বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

থামছে না সহিংসতা

প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আজিবুল হক পার্থ : চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের মাঠ ধারাবাহিকভাবে উত্তপ্ত থাকছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৬৫ জন। আহত হয়েছে অন্তত ৫ হাজার প্রার্থী-সমর্থক। সহিংসতা বন্ধে কার্যকর কোন উদ্যোগ নিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সাথে দুই দফা মিটিং করেও কোন লাভ হয়নি। উপরন্তু ইসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেই উঠছে গুরুত্বর অভিযোগ। বিশেষজ্ঞরা এরই মধ্যে নির্বাচনকে গুলিবিদ্ধ নির্বাচন হিসাবে আখ্যা দিয়ে ভয়াবহতা বুঝিয়েছেন। এতো সহিংসতার মধ্যে ইসি ছাড় না দেওয়ার হুঙ্কার ছাড়ছে। চলমান ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা থামছেই না। বিগত ৩ ধাপে হয়ে নির্বাচনের ফলাফলের প্রেক্ষিত এবং চতুর্থ ধাপের ভোটের আগ মুহূর্তে বাড়ছে সহিংসতা। এছাড়া ৫ম ও ৬ষ্ঠ ধাপের মনোনয়নপত্র বিতরণ ও জমা নিয়ে চলছে সহিংসতা। এসব সহিংসতায় প্রায় প্রতিদিনই প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নে বাসায় ঢুকে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
গতকালও পঞ্চম দফার মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমায় বাধা দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র ছিড়ে ফেলে মারপিট ও আটকে রেখে প্রাণনাশসহ বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছাড়া অন্য কেউ এই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না বলে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন এই সকল কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িতরা। এ সকল ঘটনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সচিব, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিতভাবে পৃথক অভিযোগ করেছেন জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এসএ জিন্নাহ কবীর ও ভুক্তভোগী দুই প্রার্থী।
চলামান ইউপি ভোটে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর প্রচারণা বাধা, হামলা, মামলা দিয়ে প্রচারণা থেকে দূরে রাখা, মাইক ও অফিস ভাংচুরের ঘটনা নিত্যদিনের। নির্বাচনী সহিংসতার জেরে প্রার্থীর আত্মীয় স্বজনের বাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনাও ঘটেছে শতাধিক। হামলা-পাল্টা হামলায় ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে নির্বাচনী সহিংসতা। এতো কিছুর পরেও প্রতিকারমূলক কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি ইসি।
ইসি নির্বাচন নিয়ে শুধু বৈঠকের পর বৈঠক করেও কোন কুল করতে পারেনি। নিয়ন্ত্রণে আসেনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। কমছে না নির্বাচনী সহিংসতা। ইসি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিলেও তার কোন প্রভাব মাঠে পড়েনি।
উপরন্তু কমিশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেই আসছে গুরুত্বর অভিযোগ। কেন্দ্রের দেওয়া ফল পাল্টিয়ে ফেলা, উপজেলায় নিয়ে ভিন্ন প্রার্থীকে ঘোষণা, সব প্রার্থীর এজেন্ট ছাড়াই বাক্স খোলাসহ নানা অভিযোগ ইসির মাঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও মনোনয়নপত্র জমায় সহযোগিতা না করা, তুচ্ছ কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করার অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
কমিশনে গত দেড় মাসে হাজারো অভিযোগ জমা হয়েছে। তবে অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে সাড়া পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী প্রার্থীরা। ইসিতে অভিযোগ নিয়ে আসলে ইসি কর্মকর্তারা বলছে, নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর কমিশনের কিছু করার নেই। এসব বিষয়ে প্রতিকার পেতে হলে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে।
যদিও নির্বাচন পরিচালনাবিধির ৯০ ধারায় বলা আছে, সন্তোষজনক মনে না হলে কমিশন নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে নির্বাচন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিতে পারে। ফলাফল বাতিলের ক্ষমতাও দেওয়া আছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে কমিশন ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের প্রতিকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত করছে।
এদিকে চলমান পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝাতে ইউপি ভোটকে গুলিবিদ্ধ হিসাবে আখ্যা দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচনে এ পর্যন্ত প্রাণনাশের হাফ সেঞ্চুরি হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় চার হাজার মানুষ। তাই এ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধই নয়, গুলিবিদ্ধও। এছাড়া নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ওয়ান অ্যান্ড হাফ।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ইসি’র অনেক শক্তি আছে। কিন্তু তা ব্যবহারের নজির নেই। আর তা ইসি চাইলেও পারবে না, যদি সরকার সহায়তা না করে। তাই ইসি যতোই শক্তিশালী হোক, সরকার সহায়তা না করলে ভালো নির্বাচন করতে পারবে না। তাই সরকার না চাইলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। এজন্য শুধু ইসিকে বললে হবে না, সরকারকেও বলতে হবে।
এদিকে চলমান লাগাতার সহিংসতা ও প্রাণহানির মধ্যে অব্যাহত রয়েছে ইসির গর্জন। গতকাল নারায়নগঞ্জে এক মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী বলেন, কোন অবস্থাতেই নির্বাচনের অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। অতীতের নির্বাচনগুলো দুঃখজনকভাবে কিছু  গোলযোগ হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার্থে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি চালিয়েছে। কিছু মানুষও মারা গেছে। আর যাতে কোন রকম সমস্যা না হয় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলকে সেই নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, কোন প্রার্থী অভিযোগ করলে সেইগুলো আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। নিরপেক্ষতা বজায় রেখে প্রতিটি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি কোন দলীয় ব্যক্তিকে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব যাতে না দেয় সেই নির্দেশ প্রদান করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন