শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

রহমত উল্লাহর অভ্যর্থনায় দুর্ভোগ পোহালো সাধারণ মানুষ

প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ‘নেতা আসছেন, তাকে সংবর্ধনা দিতে হাজার হাজার নেতা কর্মী আসছেন,তাই রাস্তা বন্ধ। তাদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর বেশী কিছু বলতে পারব না।’
গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত রাজধানীর মহাখালী থেকে বিমানবন্দর হয়ে টঙ্গী ব্রীজ পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এর কারণ জানতে চাইলে পুলিশের একজন ট্রাফিক কর্মকর্তা এভাবেই তার প্রতিক্রিয়া জানালেন। হযরত শাহজালাল (রহ) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সামনে কর্মরত ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘কোন উপায় নেই, রাস্তায় হাজার হাজার লোকজন নেমে এসেছে। তাদের সরানো যাচ্ছে না। তারা এসেছেন ঢাকা মহানগর উত্তরের নব নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহকে অভ্যর্ত্থনা জানাতে। তিনি সিঙ্গাপুর থেকে বিমানযোগে সন্ধ্যায় শাহজালাল বিমান বন্দরে অবতরণ করবেন। আর একারণই রাস্তা বন্ধ। সৃষ্টি হয় যানজটের।’
স্থানীয় সুত্র ও পুলিশ জানায়, বিকাল ৩টা থেকেই বিমানবন্দর ও আশপাশ এলাকায় নেতাকর্মীরা ভিড় জমাতে থাকেন। তাদের সামাল দিতে পুলিশ ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়। বিকাল সাড়ে তিনটায় এক পর্যায় নেতা কর্মীরা বিমানবন্দর সড়কের গোলচত্ত্বর থেকে উত্তরে জসিমউদ্দিন রোড় পর্যন্ত এবং দক্ষিণে বিমানবন্দর থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত উভয় পাশের রাস্তা আওয়ামী লীগ, যুবলীগে ও তাদের অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা বন্ধ করে দেয়। তারা রাস্তায় নেমে পড়লে উভয় পাশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তখন পুলিশকে অসহায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আটকা পড়েন হাজার হাজার যাত্রী। প্রচ- গরমের মাঝে অসহায় হয়ে ৩ /৪ ঘন্টাতাদের রাস্তায় যানজটের কারণে অপেক্ষা করতে হয়। অফিস আদালত ছুটির পর এমনিতে এসময় রাস্তায় যানবাহনের চাপ থাকে বেশি। কিন্তু হঠাৎ করে রাস্তা বন্ধ করে দেয়াতে দীর্ঘ যানজটে আটকা পড়ে সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এসময় শুধু সাধারণ মানুষ নয় পুলিশকেও অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। নেতাকর্মীদের রাস্তা থেকে সরানোর জন্য কোন ধরনের উদ্যোগ নেয়নি ট্রাফিক পুলিশ।
ঢাকা উত্তর জোনের ট্রাফিক উপ পুলিশ কমিশনার একরামুল হাবিব বলেন, বেশি সময় যানজট ছিল না। ঘন্টাখানিক সময় যানজট ছিল। তারপর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।
অন্যদিকে স্থানীয় লোকজন জানান, ঘন্টার পর ঘন্টা তীব্র যানজটে লোকজনকে আটকা পড়ে থাকতে হয়েছে। এসময় ভোগান্তির শিকার হয়ে সাধারণ মানুষকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জন্যেও এভাবে রাস্তা বন্ধ করা হয় না। কিন্তু গতকাল পুলিশের ভূমিকাও ছিল রহস্যজনক। একজন লোকের জন্য এভাবে রাস্তা বন্ধ করে হাজার হাজার লোকজনকে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকিয়ে রাখার অধিকার তারা কোথায় পেলো,এ প্রশ্ন ভুক্তভোগীদের।
জানা যায়, বিমানবন্দর সড়কের উভয়পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হলে সৃষ্ট যানজটের রেশ কাটতে কাটতে রাত ৯টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় অফিস ফেরৎ লোকজনসহ হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যা ৬ টা ৫৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের বিজি-০৮৫ নম্বর ফ্লাইটে শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করেন আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহ। তিনি সিঙ্গাপুর থেকে ওই ফ্লাইটে আসেন। সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে তিনি বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে আসেন। এসময় কয়েক হাজার নেতা কর্মী তাঁকে অভ্যর্থনা যানায়। কিন্ত এর প্রায় ৩ ঘন্টা আগেই বিমানবন্দর সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়ে নেতা কর্মীরা। ফলে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। নেতাকর্মীরা বিমানবন্দরে প্রচ- ভিড় জমালে তাদের সামাল দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও বেগ পেতে হয়। তবে যানবাহন বন্ধ করে রাস্তা দখল করে রাখলেও পুলিশ তাদেরকে কোন বাধা দেয়নি। আওয়ামী লীগের ওই নেতাকে বিমানবন্দর থেকে গ্রহন করতেই এ যানজটে সৃষ্টি হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রাফিকে পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, লিখিত নয়, অলিখিত নির্দেশ ছিল যাতে নেতা কর্মীদের ডিস্টার্ব করা না হয়। তিনি আরো জানান, সন্ধ্যার পর পরই অর্থাৎ ৭টার পর যানজট কমতে শুরু করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন