ইনকিলাব রিপোর্ট : জাতীয় তথ্যভা-ার থেকে প্রায় ৭ কোটি মানুষের আঙুলের ছাপ ও পাসপোর্টের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়ে গেছে। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ফিলিপাইনে এই চুরি ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনের এক মাস আগে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ এই তথ্য বেহাত হওয়াতে দেশটির সরকারকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী ৯ মে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তার আগে গত মার্চে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে দেশটির তথ্যভা-ারে থাকা প্রায় ৭ কোটি মানুষের আঙুলের ছাপ ও পাসপোর্টের ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে দুষ্কৃতকারীদের হাতে চলে যায়। ফিলিপাইন ইলেকশন কমিশন (দ্য ফিলিপাইনস কমিশন অন দ্য ইলেকশনস) মার্চে বিষয়টি জানতে পারে। অজ্ঞাত এক হ্যাকার দল এ ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। তাদের দাবিÑহ্যাকিংয়ের মাধ্যমে তারা ৯ মে’র নির্বাচন ব্যবস্থার দুর্বলতার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এমনকি এই ভোটে যে স্বয়ংক্রিয় ভোটিং মেশিন ব্যবহার করা হবে সেগুলোর দুর্বলতার চিত্রও তুলে ধরা।
বিবিসি’র একটি খবরে বলা হয়, ফিলিপাইনের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে দ্য ফিলিপাইনস কমিশন অন দ্য ইলেকশনসের (কমেলেক) ওয়েবসাইটটি মার্চ মাসের শেষ দিকে হ্যাক করা হয়। এ ঘটনার কিছুদিন পর ‹লুলজসেক ফিলিপাইনস› নামের অপর এক হ্যাকার দল কমেলেকের পুরো ডাটাবেজ অনলাইনে প্রকাশ করে দিয়েছিল। সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ‘ট্রেন্ড মাইক্রো’র মতে, এটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সরকারি তথ্য চুরির ঘটনা। এর আগে ২০১৫ সালের যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউএস অফিস অব পারসোনেল ম্যানেজমেন্টের’ ভা-ার থেকে দুই কোটি নাগরিকের আঙুলের ছাপ এবং সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর হ্যাক করা হয়েছিল। যেসব নাগরিকের আঙুলের ছাপ ও ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়েছে ফিলিপাইনের সেসব নাগরিক এখন জাল ভোটার এবং অন্যান্য অনেক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন বলেও একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, ফিলিপাইনে প্রতি ৬ বছর পরপর সাধারণ নির্বাচন হয়। আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটি নতুন প্রেসিডেন্ট, ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং ১৮ হাজরেরও বেশি প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন।
ফিলিপাইনের হ্যাকিংটি কত বড়?
সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ‘ট্রেন্ড মাইক্রো’র মতে এটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সরকারি তথ্য চুরির ঘটনা, যেটি ২০১৫ সালের যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউএস অফিস অব পারসোনেল ম্যানেজমেন্টের’ হ্যাকিংয়ের ঘটনার চেয়েও বড়। যুক্তরাষ্ট্রের ওই হ্যাকিংয়ে দুই কোটি নাগরিকের আঙুলের ছাপ এবং সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর হ্যাক করা হয়েছিল, যদিও এখন পর্যন্ত তথ্যগুলো অনলাইনে পাওয়া যায়নি। পানামার আইন ফার্ম মোস্যাক ফনসেকার মতে, এপ্রিলের শুরুতে সেখানে ১১ কোটির বেশি ডকুমেন্ট ফাঁস হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি অনলাইন ডেটিং সাইট ‘এশলে মেডিসন’, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট স্টোর ‘টার্গেট’ এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইলেকট্রনিক প্রতিষ্ঠান ‘সনি’-তেও এমন তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। ট্রেন্ড মাইক্রো এক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘ফিলিপাইনে প্রত্যেক নিবন্ধনকৃত ভোটারই এখন জালিয়াতিসহ বিভিন্ন ঝুঁকির আশঙ্কায় রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আরো জানিয়েছে যে, স্বাস্থ্যসেবাদাতা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোই তথ্য ফাঁসের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
ট্রেন্ড মাইক্রোর সিনিয়র কর্মকর্তা রায়ান ফ্লোরেস বিবিসিকে জানান, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এমন ঘটনা আরো ঘটবে। তাই হ্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস হওয়া প্রতিহত করতে ওই সব দেশে তথ্য নিরাপত্তা দল গঠনের মাধ্যমে ‘শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার ওপর জোড় দেন ফ্লোরেস। এটি প্রতিহত করতে ‘শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ প্রয়োজন। এ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে একটি দল থাকবে যারা খুব সংবেদনশীল তথ্যগুলো এবং ট্র্যাক করা যেতে পারে এমন সফটওয়্যার ইনস্টল করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। ফ্লোরেস আরও বলেছেন, ‘ফিলিপাইনের মতো দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান বা নেই। অসৎ উদ্দেশ্য আছে এমন যে কেউ এর মাধ্যমে ভোটের ফল পাল্টে দিতে পারে।’ সূত্র : বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন