মো. শামসুল আলম খান : প্রায় এক যুগ পর অনুষ্ঠিত হলো ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। দলীয় নেতাকর্মীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন সম্মেলনস্থল ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠ থেকেই ঘোষণা করা হবে এ দু’ইউনিটের কমিটি। কিন্তু সবাইকে অবাক করে ঢাকা থেকে এ দু’কমিটি শিগগির ঘোষণা করা হবে বলে সম্মেলনে ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
এদিকে, এ সম্মেলনের পুরোটাজুড়েই ছিল চরম বিশৃঙ্খলা-হট্টগোল। গোটা সম্মেলনে নিদারুণ উপেক্ষিত ছিলেন ময়মনসিংহের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা। কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই সাংবাদিকদের টেবিল ভাঙচুর করেন ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেলের লোকজন।
এ ঘটনায় চরমভাবে ক্ষুব্ধ স্থানীয় সাংবাদিকরা। অন্যদিকে, সম্মেলনে বিশাল শোডাউন নিয়ে আসার সময় নগরীর স্টেশন রোড এলাকায় ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু’র মিছিলের ওপর হামলা চালায় স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জন আহত হন।
জানা যায়, বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সার্কিট হাউজ মাঠে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। পরে তিনি দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
অবহেলিত সাংবাদিকরা, ভাঙচুর হলো টেবিল
প্রায় সাড়ে ৫২ হাজার বর্গফিটের বিশাল প্যান্ডেলে লাগানো হয়েছিল প্রায় আড়াই শতাধিক সিলিং ফ্যান। কিন্তু দু’খানা টেবিল আর ১০ থেকে ১৫টি চেয়ার সাংবাদিকদের জন্য রাখা হলেও তার ওপরে ছিল না কোনো ফ্যান। গরমে দরদরিয়ে ঘেমেছেন সম্মেলন কভার করতে আসা সাংবাদিকরা। সাংবাদিকদের প্রতি রীতিমতো অবহেলা করা হয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই।
ঘর্মাক্ত শরীরে সাংবাদিকরা বসে যখন কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য শুনছেন ঠিক তখনই ঘটলো বিপত্তি। ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেলের একটি শোডাউন মঞ্চের পেছন দিয়ে এসে জোরপূর্বক মঞ্চের প্রবেশমুখে এসে জড়ো হয়। এ সময় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দিলে তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে মিছিলটি অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়ে। এ সময় উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা মঞ্চের সামনে দিয়ে গিয়ে সাংবাদিকদের বসার একটি টেবিল ধাক্কা দিয়ে ভাঙচুর করে চলে যায়। পুরো ঘটনার সময় নীরব দর্শকের মতো ভূমিকা পালন করেন স্থানীয় এমপি ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল। এ এমপি ও তার লোকজনের এহেন কা-ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাংবাদিকরা। এ ঘটনার পর অনেক সাংবাদিক অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।
মেয়রের শোডাউনে সন্ত্রাসী হামলা
নগরীর স্টেশন রোড এলাকায় ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু’র শোডাউনে হামলা চালিয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। এ সময় পুলিশ মেয়রের মিছিলকে লক্ষ্য করে ৬ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
এ সময় পৌর কাউন্সিলর ফারুক হাসান, মাসুদ, সিরাজসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন।
পরে মেয়র টিটু মিছিলের সামনে গিয়ে তার সমর্থকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়। ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরাই মিছিলের উপর কোনো কারণ ছাড়াই হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে আহত করে। তিনি হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এক ঘণ্টা মূলতবি অতঃপর ঢাকা থেকে কমিটি
শনিবার বিকেল সোয়া ৩ টার দিকে হঠাৎ সম্মেলন মঞ্চে উঠেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। পরে এক ঘন্টার জন্য তিনি ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন মুলতবি ঘোষণা করেন। হঠাৎ কেন এবং কী কারণে ময়মনসিংহের সম্মেলন এক ঘন্টার জন্য মুলতবি করলেন এ নিয়ে প্রশ্ন উঠে দলটির নেতা-কর্মীদের মাঝে।
পরে নির্ধারিত সময়ে আবারো মঞ্চে এসে তিনি জটিলতার কারণে কমিটি ঘোষণা করতে পারছেন না বলে জানান। এ সময় সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হবে। অতি স্বত্ত্বর সব জটিলতা কাটানোর পর এ দু’কমিটি ঘোষণা করা হবে।’
এ সময় সৈয়দ আশরাফ ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।
ভ্যাপসা গরমে আ’লীগ কর্মীর মৃত্যু
সম্মেলন স্থলে আসা ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে আগত ভ্যাপসা গরমে কালা মিয়া (৫৫) নামের এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। বেলা সোয়া তিনটার দিকে সার্কিট হাউজ মাঠে এ ঘটনা ঘটে। তিনি উপজেলার সালটিয়া ইউনিয়নের রৌহা গ্রামের বাসিন্দা।
গফরগাঁওয়ের সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল জানান, ষ্টেশন রোডের সংঘর্ষের সময় তিনি দৌড়ে হাঁপিয়ে উঠেন। পরে সার্কিট হাউজে মিছিলে আসার সময় তার মৃত্যু হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন