শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

জ্বালানীর মূল্যহ্রাস পুরোনো ভাড়াই কার্যকর থাকছে

প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পলাশ মাহমুদ : জ্বালানী তেলের দাম কমায় ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ’কে (বিআরটিএ) ভাড়া বিশ্লেষণের নির্দেশনা দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এজন্য দূলপাল্লায় কিলোমিটারপ্রতি ১ পয়সা ভাড়া কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিআরটিএ। কিন্তু দৈনন্দিন যাত্রীদের কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং গত আগস্ট থেকে অব্যাহত নৈরাজ্যমূলক ভাড়াই কার্যকর থাকছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে তখন থেকে কিলোমিটারপ্রতি ১০ পয়সা ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলেও বেশিরভাগ পরিবহন বর্ধিত ভাড়ার কয়েক গুণ বেশি আদায় অব্যাহত রেখেছে। তেলের দাম কমায় সড়ক পরিবহন ছাড়াও নৌ-পরিবহন মালিকরা ও রেল বিভাগই বেশি সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু এ দুই খাতে ভাড়া কমানোর বিষয়টি কোনো আলোচনায় আসেনি।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, ভাড়া নির্ধারণে ব্যয় বিশ্লেষণের সুপারিশ করেছে মন্ত্রণালয়। তবে এ হিসাবে ব্যয় উল্টো বেড়ে যাবে। তাই মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে কিছু একটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। তবে ভাড়া কতটা কমবে বা আদৌ কমবে কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না। জানা যায়, গত ১৯৮৭ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে পরিবহন ভাড়া বেড়েছে মোট ১৪ বার (৩ বার শুধুমাত্র সিটি সার্ভিসের জন্য)। ওই সময় কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ছিল ২৬ পয়সা। বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে এক টাকা ৭০ পয়সা বা প্রায় ৭ গুণ। কিন্তু এর মধ্যে এক বারও ভাড়া কমানো হয়। তবে দুই বার ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত হলেও তা কার্যকর হয়নি।
সর্বশেষ গত ২৫ তারিখ থেকে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমার প্রেক্ষিতে পরিবহন ভাড়া কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গত মঙ্গলবার বিআরটিএকে এ সম্পর্কিত এক নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। তবে এ উদ্যোগও কার্যকত দৈনন্দিন যাত্রীদের কোন কাজে আসবে না। নির্দেশনায় দূরপাল্লার রুটে ভাড়া কমানোর বিষয়ে ব্যয় বিশ্লেষণ করতে বলা হয়েছে। ফলে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে চালিত যানবাহনের বর্ধিত নৈরাজ্যমূলক ভাড়াই অব্যাহত থাকছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মাহসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ভাড়া কমানোর দাবি জানিয়েছি। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে ভাড়া তেমন কমবে না। আমাদের কথা রাখা হবে না। আমরা যাত্রীরা আসলে অসহায়। দূরপাল্লার ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ১ পয়সা কমানোর সিদ্ধান্ত হচ্ছে। কিন্তু তাকে কি লাভ হবে? মানুষ দূলপাল্লায় মাসে কতবার যাতায়াত করে। দৈনন্দিন যেসব মানুষ পরিবহনে যাতায়াত করে তাদের জন্য কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।’
অন্যদিকে ডিজেলের দাম কমায় রেলওয়ে বিভাগ ও নৌ-পরিবহন মালিকরা বেশি লাভবান হচ্ছে। কিন্তু এ দুই খাতে ভাড়া সমন্বয়ের কোন উদ্যোগ নেই। যাত্রীকল্যাণ সমিতির মতে, রেলে প্রতিদিন ১ লাখ মানুষ যাতায়াত করে। তেলের দাম কমায় দিনপ্রতি রেলওয়ের ৬লাখ টাকা অতিরিক্ত আয় থাকছে। যা বছরে প্রায় ২২ কোটি টাকা। তেলের দাম কমার প্রেক্ষিতে ভাড়া না কমানো এই পুরো টাকাই যাত্রীদের থেকে আদায় করা হচ্ছে।
আর দেশের সব নৌ-পরিবহন চলে ডিজেলে। ব্যারেলপ্রতি ডিজেলে দাম কমেছে ৩ হাজার টাকা। কিন্তু এর বিপরীতে ভাড়া কমানোর কোনো উদ্যোগ নেই এ খাতে। যাত্রীকল্যাণ সমিতির মতে, প্রতিদিন নৌ-পথে প্রায় ২ লাখ মানুষ যাতায়াত করে। ভাড়া না কমানোয় দুই লাখ মানুষ থেকেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
এদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার কারণে পেট্রোলচালিত বাসের ভাড়া কমবে সর্বোচ্চ ১৪ টাকা। আর ডিজেলের দাম ৩ টাকা কমানোয় ডিজেল চালিত পরিবহনের ভাড়ায় খুব একটা প্রভাব পড়বে না বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান। ওই নির্দেশনার কারণে শিগগিরই এ বিষয়ে বৈঠক করবে ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি। এর পর তা চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে সর্বশেষ ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে দূরপাল্লার রুটে ভাড়া বাড়ানো হয়। সে সময় কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১ টাকা ৪৫ পয়সা করা হয়। নতুন হিসাবে তা কমে দাঁড়াতে পারে ১ টাকা ৪২ পয়সা।
২০০৮ ও ২০০৯ সালে দুই দফায় ডিজেলের দাম ১১ টাকা কমানো হয়। সে সময় পরিবহনের ভাড়া ১১ পয়সা কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। সে সময় থেকেই জ্বালানির মূল্য এক টাকা হ্রাস পেলে প্রতি কিলোমিটারে যাত্রী ভাড়া এক পয়সা কমানোর প্রক্রিয়া চালু হয়। আর ২০১১ ও ২০১৩ সালে দুই দফায় ডিজেলের মূল্য ১৫ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় দূরপাল্লার ভাড়া বাড়ে ২৫ পয়সা হারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভাড়া কমানোয় এবারও ব্যয় বিশ্লেষণ বিবেচনা করা না হতে পারে। কারণ বিশ্লেষণে বিবেচিত ২২টি উপাদানের মধ্যে গত তিন বছরে জ্বালানি ছাড়া সব খাতেই ব্যয় বেড়েছে। তাই আগের পদ্ধতিতেই একটা মূল্য হ্রাসে এক পয়সা হারে ভাড়া কমানো হতে পারে। এ হিসাবে ঢাকা-কক্সবাজার ও ঢাকা-বান্দরবান রুটে সর্বোচ্চ ১৪ টাকা ভাড়া কমবে। ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রুটে ভাড়া কমবে ১৩ টাকা। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ভাড়া কমবে ৭ টাকা, ঢাকা-সিলেট রুটে ৭ টাকা, ঢাকা-রাজশাহী রুটে ৬ টাকা, ঢাকা-রংপুর রুটে ১২ টাকা। তবে এসি বাসের ভাড়া সরকার নিয়ন্ত্রণ করে না। তাই এগুলোর ভাড়া কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত ৭ বছরে পরিবহন ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ৭ বার। সর্বশেষ গতবছরের অক্টোবর মাসে গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। ওই সময় কিলোমিটারপ্রতি যাত্রীদের থেকে ১০ পয়সা করে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বেশিরভাগ পরিবহন ১০ পয়সার পরিবর্তে ৩ টাকা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত (৩০ থেকে ১০ গুণ) অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা শুরু করে, যা বর্তমানে অব্যাহত আছে।
গত অক্টোবর মাসে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটি গ্যাস চালিত গণপরিবহনের কিলোমিটার প্রতি ১০ পয়সা বাড়িয়ে ভাড়া নির্ধারণ হয় ১ টাকা ৭০ পয়সা। সর্বনিম্ন ভাড়া আগের মতোই ৭ টাকা এবং মিনিবাসের ৫ টাকা বহাল রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের পাঁচটি জেলা এবং চট্টগ্রাম শহরে বর্ধিত এ ভাড়া কার্যকর হয়। তবে সেই থেকে তেলে চালিত পরিবহনও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।
কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিলের দূরত্ব ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার। নির্ধারতি নিয়ম অনুযায়ি বর্ধিতসহ ভাড়া হয় ৮ টাকা ৫০ পয়সা। সকল পরিবহনেরই ১০ টাকা থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। মিরপুর থেকে মতিঝিলের দূরত্ব ১১ দশমিক ৮ কিলোমিটার। ১০ পয়সা হারে ভাড়া বাড়লে এ রুটে ১টাকা ১০ পয়সা ভাড়া বাড়ানোর কথা। কিন্তু নিউ ভিশনে ভাড়া বাড়ানো হয় ৫ টাকা। যা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে প্রায় ৫ গুণ। অন্যদিকে বিকল্প পরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয় ৮ টাকা বা প্রায় ৮ গুণ।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন