাপদবোধ করছেন না। অনাজা আতঙ্ক মানুষকে কুরে কুরে খাচ্ছে। কি শহর কি গ্রাম সর্বত্রই একের পর এক খুন, গুম, অপহরণের ঘটনা ঘটেই চলছে। কি শিশু, কি বৃদ্ধ, কি তরুণ-তরুণী কারো জীবন নিরাপদ নয়। লাগাম টেনে ধরতে না পারায় গুম-খুন যেন মহামারির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ, আমেরিকা, জার্মানি, ব্রিটেনসহ প্রভাবশালী দেশ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তাদের এ উদ্বেগের যথেষ্ট কারণও রয়েছে। পুলিশের হিসেবমতেই গত সাড়ে তিন মাসে খুন হয়েছে প্রায় দেড় হাজার। বীভৎস এসব খুনের কাহিনীর সামান্যই মিডিয়ায় এসেছে।
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া প্রতিটি এলাকায় বসবাসরত মানুষকে গুম আর খুনের ভয় কুরে কুরে খাচ্ছে। ভীতি-আতঙ্কে তারা যাচ্ছেন কুঁকড়ে। ঘর থেকে বের হলে ফিরে আসতে পারবেন কিনা এমন শঙ্কা সবার মনে। মন্ত্রী-এমপি ও ক্ষমতাসীন দলের কিছু হোমরা-চোমরা নেতা ছাড়া দেশের কে নিরাপদ? অদৃশ্য ঘাতকদের হত্যার নিশানায় কে নেই? নিষ্পাপ শিশু থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সাংবাদিক, ইসলামবিদ্বেষী ব্লগার, লেখক, প্রকাশক, স্কুল-কলেজের শিক্ষক, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, মন্দিরের পুরোহিত, চার্চের ফাদার, নাট্যকর্মী, এনজিওকর্মী, কলেজছাত্রী এমনকি স্বল্প আয়ে মানবেতর জীবনযাপন করা পরিচ্ছন্নতা কর্মীর জীবনও নিরাপদ নয়। মানুষ মরে পড়ে থাকে ডোবা-নালা-নর্দমায় কুকুর শেয়ালের মতো। বেওয়ারিশ লাশ হাসপাতালের মর্গে পচে যায়। আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম কত লাশ যে দাফন করে তার খবর নেই। শুধু গুলি নয়, ছুরি-চাকুতেও মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। ইসলামবিদ্বেষী ব্লগার হত্যাকা-কে বলা হচ্ছে আদর্শিক খুন। পুলিশের তরফে এই সব ‘ব্লগার খুনের’ জন্য দায়ী করা হচ্ছে অজ্ঞাত জঙ্গিদের। তথাকথিত ওই জঙ্গি কারা, সেটা চিহ্নিত করতে না পারায় বানের পানির মতো গুম আর খুনের নিশানার বিস্তৃতি বাড়তেই থাকবে।
সংরক্ষিত এলাকায় খুন হলো কলেজছাত্রী তনু। বাসার সামনে খুন হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী। কুষ্টিয়ায় খুন হলেন স্কুলশিক্ষক মজিবুর রহমান। ব্রাক্ষণবাড়িয়ার পীরবাড়িতে খুন হলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা বাহার উদ্দিন মিয়া। কাশিমপুরে কারারক্ষী রুস্তম আলী খুনের পর রাজধানীর কলাবাগারে নিজ বাসায় খুন হলেন জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়। জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়কে হত্যার দায় স্বীকার করেছে আল-কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশের কথিত বাংলাদেশ শাখা ‘আনসার আল ইসলাম’। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মলয় ভৌমিক নিজেদের নিরাপত্তাহীনতার চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, মানুষ খুন হচ্ছে। কারা খুনি সেটা খুঁজে বের করার বদলে সরকার ব্যস্ত আইএস খুন করেনি এটা প্রমাণে। এ কেমন মানসিকতা? অপরাধী ধরার চেয়ে যে খুন হলেন তার পরিচিতি তুলে ধরা হয় বড় করে। আইজিপি একেএম শহীদুল হক স্বীকার করেছেন, জঙ্গিদের টার্গেট সম্পর্কে জানার মেকানিজম পুলিশের নেই। তিনি ঘরে ঘরে পাহারা দিয়ে মানুষের নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ‘এ সব হত্যাকা-কে বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হিসেবে মন্তব্য করার ১২ ঘণ্টা পর সুর পাল্টিয়ে বলেছেন, ২০ দলীয় জোটের নির্দেশে এসব হত্যাকা- হয়। প্রসংগত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব ঘটনার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করলেও তিনি এই খুনগুলোর জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করেন। আরো কয়েকজন মন্ত্রী হত্যাকা-গুলো নিয়ে স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। মানুষ কার কথা বিশ্বাস করবে?
ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস পরিবারের সদস্য জুলহাজ মান্নানকে হত্যার ঘটনায় ক্ষুব্ধ দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি নিশা দেশাই বিসওয়াল। তিনি বলেছেন, সহকর্মী জুলহাজ মান্নানকে নৃশংস ও বর্বরোচিতভাবে হত্যাকা-ে আমার হৃদয় ভেঙে গেছে। আমি ক্ষুব্ধ। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জুলহাজ হত্যার তদন্তের আমেরিকার সহায়তার প্রস্তাব দেন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুগো সোয়াইর বলেন, ‘অধ্যাপক করিম, তনয় ফাহিম এবং জুলহাস মান্নানের অনাকাক্সিক্ষত হত্যার ঘটনায় গভীর বেদনা বোধ করে খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। জুলহাস মান্নান ঢাকাস্থ সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজেনার নিরাপত্তা রক্ষীর পাশাপাশি সমকামী ও হিজড়াদের অধিকারবিষয়ক পত্রিকা ‘রূপবান’ সম্পাদনা করতেন। এটা কেমন রুচি!
শুধু মানবাধিকার সংগঠনগুলোই নয়; পুলিশের অনুসন্ধানেও দেশের খুন, গুমের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। পুলিশের তথ্যমতে, গত সাড়ে ৩ মাসে থানায় খুনের মামলা এসেছে ১ হাজার ৫শ’টি। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যাক্তি ও পুলিশের দাবি ইসলামবিদ্বেষী ব্লগাররা আদর্শিক কারণে খুনের শিকার হয়েছেন। প্রশ্ন হলো ব্লগাররা ইসলামবিদ্বেষী হওয়ার সুযোগ পায় কেমন করে? অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া কেমন মুক্তমত? স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। ধরে নিচ্ছি ব্লগার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সমকামী গবেষক, শিক্ষক, এনজিও, নাট্যকর্মী খুনগুলো ইসলামপন্থীরা করেছে। ছুরিকাঘাত ও চাপাতির কোপের খুনকে জঙ্গিদের কাজ এবং সেটা মোট খুনের শতকরা এক ভাগের বেশি নয়। তাহলে বাকি ৯৯ শতাংশ খুনের জন্য দায়ী কারা?
দেশি-বিদেশী মানবাধিকার সংস্থাগুলো গুম-খুন নিয়ে চরম উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে। দেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ৫৫ জনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ কোনো বাহিনীই আটকের অভিযোগ স্বীকার করেনি। মানুষের চাপে পুলিশ নির্দেশনা দেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সিভিল পোশাকে কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে না। কাউকে গ্রেফতার করতে হলে সংশ্লিষ্ট থানার সহায়তা নিতে হবে। কিন্তু পুলিশ নিজেই নিজেদের আইন মানেননি। মানবাধিকার সংগঠনটির মতে এক বছরে বিভিন্ন বাহিনীর ক্রসফায়ার ও হেফাজতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৯২ জন। এর মধ্যে ‘ক্রসফায়ারে’ মারা গেছে ১৪৬ জন। আসকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, গত তিন মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ৩২ জন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ১৬ জনকে অপহরণ করা হয়। পরে তাদের মধ্যে ৩ জনের লাশ পাওয়া যায়। অনেকে এখনো নিখোঁজ।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার পশ্চিম রাজাবাজার এলাকা থেকে গতকালও কাতার এয়ার লাইন্সে কর্মরত বিমানবালা হুমাইরা জাহান সুখির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। চলতি মাসেই পত্রিকায় খবর বের হয়েছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া কলেজছাত্রের গুলিবিদ্ধ লাশ চুয়াডাঙ্গায় পাওয়া যায়। একইভাবে তুলে নিয়ে যাওয়ার এক মাস পর কালীগঞ্জের দুই শিবির নেতা-কর্মীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয় যশোর থেকে। অপহরণ করা হয় কালীগঞ্জের ঈশ্বরবা গ্রামের মহসিন আলীর ছেলে শহীদ নূর আলী কলেজের ছাত্র সোহানুর রহমান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল্লাহ আল মামুন এবং নীলফামারী সরকারি কলেজের ছাত্র নূরে আলমকে। এখনো তাদের হদিস পায়নি পরিবার। বান্দরবানের থানচি-আলীকদম সড়ক থেকে অপহরণের চার দিন পর তিনজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এক সাপ্তাহ থেকে নিখোঁজ রয়েছেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী এলাকার গারো নৃগোষ্ঠীর তিন ব্যক্তি। এসব কিসের আলামত? প্রায়ই জাতীয় প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ রাজধানীর বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলন করে স্বজনহারাদের আহাজারি করেন। এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাগুলো চোখের সামনেই জ্বলজ্বল করছে। এই খুন, গুম, অপহরণগুলো আর্ন্তজাতিক মিডিয়ায় তেমন আলোড়িত করে না। কারণ তারা সাধারণ মানুষ। ইসলামবিদ্বেষী ব্লগার, এনজিও কর্মী, বিশেষ মতাদর্শের ব্যাক্তি খুন বা গুম হলে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়। কারণ তারা ইসলামবিদ্বেষী ও পশ্চিমা মতাদর্শী ভাবধারার লোক। তাই ব্লগার খুন হলেই আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো হৈচৈ করে ওঠে। ফলাও করে খবর প্রচার করা হয়। অথচ যারা খুন হন সেই সাধারণ মানুষ, ইসলামবিদ্বেষী ব্লগার ও বিশেষ মতাদর্শের ব্যক্তি সবার রক্ত লাল। প্রিয়জনের কাছে সবাই অতি গুরুত্বপূর্ণ। সব শ্রেণীর মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় আছেন; সব শ্রেণীর মানুষই নিহত হচ্ছে, গুম হচ্ছে তখন সবার জন্যই বিচার দাবি না করলে নিরাপত্তা আসবে কেমন করে? বুদ্ধিজীবীরা অভিযোগ করছেন, দেশে বিচারহীনতা নিয়ম সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতায় যেতে জনগণের ভোটের প্রয়োজন না পড়ায় সেই ক্ষমতাসীনরা জনগণের জীবন রক্ষার প্রয়োজনবোধ করছে না। আইজিপি শহীদুল হক বলেছেন, প্রত্যেক নাগরিককে নিজস্ব নিরাপত্তাবলয় তৈরি করতে হবে। প্রশ্ন হলো মানুষ কীভাবে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলবে? অর্ধেক নাগরিকের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। তারপর রাজনৈতিক রেষারেষির রোষানলে মানুষ চিরেচ্যাপ্টা। কোন অদৃশ্য শক্তি মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শনাক্ত করতে না পারলে সাধারণ মানুষ কিভাবে করবে? বছরখানেক থেকে কোনো হত্যাকা- ঘটলেই আইএস দাবি করে তারা হত্যা করেছে। সরকার বলছে আইএসের অস্তিত্ব বাংলাদেশে নেই। কিন্তু কারা খুনি, অপরাধী তাদের শনাক্ত করার আগেই দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ঘাড়ে দায় চাপানোর কৌশল নেন। এতে করে প্রকৃত অপরাধীরা নিরাপদে থেকে যায় এবং আরো অঘটন ঘটাতে উৎসাহী হয়। ফলে ভয়ার্ত মানুষের মধ্যে এসে গেছে হতবিহ্বলতা। মানুষের মধ্যে এটাই আরো বিপদের কারণ হয়ে গেছে। একের পর এক হত্যাকা- ঘটছে; গুম-খুন হচ্ছে অথচ ঘাতকরা থেকে যাচ্ছে ‘অদৃশ্য’। পুলিশ তাদের ধরতে পারছে না; স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কোনো ব্যাখ্যা-বক্তব্যে মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না। মানুষ ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছন। নিজের ছায়াকে ঘাতক মনে করে সন্ত্রস্ত হচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাঙা রেকর্ড বার বার শুনছেন। কিন্তু প্রকৃত ঘাতক কারা তাদের চিহ্নিত করতে পারছেন না। মাসের পর মাস বছরের পর বছর ধরে ঘাতকেরা অজ্ঞাত থাকলে, ভয়ের উৎস অদৃশ্য থাকবে; মানুষের মধ্যে ভয়ের মাত্রাও বাড়তে থাকবে। একের পর এক হত্যাকা-ের পর প্রকৃত খুনিরা ধরা না পড়ায় মানুষের মননে অনিশ্চয়তার ঢেউ আছড়ে পরছে। সে ভয়ের ঢেউ ইতোমধ্যেই বিপদসীমা অতিক্রম করে ফেলেছে।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ‘চলতি মাসেই চারটি নৃশংস হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে। ভয়াবহ বিষয় হলো এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। বাংলাদেশের মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারকে নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। অথচ এই ধরনের সহিংস অপরাধী গোষ্ঠীকে বিচারে ব্যর্থ হওয়ায় অপরাধীরা দিনে দিনে তাদের ক্ষেত্র বিস্তৃত করেছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে সমকামী অধিকারকর্মীরা এখন খুন হচ্ছেন।’ একের পর এক খুন-গুমের পরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দাবি করেছেন, বর্তমানে গোটা বিশ্বে যে অস্থিরতা চলছে সে তুলনায় বাংলাদেশে খুন-খারাবি কম ঘটছে। বাংলাদেশের গোয়েন্দা বাহিনী তৎপর বলেই এ ধরনের ঘটনা কম ঘটছে। আসলে কি তাই?
সাম্প্রতিক সংগঠিত কয়েকটি হত্যাকা-ের বিষয়ে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে এসব গুপ্ত হত্যা চালানো হচ্ছে। এই গুপ্তহত্যা কারা ঘটাচ্ছে সকলেই বোঝেন। হত্যাকারীরা ধরা পড়বে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। মানুষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের বাস্তবায়ন দেখতে চায়। যদি প্রকৃত খুনিদের শনাক্ত করে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা যায় তাহলে দেশে অপরাধ প্রবণতা কমে যাবে। আর যদি অপরাধী গ্রেফতারের নামে শুধুই রাজনৈতিক এজে-া বাস্তবায়নের চেষ্টা হয় তাহলে অপরাধ বাড়বেই। প্রধানমন্ত্রীর সুরের সঙ্গে আমরাও সুর মেলাতে চাই। প্রকৃত অপরাধীরা ধরা পড়বেই এবং তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। কেবল সেটা সম্ভব হলেই মানুষের মধ্যেকার ভীতি-আতঙ্ক দূর হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন