জাকের উল্লাহ চকোরী, কক্সবাজার থেকে : কক্সবাজারের চকরিয়ায় প্রবাহমান মাতামুহুরী নদীতে দুটি মাটির বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছে এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা। গত ১৫ দিন ধরে নদীর অন্তত দুই কিলোমিটারের দুই পাশে মাটি ফেলে অস্থায়ী ক্রসবাঁধ দুটি নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে বর্ষার সময় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে লোকালয় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হতে পারে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, মাতামুহুরী নদীর পালাকাটা পয়েন্টে প্রায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ইতিপূর্বে নির্মিত রাবাব ড্যামটি গতবছরের বন্যার সময় ব্যাপকভাবে পলিমাটির নিচে চাপা পড়ে অকার্যকর হয়ে পড়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড চলতি শুষ্ক মৌসুমে মিঠাপানি ধরে রাখতে সম্প্রতি দুটি মাটির অস্থায়ী ক্রসবাঁধ নির্মাণের জন্য ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। অভিযোগ রয়েছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরাদ্দ দেয়া এই টাকার সিকিভাগ ব্যয় করে ক্রসবাঁধ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার পর উদ্বৃত টাকা দিয়ে ড্যামের অদূরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম আরো দুটি ক্রসবাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন করে। আর ওই বাঁধ দুটির মাঝখানে প্রায় দুই কিলোমিটার প্রবহমান নদীতে মাছ চাষ শুরু করেছে। এতে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, প্রবহমান মাতামুহুরী নদীতে বাঁধ দেয়ার কারণে বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি ভাটির দিকে নামতে পারবে না। এতে আশপাশের ব্যাপক এলাকা বানের পানিতে তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি করবে। গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে মাতামুহুরী নদীর।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘নতুন করে নদীতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাঁধ দেয়ার বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানলেও তাদের কিছুই করার নেই। যারা এই বাঁধ নির্মাণ করছেন তাদের ক্ষমতার দাপট অনেক বেশি।’
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মাতামুহুরী নদীর চিরিঙ্গা ইউনিয়নের পালাকাটা-রামপুর পয়েন্টে নির্মিত রাবার ড্যাম থেকে কয়েকশ’ গজ পূর্ব-দক্ষিণ দিকে নদীর পানির প্রবাহ বন্ধ করে প্রথমে একটি মাটির বাঁধ (ক্রসবাঁধ) নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয় কয়েকদিন আগে। বর্তমানে ওই বাঁধের অন্তত দুই কিলোমিটার দূরবর্তী স্থানে নদীতে আরো একটি মাটির ক্রসবাঁধ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। পাশাপাশি দুই বাঁধের মাঝখানে যন্ত্র দিয়ে খনন করা হচ্ছে নদী ও আরো এক কিলোমিটার এলাকার ভরাট খাল।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, মাছ চাষের জন্য নদীতে বাঁধ নির্মাণ ও নদী খননের কাজ করছেন চকরিয়া উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতা ও কোনাখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রুহুল কাদের মানিক, বিএনপি নেতা মীর কাশেম ও বিএনপি নেতা চিরিঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক সদস্য (মেম্বার) নুরুল আবচারসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। মাছ চাষ প্রকল্পের পরিচালক নিযুক্ত করা হয়েছে বিএনপি নেতা মীর কাশেমকে।
স্থানীয় চিরিঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, ‘প্রায় ৬০ ফুটপ্রস্ত ও দুই কিলোমিটার এলাকায় নদীর দুই প্রান্তে বাঁধ দুটি তৈরি করতে আশপাশের ফসলি জমির মাটিও ব্যবহার করা হয়েছে। এতে অনেক জমির স্তর তলানীতে চলে গেছে। স্থানীয় লোকজন এই অবৈধ কর্মযজ্ঞের বিরুদ্ধে কথা বলারও সাহস পাচ্ছে না। যারা সোচ্চার হবেন তাদের বিরুদ্ধে আসবে প্রভাবশালীদের নানামুখি হয়রানি।’
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, ‘অচল হয়ে পড়া পালাকাটা রাবার ড্যামটি সচলের কাজ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ড্যামের দুই দিকে দুটি মাটির অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ড্যামের অদূরে যদি কেউ নতুন করে মাটির বাঁধ নির্মাণ করে থাকে সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টতা নেই।’
নির্বাহী প্রকৌশলী আরো বলেন, আমি যতদূর জানি মাছ চাষ করার জন্য নদীতে ব্যক্তিগতভাবে দেয়া বাঁধ দুটির বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম অবগত আছেন। যারাই বাঁধ দুটি তৈরি করুক না কেন, যখনই রাবার ড্যাম সচলের কাজ সম্পন্ন হবে, তখনই ড্যামের দুই পাশের দুটি বাঁধ অপসারণের সময় ব্যক্তিগতভাবে দেয়া বাঁধগুলোও অপসারণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন