মালেক মল্লিক : জাতীয় আইনগত সহায়তা কেন্দ্রের সেবা বাড়ছে। ২০০৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরুর পর থেকে প্রতি বছর আইনগত সহায়তা কেন্দ্রের সেবার মান বেড়েই চলছে। একদিকে যেমন মামলা দায়েরের সংখ্যা বাড়ছে তেমনি বাড়ছে মামলা নিষ্পত্তির হার। এতে করে লাভবান হচ্ছেন রাষ্ট্রের নিঃস্ব, দরিদ্র, অসহায় ও মামলা পরিচালনা করতে অক্ষম বিচারপ্রার্থীরা।
পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত ৭ বছরে ১ লাখ ২৩ হাজার ৬২৯ জন সহায়তা পেয়েছে। ২০০৯ সালে নিষ্পত্তির সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৫২৪, ২০১০ সালে তা বেড়ে হয় ৫ হাজার ৫০৬। জেলা আদালত থেকে শুরু করে সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত অসহায় ও গরীব দুঃখীদের বিনামূল্যে আইনি সেবা দিচ্ছেন সহায়তা কেন্দ্র। এসব গরীব মানুষদের মামলা পরিচালনার ভার নেয়া সরকারি কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতেই আজ বৃহস্পতিবার উদযাপিত হচ্ছে ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস। এবছরের শ্লোগান হচ্ছে গরীব-দুঃখীর বিচার পাওয়ার অধিকার, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে উদ্বোধন করবেন। এদিকে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসকে উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেছেন, যারই আইনী সহায়তা প্রয়োজন পড়বে, তাকেই এ সেবা দেওয়া হবে। তবে সেটা হতে হবে আইনী কাঠামোর মধ্যে। দেশের নিরীহ অসচ্ছল বিচারপ্রার্থীরা যাতে এ সুবিধা ভোগ করতে পারে সেজন্য সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
জাতীয় আইনগত সহায়তা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে প্রদান সংস্থা থেকে ৯ হাজার ১৬০ জন আইনি সহায়তা পান। ২০১০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ হাজার ২৬৬, ২০১১ সালে ১২ হাজার ৫৬৮, ২০১২ সালে ১৫ হাজার ৪৫০ এবং ২০১৩ সালে ১৯ হাজার ৪৯৩ জন। ২০১৪ সালে ২৫ হাজার ২৮৩। গত বছরে তথা ২০১৫ সালে ৩০ হাজার ৪০৯ জন আইনগত সহায়তা নিয়েছেন। গত ৬ বছরে ১ লাখ ২৩ হাজার ৬২৯ জন সহায়তা পেয়েছেন। একদিকে যেমন বেড়েছে মামলার সংখ্যা তেমনি নিষ্পত্তি সংখ্যা বাড়ছে। ২০০৯ সালে নিষ্পত্তি হওয়া মামলার সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৫২৪, ২০১০ সালে তা বেড়ে হয় ৫ হাজার ৫০৬। অবশ্য পরে এ সংখ্যা একটু কমে আসে। ২০১১ ও ২০১২ সালে নিষ্পত্তি করা মামলার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৫ হাজার ১০০ ও ৪ হাজার ১৩৪। ২০১৩ সালে আবার তা বেড়ে হয় ৫ হাজার ৬৩১ এবং ২০১৪ সালে ১০ হাজার ৬৭৪। ২০১৫ সালে ১২ হাজার ৪১৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। সব মিলিয়ে ৪৬ হাজার ৯৮৫ মামলার মধ্যে ৩০ হাজার ৫৪৭টি ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তি হয়। জানা যায়, প্রতি জেলা আদালত ভবনে সংস্থার ৬৪টি জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয় স্থাপন এবং ৪৮২টি উপজেলা ও ৪ হাজার ৫৯৭টি ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়। সর্বশেষ চৌকি আদালত ও শ্রম আদালতে বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। চালু করা হয়েছে হটলাইনে তথ্য সরবরাহ করছে। দেশের যে কোনো স্থান থেকে যে কেউ যেকোনো ফোনের মাধ্যমে হটলাইনে কল করে আইনি পরামর্শ ও তথ্যসেবা নিতে পারেন। টেলিফোনে ২০১২ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত ১৫ হাজার ২৫২ জন সেবা নেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক মালিক আব্দুল্লাহ্ আল-আমিন সাংবাদিকদের বলেন, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জেলা ও সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে গেলে আমরা তাদের সহায়তা করব। এজন্য টাকা লাগবে না। আইন সংশোধনের পর এডিআর পদ্ধতির মাধ্যমে বিরোধ ও মামলা নিষ্পত্তিতে সহায়তা নিচ্ছেন বিচারপ্রার্থী।
সুপ্রিমকোর্টে লিগ্যাল এইডের সেবা বাড়ছে: একসময় সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা ছিল যে উচ্চ আদালতে অনেক বেশি টাকা ছাড়া মামলা করার সুযোগ নেই। সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির কার্যক্রমে সেই ধারণা পাল্টে গেছে। সুপ্রিমকোর্টেও অসহায় দরিদ্ররা মামলার সুযোগ পাচ্ছেন। গতবছর প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কার্যালয় উদ্বোধন করা হলেও ওই বছরের আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে উচ্চ আদালতে বিনামূল্যে আইনী সেবা প্রদান। এরপর থেকে গত মার্চ পর্যন্ত একশ ৭১ জনকে আইনগত সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৩৫২ জনকে আইনগত পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এসব আইনজীবীরা প্রায় বিনা ফিসেই মামলা পরিচালনা করছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। ২০১৫ সালে মার্চ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ১৭১টি মামলা আইনি সেবা দিয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ জন নারী এবং ১৩৬ জন পুরুষ। প্রতি মাসে ২১ জনের বেশি সেবা দিয়েছে। এছাড়াও গড়ে ৪৪ জনকে মোট ৩৫২ জনকে সেবা দিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্ট রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে অসহায় ব্যক্তিদের আইনি পরার্মশ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে জাতীয় আইনগত সহায়তা কেন্দ্র। প্রতি বছর তুলনামূলকভাবে জাতীয় আইনগত সহায়তার কেন্দ্রর সেবার মান বাড়ছে। সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইডের কার্যক্রম গতিশীল হচ্ছে। তাদের কার্যের পরিধি ও যেমন বাড়ছে। আশা করি আগামীতে আরো বেশি সেবা দিতে পারবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন