বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পাইপলাইনে তেল সরবরাহ

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

এবার চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল যাবে ঢাকায়। এই লক্ষ্যে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা গুপ্তখাল থেকে ঢাকার অদূরে নারায়নগঞ্জের গোদনাইল-ফতুল্লা পর্যন্ত ৩০৫ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হচ্ছে। নৌপথের বদলে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হলে রিভারলস, সিস্টেমলস, চুরি ও অপচয় কমবে। ব্যয় কমবে, কম সময়ে জ্বালানি পৌঁছে যাবে। নিশ্চিত হবে জ্বালানি নিরাপত্তা। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন-বিপিসি চেয়ারম্যান মোঃ শামসুর রহমান গতকাল (সোমবার) দৈনিক ইনকিলাবকে বলেছেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা হয়ে চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ৩০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলপিই কোটেড পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল সরবরাহে দুই হাজার ৮৬১ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বিপিসির নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বিপিসির পক্ষে প্রকল্প বাস্তবায়ন তদারক করবে রাষ্ট্রয়াত্ত¡ জ্বালানি তেল বিপণন কোম্পানি পদ্মা অয়েল। এ পাইপলাইন দিয়ে বছরে ৫০ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল সরবরাহ করা যাবে। তবে বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী আপাতত ২৭ লাখ মেট্রিক টন সরবরাহ করা হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৩৮ কিলোমিটার এলাকায় বসবে ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের এলপিই কোটেড পাইপ। এই পাইপলাইন দিয়ে বন্দরনগরী থেকে রাজধানীতে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হবে। গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত আট কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। চট্টগ্রামের গুপ্তখাল থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল-ফতুল্লা পর্যন্ত পাইপলাইন হবে। এর পাশাপাশি কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত আরও ৬০ কিলোমিটার একটি শাখা পাইপলাইন বসানো হবে। ওই পাইপলাইন দিয়ে চাঁদপুর ডিপোতে যাবে জ্বালানি তেল। সবমিলে পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য হবে ৩০৫ কিলোমিটার। এ পাইপলাইন দিয়ে দেশের মোট জ্বালানির প্রায় ৪০ শতাংশ পরিবহন করা হবে।
ঢাকার অদূরে গোদনাইল-ফতুল্লা ডিপো থেকে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে জ্বালানি তেল যাবে। অন্যদিকে বৃহত্তর কুমিল্লাসহ অন্যান্য জেলায় সরবরাহ দেয়া হবে চাঁদপুর ডিপোতে। পাইপলাইন দিয়ে প্রধানত ডিজেল সরবরাহ করা হবে। কম সময় ও খরচে এবং নিরাপদে রাজধানী এবং আশপাশের জেলাগুলোতে জ্বালানি তেল সরবরাহের এ প্রকল্পটি গত ৯ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে তার আগেই প্রকল্পের প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ইতোমধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ হয়েছে। এখন চলছে কারিগরি নকশা তৈরির কাজ। খুব শিগগির অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। একনেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর প্রকল্প বাস্তবায়নে নতুন গতি এসেছে।
বিপিসি সূত্র জানায়, বর্তমানে নৌ ও সড়কপথে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে জাহাজে তেল পরিবহনের সময় প্রায় পাইপ দিয়ে চুরি হয়। রিভারলস, সিস্টেমলসের নামে অপচয় হয় বিপুল জ্বালানি তেল। দুর্ঘটনাসহ নানা কারণে নদী দূষণের ঘটনাও ঘটে প্রতিনিয়ত। নৌপথে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল পৌঁছাতে পাঁচ থেকে ছয়দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এসব ক্ষতি থেকে বাঁচা যাবে। কম সময়ে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা যাবে। এতে করে জ্বালানি নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত হবে।
বিপিসি চেয়ারম্যান মোঃ শামসুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, প্রকল্পের প্রাথমিক প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। খুব শিগগির অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হবে। বিপিসির নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান এ চাহিদা পূরণে সড়ক ও নৌপথের বদলে সময় ও অর্থ সাশ্রয়ী পাইপলাইন প্রকল্প উপযোগী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে নৌপথে প্রায় ৯০ শতাংশ জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। এই বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর প্রায় ২শ’টি কোস্টাল ট্যাংকার নিয়োজিত রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকার আশপাশের এলাকায় বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন, যা ঢাকায় অবস্থিত গোদনাইল ও ফতুল্লার ডিপোগুলো থেকে সরবরাহ করা হয়। এ চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে। চাঁদপুরে অবস্থিত বিপণন কোম্পানিগুলোর তিনটি ডিপোতে জ্বালানি তেলের বর্তমান চাহিদা প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা গুপ্তখালের প্রধান স্থাপনা থেকে কোস্টাল ট্যাংকার যোগে গোদনাইল, ফতুল্লা ও চাঁদপুরে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। এই ডিপোগুলোর বর্তমান বার্ষিক চাহিদা প্রায় চার লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন। এসব ডিপো থেকে বিভিন্ন জেলায় জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়।
নৌপথে ট্যাংকারে করে এ বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল যথাসময়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পরিবহনে সরকারকে বিপুল পরিবহন খরচ এবং ঘাটতি বহন করতে হয়। এছাড়া হরতাল ও ধর্মঘটের কারণে জ্বালানি পরিহবন বাধাগ্রস্ত হয়। অনেক সময় সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হলে মাঠপর্যায়ে জ্বালানি তেলের ঘাটতি দেখা দেয়। বিশেষ করে ডিজেল সঙ্কটে পরিবহন থেকে শুরু করে কৃষিকাজ ব্যাহত হয়। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এসব সমস্যা থাকবে না, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন