হাসান সোহেল : প্রতিদিনই বাড়ছে খরতাপ। একই সঙ্গে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণও। দেশের কোথাও কোথাও বইছে প্রচ- তাপপ্রবাহ। এ কারণে হাসপাতালে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এমন খরতাপ থেকে মুক্তির জন্য বৃষ্টি অত্যাবশ্যকীয় হলেও আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বৃষ্টির কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। ফলে রোদে পুড়ে সারাদেশের জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। ৩৭ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। এছাড়া বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৮৩ থেকে ৮৬ শতাংশ। তীব্র গরমে তাপদাহে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ জ্বর সর্দি-কাশির প্রকোপ। আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, দিনাজপুর, সৈয়দপুর ও চাঁদপুর অঞ্চলসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং যা আগামী ২ মে পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এর মধ্যে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা নেই। ২ মে’র পর বৃষ্টি হতে পারে।
রাজধানীর মহাখালী আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ডায়রিয়া আক্রান্ত ৬শ’ রোগী ভর্তি হচ্ছে। গত সপ্তাহ থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হাসপাতালে। আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের ডায়রিয়াল ডিজিজ ইউনিট প্রধান ডা. আজহারুল ইসলাম খান বলেন, দেশে বর্তমানে ডায়রিয়ার পিক মওসুম (বছরে দুই বার মার্চ-এপ্রিল ও আগস্ট-সেপ্টেম্বরকে ডায়রিয়ার পিক সিজন ধরা হয়) চলছে। গত দুই তিন বছরের ডায়রিয়ায় রোগীর সংখ্যানুপাতে কয়েকদিন আগে পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। তিনি জানান, গত সপ্তাহ থেকে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা হঠাৎ করে বেড়েছে। যাত্রাবাড়ী, তেজগাঁও ও বাড্ডা এলাকা থেকে বেশি রোগী আসছে। বিশেষ কোনো কারণে ওই সব এলাকা থেকে বেশি সংখ্যক রোগী আসছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই সব এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ। বিপুল সংখ্যক নিম্ন আয়ের লোক এসব এলাকায় বসবাস করে।
ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ এবং মূলত বিশুদ্ধ পানির সংকটের কারণেই ওই সব মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়া অতিরিক্ত গরমের কারণে খাবারে দ্রুত পচন ধরছে। সেই খাবার খেয়েও অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। গরমে অতিষ্ঠ মানুষ রাস্তাঘাট ও ফুটপাতে অস্বাস্থ্যকর শরবত পান করেও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও রোগ নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শাখাওয়াত হোসেন জানান, বর্তমানে দেশের ১৮টি জেলায় ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব চলছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের (বিএমডি) সহকারী পরিচালক ছানাউল হক জানান, সারা দেশে এ ধরনের পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তবে ১-২ মে’ এর মধ্যে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বৃষ্টিপাত হলে আবহাওয়া ক্রমান্বয়ে সহনশীল হবে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। গতকাল সকাল ৯ টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ময়মনসিংহ অঞ্চলসহ সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত: শুষ্ক থাকতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘন্টার আবহাওয়ায় তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সারাদেশের মতো রাজধানীতেও প্রচন্ড গরমে নগরবাসীর নাভিশ্বাস উঠেছে। গত কয়েকদিনের টানা দাবদাহে ছন্দ হারিয়েছে ঢাকাবাসীর জীবনযাত্রা। ঘরে-বাইরে স্বস্তি মিলছে না কোথাও। গরম বাতাস শরীরে লাগছে আগুনের হলকার মতো। ক্লান্তি দূর করতে কেউ পান করছেন শরবত, কেউ খাচ্ছেন শসা। তারপরও মিলছে না স্বস্তি। খরতাপে সবচেয়ে বেশি বিপাকে খেটে খাওয়া মানুষ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন