স্টাফ রিপোর্টার : চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ইউপি নির্বাচনে এ পর্যন্ত প্রাণনাশের হাফ সেঞ্চুরি হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় চার হাজার মানুষ। তাই এ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধই নয়, গুলিবিদ্ধও। এছাড়া নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ওয়ান অ্যান্ড হাফ। কাজেই স্থানীয় নির্বাচন কোন দিকে যাচ্ছেÑএমন প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন : প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন ও স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে গভর্নেন্স অ্যাডভোকেসি ফোরাম ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমরা তো বলনেওয়ালা। যারা দেখনাওয়ালা, শোনাউল্লাহ অর্থাৎ যারা শুনবেন, দেখবেন, তারা কিছু করছেন না। জাতীয় নির্বাচন যেমনই হোক আগে ইউপি নির্বাচন ছিল উৎসবমুখর। কিন্তু এবার তা নেই।
তিনি বলেন, বোবার কোনো শত্রু নেই। কিন্তু বুঝে-শুনে যারা বোবা হন, তারা বোবা শয়তান। তাই যারা বুঝে-শুনে বোবা, তারা বেঈমান। কিন্তু আমরা এখন বোবা শয়তান হয়ে গেছি। তবে এজন্য কেবল নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সমালোচনা করলে হবে না।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ইসি’র অনেক শক্তি আছে। কিন্তু তা ব্যবহারের নজির নেই। আর তা ইসি চাইলেও পারবে না, যদি সরকার সহায়তা না করে। তাই ইসি যতোই শক্তিশালী হোক, সরকার সহায়তা না করলে ভালো নির্বাচন করতে পারবে না। তাই সরকার না চাইলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। এজন্য শুধু ইসিকে বললে হবে না, সরকারকেও বলতে হবে। সভায় তোফায়েল আহমেদ নির্বাচনে প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়ার প্রতিও জোর দেন। তিনি বলেন, বর্তমান কমিশন প্রযুক্তির সহায়তা নিতে চায় না। কিন্তু ভোটকেন্দ্রে সিসি টিভি থাকলে সহিংসতা অনিয়মকারীকে সহজে চিহ্নিত করা যাবে। এছাড়া ই-মেইল, মোবাইলে অভিযোগ দায়েরের ব্যবস্থা করলে অনেকেই নির্ভয়ে অভিযোগ দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
তিনি বলেন, ইসি ভুক্তভোগীদের ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার জন্য বলছে। কিন্তু সেখানে বিচারিক কাজে দীর্ঘসূত্রতার কারণে কেউ যান না। এবারও যাবেন না।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, এভাবে যদি চলতে থাকে তবে এদেশে রাজনীতি ও গণতন্ত্রের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। এখন রাজনীতির সঙ্গে ব্যবসার যোগাযোগ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যে আলাদা করা যায় না।
অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. এমএম আকাশ বলেন, গত তিন ধাপের ইউপি নির্বাচনে নির্বাচনে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিধিমালার কোনো বিধিই পালন করা হয়নি। বিধিতে পেশিশক্তি, সন্ত্রাসের অনুমতি না থাকলেও তা বন্ধ করতে পারেনি ইসি। ভোটকেন্দ্রে যারা প্রবেশ করতে পারেন, তাদের বাইরেও অনেক ঢুকেছেন, সেটাও বন্ধ করতে পারেনি। তাই ইসিকে বিধিমালা প্রতিপালন করতে হবে।
মূল প্রবন্ধে গভর্নেন্স অ্যাডভোকেসি ফোরামের সমন্বয়ক মহসিন আলী বলেন, চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নানা অনিয়ম ও সহিংসতার যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে তাতে আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা তথা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। সার্বিক অর্থে প্রশ্নবিদ্ধ হতে যাচ্ছে দেশের স্থানীয় শাসন ব্যবস্থাও। নির্বাচনের মাধ্যমে যে স্থানীয় সরকার পরিষদগুলো আমরা পাচ্ছি, তার উপর মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা কতটুকু থাকবে? নির্বাচনে সংঘটিত ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মূলত ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থী ও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সহিংসতার বলি হয়েছেন সাধারণ মানুষ।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম ব্রতীর চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার শারমীন মুরশিদ, ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিচালক ড. আব্দুল আলিম, স্টেপসের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার, অর্চিতার নির্বাহী পরিচালক মো. নাজমুল হাসান, ভার্কের সহ-সমন্বয়কারী আখতার হোসেন, ব্র্যাকের সিনিয়র ম্যানেজার মো. জাকির হোসেন প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন গভর্নেন্স অ্যাডভোকেসি ফোরামের সমন্বয়ক মহসিন আলী।
বক্তারা বলেন, আগের স্থানীয় নির্বাচনের তুলনার এবারের ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে। মানুষ নিহত হয়েছেন বেশি। এছাড়া বিনা প্রতিদ্বিন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের সংখ্যাও রেকর্ড সংখ্যক। যে অনিয়ম হচ্ছে, তা উদ্ধত, বেপরোয়া। কিন্তু ইসি’র দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন নেই।
তারা বলেন, ইসি, সরকার, ভোটার কেউই এ দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত ছিল না। এছাড়া দলগুলোর ভেতরের শৃঙ্খলা ভেঙে গেছে। যেজন্য বিদ্রোহী প্রার্থী বেড়ে যাওয়ায় নির্বাচনে সহিংসতা হয়েছে। তাই আগে দলগুলোর অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন