বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম আর নেই। গতকাল (রোববার) বিকাল ৫টা ৫ মিনিটে অ্যপোলো হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহির রাজিউন। দীর্ঘদিন ধরে দুরারোগ্য ব্যাধী ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে এ্যাপেলো হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার ছেলে ও বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ ইসলাম অমিত জানান, আব্বু আর নেই। মৃত্যুকালে প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের বয়স হয়েছিলো ৭৩ বছর। তরিকুল ইসলামের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৬ নভেম্বর যশোরে। রাজনীতিতে হাতেখড়ি ছাত্রজীবনেই। যশোর এমএম কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। কলেজের শহীদ মিনার জরাজীর্ণ হওয়ায় ১৯৬২ সালে সহপাঠীদের শহীদ মিনার তৈরি করে পাকিস্তান সামরিক সরকারের রোষানলে পড়েন, গ্রেফতারও হন। কারাগারে কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে পরিচয়। সেই সূত্রে দীক্ষা বাম রাজনীতিতে। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে যশোর এমএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের জন্য রাজবন্দি হিসেবে যশোর ও রাজশাহীতে কারাভোগ করেন দীর্ঘ ৯ মাস। ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ায় গ্রেফতার হন।
১৯৭০ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন তরিকুল। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ন্যাপ থেকে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) হয়ে পরে বিএনপিতে যোগ দেন বরেণ্য এ রাজনীতিক। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির ৭৬ সদস্যের প্রথম আহ্য়বাক কমিটির অন্যতম সদস্য তরিকুল ইসলাম। সেই সঙ্গে বিএনপির যশোর জেলা আহ্য়বাকের দায়িত্ব পান।
চার দলীয় জোট সরকারের তথ্য ও পরিবেশ মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম যশোর সদর আসন থেকে তিনি চার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারেও তিনি প্রথমে সমাজ কল্যাণ এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন। যশোর পৌর সভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন তরিকুল ইসলাম। ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান বিএনপির প্রতিষ্ঠার পর বিএনপিতে যোগ দেয়ার পর তিনি দলের যুগ্ম মহাসচিব, সহসভাপতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ২০০৯ সালে পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তরিকুল ইসলাম দলের সর্বোচ্চ ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হন। আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত তরিকুল ইসলাম দলের বিভিন্ন সময়ের দুর্দিনে নেতৃত্বে পাশে থেকে সহযোগিতা করেছে বলে তৃণমূলে নেতা-কর্মীদের কাছে তিনি ব্যাপক শ্রদ্বেয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন তরিকুল ইসলাম। মৃত্যুকালে তরিকুল ইসলাম স্ত্রী ও দুই ছেলে রেখে গেছেন।
দলের প্রবীণ এই নেতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটি।
বর্ষিয়ান নেতা তরিকুল ইসলামের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরপরই নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। খবর পেয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বসুন্ধরা এ্যাপেলো হাসপাতালে ছুটে যান। সেখানে তিনি মরহুম নেতার স্ত্রী প্রফেসর নার্গিস ইসলাম ও তার ছেলে সুমিত ও অমিতের সাথে কথা বলেন।
হাসপাতালের সামনে নেতাকর্মীরা কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে। অনেকে গুমড়ে গুমড়ে কাঁদতে থাকেন। সেখানে মর্মস্পর্শী অবস্থার সৃষ্টি হয়। এসময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খানসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের জানাজা আজ সোমবার সকাল ১০ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে, এরপর সোয়া ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৪টায় যশোর ঈদগাঁ মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে তরিকুল ইসলামের লাশ। এদিকে বিএনপির এই নেতার মৃত্যুতে আজ ঢাকাসহ সারাদেশে শোক দিবস পালন করবে দলটি। শোক দিবসে দেশব্যাপী বিএনপির কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও নেতাকর্মীরর বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করবে বলেও জানান তিনি।
বর্ষিয়ান এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা তরিকুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী ও মহাসচিব আবু সৈয়দ, ন্যাপ-ভাসানীর চেয়ারম্যান এড. মোঃ আজহারুল ইসলাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ।
তরিকুল ইসলামের লাশের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মির্জা ফখরুল
নিষ্প্রাণ তরিকুল ইসলামের লাশের সামনে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল (রোববার) সন্ধ্যায় বসুন্ধরা হাসপাতালে এই দৃশ্য দেখা যায়। বিকাল ৫টা ৫মিনিটে অ্যপোলো হাসপাতালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। দীর্ঘদিন ধরে দুরারোগ্য ব্যাধী ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে এ্যাপেলো হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বর্ষিয়ান নেতা তরিকুল ইসলামের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরপরই নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। খবর পেয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বসুন্ধরা এ্যাপেলো হাসপাতালে ছুটে যান। সেখানে তিনি মরহুম নেতার স্ত্রী প্রফেসর নার্গিস ইসলাম ও তার ছেলে সুমিত ও অমিতের সাথে কথা বলেন। হাসপাতালের সামনে নেতাকর্মীরা কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে। অনেকে গুমড়ে গুমড়ে কাঁদতে থাকেন। সেখানে মর্মস্পর্শী অবস্থার সৃষ্টি হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কাঁদতে কাঁদতে বলেন, তরিকুল ভাই এভাবে চলে যাবেন আমি মেনে নিতে পারছি না। আমি কোনোভাবে বিশ্বাস করতে পারছি না, ভাই নেই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার অবদান এবং তিনি ছিলেন জাতীয়তা দর্শনের আপাদমস্তক একজন নেতা। এই বলে তিনি কাঁদতে থাকেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, তরিকুল ভাই আমাদের নেতা ছিলেন। ৫০ বছর এক সাথে আমাদের সম্পর্ক। মজলুম জননেতা তরিকুল ভাই ছিলেন আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ ছিলেন। জীবনের প্রথম থেকে রাজনীতি, শেষও রাজনীতি। এই রাজনীতি ছিলো দেশের মানুষের জন্য, দেশের জন্য। জনগণের আদালতে তিনি পরীক্ষা দিয়ে গেছেন, রাজনীতি বিচ্ছিন্ন তরিকুল ইসলাম কেউ নন। তরিকুল ইসলামই আমাদের আদর্শ। এ সময়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান, প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খানসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। #
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন