শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

এক অনন্য কূটনীতিকের বিদায়

দেশের পথে বার্নিকাট

নূরুল ইসলাম : | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০১৮, ১২:০২ এএম

২০১৫ সালের বসন্তের এক বিকালে বাংলাদেশে এসেছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। প্রায় চার বছর দায়িত্ব পালন করে গতকাল শুক্রবার নিজে দেশের উদ্দেশ্যে ফিরে গেলেন। রেখে গেলেন তাঁর অনন্য কূটনীতির নজির। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল (রা.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে এমিরেটসের এক ফ্লাইটে দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তিনি। সেখান থেকে যাবেন নিউইয়র্কে। বাংলাদেশে অবস্থানকালে রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে বার্নিকাট বরাবরই ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই সময়ে তিনি গভীরভাবে চিনেছেন বাংলাদেশের মানুষ, পথঘাট ও সংস্কৃতি। মাঝে মাঝেই পরেছেন বাঙালি নারীর প্রিয় পোশাক শাড়ি। বিদায়ের আগে মঙ্গলবার সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনেও সেই সাজে দেখা গেছে তাঁকে।
বিদায়ী ওই সংবাদ সম্মেলনে বার্নিকাট বলেছিলেন, আমার দীর্ঘ ৩৭ বছরের ক্যারিয়ারে বাংলাদেশ একটা স্মরনীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে। আমি আমার কর্মের মূল্যায়নের ভার বাংলাদেশের ওপর ছেড়ে দিলাম। এখানে আমি কী করেছি তা বাংলাদেশের মানুষই বলবে। বার্নিকাট বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা যা কিছু বলেছি, আর যা কিছু করেছি, তা ভেবে দেখতে আপনাদের আর আপনাদের পাঠক-দর্শককে আহ্বান জানাব। তারপর আপনারাই বিচার করুন।
হাইপ্রোফাইল কূটনীতিক হলেও বার্নিকাট ছিলেন একেবারে সাদামাটা- খোলা মনের মানুষ। সবার সাথে কথা বলতেন, মিশতেন। তবে ব্যক্তিত্বে ছিলেন অনন্য উচ্চতায়। ব্যক্তিত্ব এবং পেশাদারিত্ব দিয়ে সবার মন জয় করেছেন। সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা যেমন করেছেন অকপটে, তেমনি সমালোচনাতেও ছাড় দেননি। সরকার ও বিরোধী মহলে তার যোগাযোগে এক ধরনের ভারসাম্য ছিল। এটাই পেশাদারিত্ব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেসব বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে যেমন গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সহিংসতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ- প্রায় সব ইস্যুতেই বার্নিকাট সরব ছিলেন। তার অনেক বক্তব্য বা প্রতিক্রিয়া সরকার পছন্দ করেনি। বিশেষ করে গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে তার মন্তব্য, কোটা আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবির প্রতি যুক্তরাষ্ট্র তথা কূটনীতিকদের সমর্থন প্রশ্নে সরকারের প্রবল আপত্তি ছিল। সেই সময় বার্নিকাটকে পররাষ্ট্র দপ্তরে ডেকে মন্ত্রী-সচিব কথাও বলেন। অনেকে প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। কিন্তু তাতে বার্নিকাট কোনো পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেননি। বরং এটাই ‘গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য’ বলে এটি এড়িয়ে যান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, বার্নিকাট বরাবরই ব্যক্তির চেয়ে দেশকে বড় করে দেখেছেন। অনেক আলোচনা-সমালোচনার পরও তিনি দুই দেশের সম্পর্কে কোনো চিড় ধরতে দেননি। এটাই তাঁর দক্ষ কূটনীতির পরিচয়।
গত মঙ্গলবার বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক বার্নিকাটের উপর হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। বলেছিলেন, ওই ঘটনার তদন্তের কি হলো? উত্তরে বার্নিকাট স্বভাবসূলভ ভঙ্গিতে বলেন, আমি কেনো, দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে। সবাই যাতে নিরাপদে জীবন যাপন করতে পারে সেটা দেখার দায়িত্ব সরকারের। তিনি বলেন, আমি বিষয়টি ওয়াশিংটনকে জানিয়েছি। তারাই এটা দেখছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের চরম সংকট রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের একনিষ্ঠ সমর্থন আদায়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন বার্নিকাট। মার্কিন কূটনীতিক হিসেবে বিভিন্ন দেশে কাজ করেছেন বার্নিকাট। বাংলাদেশেই তাঁর শেষ কূটনৈতিক অ্যাসাইনমেন্ট। ঢাকা থেকে ফিরেই তিনি অবসরে যাবেন।
রাষ্ট্রদূত হিসেবে বার্নিকাটের মনোনয়ন দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। সফলভাবে তিনি মিশন শেষ করতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রামের আমলে। প্রশাসনিক কাঠামোতে পরিবর্তন হলেও তাঁর দায়িত্ব পালনে কোনো তারতম্য হয়নি। পেশাগত জীবনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে বিভিন্ন পদে দায়িত্বপালনকারী বার্নিকাট বাংলাদেশে আসার আগে ২০১২ সাল থেকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবসম্পদ বিভাগের ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর আগে ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি সেনেগাল ও গিনি-বিসাউয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সিনিয়র এই কূটনীতিক তার কাজের স্বীকৃতিও পেয়েছেন। সর্বশেষ তার অর্জন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সর্বোচ্চ সম্মাননা। কয়েক দিন আগেই ঢাকায় এটি গ্রহণ করেন তিনি। #

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Heron OR Rashid ৩ নভেম্বর, ২০১৮, ১১:২০ এএম says : 0
Miss you Marsha Bernicat
Total Reply(0)
Mohammed Shah Alam Khan ৪ নভেম্বর, ২০১৮, ৭:১১ পিএম says : 0
আমার এই লিখাটা মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট পড়বেন কিনা জানিনা তবে আমি ওনার উদ্দেশ্যেই এই লিখাটা লিখছি। বিদায়ী ওই সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেছিলেন, ‘আমার দীর্ঘ ৩৭ বছরের ক্যারিয়ারে বাংলাদেশ একটা স্মরনীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে। আমি আমার কর্মের মূল্যায়নের ভার বাংলাদেশের ওপর ছেড়ে দিলাম। এখানে আমি কী করেছি তা বাংলাদেশের মানুষই বলবে। বার্নিকাট বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা যা কিছু বলেছি, আর যা কিছু করেছি, তা ভেবে দেখতে আপনাদের আর আপনাদের পাঠক-দর্শককে আহ্বান জানাব। তারপর আপনারাই বিচার করুন।‘ আমরা মার্শা বার্নিকাটের এই আহ্বানে সড়া দেয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি তাই আমি আমার সাধ্যানুযায়ি কয়টি কথা ওনার উদ্দেশ্য দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার পাঠক হিসাবে বলছি। প্রতিবেদক নুরুল ইসলাম মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটকে নিয়ে যা লিখেছেন আমার মনে হয় এরচেয়েও অনেক উচ্চ স্তরের মানে, আমাদের মতে বিশ্ব বিখ্যাত একজন কূটনীতিবিদ ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট আর এটাই ছিল তার যোগ্য পাওনা। আমি ওনাকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আমার সহযোদ্ধা ও আমি আমাদের সংগঠন ‘কানাডা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ সোসাইটির’ পক্ষথেকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। আমি এটা বলতে চাই যে, আমরা আজ একজন প্রকৃত বন্ধুকে বিদায় দিয়ে মর্মাহত। আমি আমার জীবনে এযাবত ওনারমত একজন মার্কিন রাষ্ট্রদূত দেখিনি। তবে আমার ৩১ বছর কানাডায় প্রবাসী হিসাবে থাকার কারনে হয়তো কেহ আমার নজর আন্দাজ হতেও পারেন কিন্তু আমি ইনকিলাব পত্রিকা ইন্টারনেটে আসার পর আমি বার্নিকাটকেই ব্যাতিক্রম পেয়েছি। তাই তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়াটা আমাদের জন্যে দুঃখজনক। তারপরও রবিন্দ্রনাথের সেই কবিতার লাইন, ‘যেতে নাহি দিব, তবু যেতে দিতে হয়’ তেমনি আমরা বার্নিকাটের বিদায়কে মেনে নিয়েছি। আল্লাহ্‌ ওনাকে দীর্ঘজীবি ও সুসাস্থ দান করুন। আমিন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন