আগামী কাল ৪ নভেম্বর ৪৭তম সংবিধান দিবস। ১৯৭২ সালের এই দিনে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত হয়। একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস থেকে সংবিধান কার্যকর হয়। দীর্ঘ ৪৭ বছরে এ পর্যন্ত সংবিধান সংশোধন হয়েছে ১৬ বার।
সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালের ১১ এপ্রিল ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ৪ নভেম্বর তা গণপরিষদে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয়। এজন্য ৪ নভেম্বর সংবিধান দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
চার মূল নীতির ওপর ভিত্তি করে বাহাত্তরের সংবিধান হয়েছিল, পরবর্তী কোনো সরকারই তার চর্চা করেনি বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা। সংবিধানকে শুধু আইনজীবী আর সংসদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে এটি সম্পর্কে জানতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ তাদের।
সংবিধান একটি রাষ্ট্রেরসর্বোচ্চ আইন। কোনো শাসনব্যবস্থার মূলগ্রন্থ সংবিধান, যাতে স্বায়ত্তশাসিত কোনো রাজনৈতিক সত্তার কর্তব্য নির্ধারণের মৌলিক নিয়ম ও সূত্রগুলো লিপিবদ্ধ থাকে। বাংলাদেশের সংবিধানে সংশোধনীর মধ্যে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, ত্রয়োদশ ও ষোড়শ এই পাঁচটির বৈধতা বিষয়ে আপত্তি উত্থাপনপূর্বক মামলা করা হলে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ওই পাঁচটি সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেন।
একই ভাবে স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে সামরিক শাসন আমলে জারি করা সব আদেশ, আইন ও নির্দেশকে বৈধতা দেওয়ার পাশাপাশি আদলতে এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন না করার বিধান করা হয়। আর এরশাদের আমলেই অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে করা হয় রাষ্ট্রধর্ম। অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার বাইরে বরিশাল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লরা, যশোর, রংপুর ও সিলেটে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ছয়টি স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে অবশ্য আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম, ত্রয়োদশ ও ষোড়ষ সংশোধনী বাতিল করে উচ্চ আদালত। ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে মেয়াদ অবসান বা মেয়াদ অবসান ছাড়া অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনার জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। আর ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক অপসারণে সংসদীয় অভিশংসন প্রথার প্রবর্তন করা হয়।
কমিটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন (ঢাকা-৯, জাতীয় পরিষদ), সদস্যরা হলেন- তাজউদ্দীন আহমদ (ঢাকা-৫, জাতীয় পরিষদ), সৈয়দ নজরুল ইসলাম (ময়মনসিংহ-১৭, জাতীয় পরিষদ), এ এইচ এম কামারুজ্জামান (রাজশাহী-৬, জাতীয় পরিষদ), এম আবদুর রহিম (দিনাজপুর-৭, প্রাদেশিক পরিষদ), এম আমীর-উল ইসলাম (কুষ্টিয়া-১, জাতীয় পরিষদ), ক্ষিতীশ চন্দ্র (বাকেরগঞ্জ-১৫, প্রাদেশিক পরিষদ), আবদুল মমিন তালুকদার (পাবনা-৩, জাতীয় পরিষদ), মো. লুৎফর রহমান (রংপুর-৪, জাতীয় পরিষদ), আবু সাইয়িদ (পাবনা-৫, জাতীয় পরিষদ), মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম মনজুর (বাকেরগঞ্জ-৩, জাতীয় পরিষদ), আবদুল মুনতাকীম চৌধুরী (সিলেট-৫, জাতীয় পরিষদ), সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত (সিলেট-২, প্রাদেশিক পরিষদ), খন্দকার মোশতাক আহমেদ (কুমিল্লা-৮, জাতীয় পরিষদ), আবদুর রউফ (রংপুর-১১, ডোমার, জাতীয় পরিষদ), মোহাম্মদ বায়তুল্লাহ (রাজশাহী-৩, জাতীয় পরিষদ), বাদল রশীদ, বার অ্যাট ল, খন্দকার আবদুল হাফিজ (যশোর-৭, জাতীয় পরিষদ), শওকত আলী খান (টাঙ্গাইল-২, জাতীয় পরিষদ), মো. হুমায়ন খালিদ খালিদ, আছাদুজ্জামান খান (যশোর-১০, প্রাদেশিক পরিষদ), এ কে মোশাররফ হোসেন আখন্দ (ময়মনসিংহ-৬, জাতীয় পরিষদ), আবদুল মমিন, শামসুদ্দিন মোল্লা (ফরিদপুর-৪, জাতীয় পরিষদ), শেখ আবদুর রহমান (খুলনা-২, প্রাদেশিক পরিষদ), ফকির সাহাব উদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক খোরশেদ আলম (কুমিল্লা-৫, জাতীয় পরিষদ), সিরাজুল হক (কুমিল্লা-৪, জাতীয় পরিষদ), দেওয়ান আবু আব্বাছ (কুমিল্লা-৫, জাতীয় পরিষদ), হাফেজ হাবিবুর রহমান (কুমিল্লা-১২, জাতীয় পরিষদ), আবদুর রশিদ, নুরুল ইসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৬, জাতীয় পরিষদ), মোহাম্মদ খালেদ (চট্টগ্রাম-৫, জাতীয় পরিষদ) ও বেগম রাজিয়া বানু (নারী আসন, জাতীয় পরিষদ)। কমিটি ভারত ও যুক্তরাজ্যের সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করেন।
সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম বলেন, ৭২ এ প্রণীত সংবিধান ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বহিঃপ্রকাশ। এই সংবিধান সংশোধনের কোনো প্রয়োজন না থাকলেও ক্ষমতার লোভেই এই সংশোধনগুলো করা হয়েছিল। শুধু দিবস পালন করলেই হবে না সংবিধানে জনগণের কী কী অধিকার রয়েছে সে সম্পর্কে তাদের ওয়াকিবহাল করতে এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন