জাবি সংবাদদতা : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তপন কুমার সাহার পদত্যাগের দাবিতে ডাকা সর্বাত্মক ধর্মঘট পালিত হয়েছে। অপরদিকে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রক্টরের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করবে বলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জানিয়েছেন ভিসি অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। দায়িত্ব অবহেলা ও তার মদদে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় এ কমিটি গঠন করা হবে বলে জানা গেছে। সর্বাত্মক ধর্মঘটের অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার ভোর ৬টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর ঘেরাও করে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। পরে তারা সমাজ বিজ্ঞান ও কলা ও মানবিকী অনুষদের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েকটি বিভাগ ছাড়া অধিকাংশ বিভাগে ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে নিয়মিত পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুসহ সকল গুম, হত্যা ও ধর্ষণের বিচারের দাবিতে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সা¤্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্রঐক্যের ডাকা সোমবারের হরতালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেটে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ। এতে ৫ জন আহত হয় এবং ১২ জনকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় প্রক্টরের মদদ ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে বামপন্থী শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার ক্যাম্পাসে ধর্মঘট পালন করেন তারা। ধর্মঘটের সমর্থনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় এবং বিভিন্ন অনুষদের সামনে অবস্থান নিয়ে ধর্মঘট পালন করেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি দীপাঞ্জন সিদ্ধান্ত কাজল জানান, শিক্ষার্থীদের ওপর এ ধরনের হামলার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের ইন্ধন রয়েছে। তিনি হামলার আগমুহুর্তে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এতে প্রমাণ হয় তার সবুজ সংকেতেই মারধর ও আটক করা হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জুবায়ের টিপু বলেন, প্রক্টর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। এজন্য তিনি পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। আমরা তাকে স্বেচ্ছায় পদ ছাড়ার অনুরোধ করছি, অন্যথায় তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। এ বিষয়ে বামপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক মঞ্চের আহ্বায়ক সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, এই প্রক্টর আগেও দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছিলেন, এখনো দিয়েছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। কাজেই তার শিক্ষার্থীদের তো বটেই শিক্ষকদেরও এক ধরনের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। তাই তার এ পদে থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই, অবিলম্বে তার পদত্যাগ করা উচিত। অভিযোগ অস্বীকার করে প্রক্টর অধ্যাপক ড. তপন কুমার সাহা সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সঠিক নয়। শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ এখনো হাতে পাইনি, তাই এর বেশিকিছু এখন বলতে পারছি না।
আন্দোলন ঠেকাতে তদবির: এদিকে প্রক্টর বিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে মাঠে নেমেছেন সহকারী প্রক্টর উজ্জ্বল কুমার ম-ল। গতকাল বুধৃবার আন্দোলনররত এক শিক্ষার্থীকে রুমে ডেকে নিয়ে পরক্ষভাবে হুমকি দেয় তিনি। প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘এক দফা এক দাবি, প্রক্টর তুই কবে যাবি’, ‘যে প্রক্টর দালালি করে সেই প্রক্টর চাই না, যে প্রক্টর পুলিশ আনে সেই প্রক্টর চাই না’ ইত্যাদি সেøাগান দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হন ওই সহকারী প্রক্টর। তিনি তাদেরকে শালিনতা বজায় রেখে শব্দ চয়নের পরামর্শ দেন। যদিও এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করেন। সে সময় ‘প্রক্টরের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’ ইত্যাদি অশ্লীল ভাষায় সেøাগান দেয়। এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর উজ্জ্বল কুমার ম-ল বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে তিনি বলেন, একজনের সঙ্গে কথা হয়ে তবে আন্দোলনের বিষয়ে কোনো কথা হয়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন