ইনকিলাব ডেস্ক : ইরাকে জাতিগত সংঘর্ষ নতুন কোনো ঘটনা নয়। বিশেষ করে ২০০৩ সালে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সামরিক অভিযানের পর জাতিগত বিরোধ আরো বেড়েছে। ২০১৪ সালে চরম জাতিগত বিদ্বেষের একপর্যায়েই জন্ম নিয়েছিল আইএস সংকট। তারপর সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক চাপের ফসল ছিল ইরাকি যৌথ সামরিক বাহিনী। ইরাক রাষ্ট্র পুনর্গঠন ও বিচ্ছিন্নতা রোধে এই মিত্রতাকে একটি স্বপ্নপূরণ বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু কুর্দি-শিয়া সংঘর্ষই প্রমাণ করছে আইএসের কাছ থেকে উদ্ধার করা ভূমির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইরাকি সরকারের সামনে অপেক্ষা করছে নতুন চ্যালেঞ্জ।
আকাশে বিদেশি বাহিনীর বিমান এবং স্থলে ইরাকি সেনা, কুর্দি ও শিয়া মিলিশিয়া বাহিনীর যৌথ অভিযানে আইএসকে দুর্বল করলেও স্বস্তিতে নেই রাষ্ট্রটি। নতুন করে সংকটে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। নতুন এই সংকটে আইএস একেবারে অনুপস্থিত থাকলেও জাতিগত কুর্দিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গত ২৪ এপ্রিল রাজধানী বাগদাদের ১২০ মাইল উত্তরের শহর তুজ খুরমাতুতে শুরু হয় তুমুল লড়াই। ভয়ঙ্কর ওই সংঘর্ষে নিহত হন ১২ জন। বিভিন্ন জাতি ও ধর্মীয় লোকদের আবাস্থল এই শহরটি আইএসের হাত থেকে দখল করে নেয় যৌথ বাহিনী। কিন্তু তারপরও সেখানে সংঘর্ষ। আর এই সংঘর্ষের দুই বিরোধী পক্ষ হচ্ছেÑ ইরাকি কুর্দি বাহিনী ও শিয়া মিলিশিয়া। তাদের মর্টার ও মেশিনগানের শব্দে শহরজুড়ে হঠাৎ করেই ফিরে আসে পুরানো আতঙ্ক। ২০১৪ সালে তুজ খুরমাতুতে অভিযানের মাধ্যমে আইএস জঙ্গিদের শহর থেকে বের করে দেয়া হয়। তবে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী এলাকায় নিজেদের প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছিল। এমনকি শহরটি নিয়ন্ত্রণে নেয়ারও চেষ্টা চালানো হয়। ইরাকের সেনাবাহিনীর কাছে এই সমস্যা অজানা নয়। আইএসের দখল থেকে ভূমির নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের পর মিলিশিয়া বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের একে অন্যের বিরুদ্ধে অস্ত্র চালানো ঠেকাতে ইরাকি সরকার কতটুকু পারদর্শী তা দেখতেই এখন চলছে পর্যবেক্ষণ। তুজ খুরমাতুতে সংঘর্ষ শুরুর জন্য কুর্দি-শিয়া উভয়েই একে অপরকে দায়ী করছে। গত রোববার সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর কুর্দি পেশমেরগা ও শিয়া মিলিশিয়া বাহিনী উভয়ে শহরটিতে অস্ত্রশস্ত্র ও যোদ্ধা পাঠানোর মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান আরো শক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদিও সেনাবাহিনীকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি উভয় বাহিনীর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংকট লাঘব করার তাগিদ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে লেখা হয়, সবার অভিন্ন হুমকি আইএসের বিরুদ্ধে আমাদের মনোযোগ ধরে রাখা উচিত।
শহরটি দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে আরব, কুর্দি, তুর্কমেনি এবং সুন্নি-শিয়া সম্প্রদায়ের বাস। এর আগে গত নভেম্বরেও শিয়া তুর্কমেনি ও কুর্দি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পরে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে অস্ত্রবিরতি হয়। এরপর থেকে প্রতিবেশীর সঙ্গে মুখ দেখাদেখি বন্ধ করতে শহরের অনেকেই বাড়ির চারপাশে কংক্রিটের দেয়াল তুলেছেন। ২৪ এপ্রিলের সংঘর্ষে তুর্কমেনি যোদ্ধারা ইরাকি শিয়া মিলিশিয়াদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কুর্দিদের দুটি ট্যাংক ধ্বংস করেছে। ওই দিন কুর্দি বাহিনীর এক কমান্ডার কর্নেল আজাদ সেরওয়ান নিহত হন। এতে ১০ যোদ্ধা ও দুই বেসামরিক নাগরিকও নিহত হন। সংঘর্ষের পর কুর্দি কমান্ডারদের সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যে ইরাকের সবচেয়ে শক্তিশালী শিয়া বাহিনীথ বদর গোষ্ঠীর নেতা হাদি আল-আমিরি কাছের কিরকুকে এসে পৌঁছেছেন। কিরকুকের গভর্নর নাজমালদিন কারিম বলেন, উভয় পক্ষই বৈরিতা স্থগিত করতে রাজি হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে সমস্যার সমাধানের জন্য আলোচনা চলবে। তবে জাতিবিভেদ নিয়ে শঙ্কায় স্বস্তি মিলছে না শহরবাসীর মনে। ওয়াশিংটন পোস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন