পাঁচ
যেমন: ইয়াহুদী ধর্মে সুদকে হারাম করা হয়, “সিফরুল খুরুজের ২২ তম অধ্যায়ের ২৪ তম স্তবক; সিফরুল আহবারের ২৫ তম অধ্যায়ের ৩৫ তম স্তবক; সিফর তাছনীয়ার ২৩ তম অধ্যায়ের ১৯ তম স্তবক; সিফরুর আমছালের ২৮ তম অধ্যায়ের ৮ম স্তবক। ড. মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ আবূ সাহেবাহ, হুলূল লি মুশকিলাতুর রিবা, আল-কাহেরা : মাকতাবাতুস সুন্নাহ, তা.বি., পৃ. ২৬৪” যা আল-কুরআনের বর্ণনা থেকে জানা যায়।
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতিও আল্লাহ্ একই বিধান দিয়েছিলেন যেমনটি দিয়েছিলেন ইয়াহুদীদের প্রতি। এ প্রসঙ্গে ইঞ্জিল শরীফে বলা হয়েছে: ‘‘যাহারা তোমাদের মঙ্গল করে, তোমরা যদি তাহাদেরই মঙ্গল করিতে থাক, তবে তাহাতে প্রশংসার কি আছে? খারাপ লোকেরাও তো তাহা করিয়া থাকে। যাহাদের নিকট হইতে তোমরা ফিরিয়া পাইবার আশা কর, যদি তাহাদেরই টাকা ধার দাও তবে তাহাতে প্রশংসার কি আছে? ফিরিয়া পাইবার আশা কর, যদি তাহাদেরই টাকা ধার দাও তবে তাহাতে প্রশংসার কি আছে? ফিরিয়া পাইবে বলিয়াই তো খারাপ লোকেরা খারাপ লোকদের ধার দিয়া থাকে। কিন্তু তোমরা তোমাদের শত্রুদের মহব্বত করিও এবং তাহাদের মঙ্গল করিও। কিছুই ফিরিয়া পাইবার আশা না রাখিয়া ধার দিও। তাহা হইলে তোমাদের জন্য মহাপুরুষ্কার আছে।’’ “ইঞ্জিল শরীফ : বাংলা অনুবাদ, ঢাকা : বিবিএস, ১৯৮০, অধ্যায়-৬, শ্লোক-৩৩-৩৫
শুআইব আ. এর উম্মত আইকা “আল-কুরআনে শুআইব আ. এর সম্প্রদায়কে ‘আসহাবুল আইকা’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। আব্দুল ওহহাব নাজ্জার, কাসাসুল কুরআন, পৃ. ১৮৬; ইবনুল আছীর, আল-কামিল ফীত তারিখ, তা.বি. খ. ১, পৃ. ৮৮৮; ইবনে কাছীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খ. ১, পৃ. ২২৬; মুহাম্মদ জামীল আহমাদ, আম্বিয়ায়ে কুরআন, খ. ২, পৃ. ৬২; সাবূনী, আন-নবুওয়াতুল আম্বিয়া, পৃ. ২৮২; ইব্ন ‘আসাকির, তাহযীব তারীখে দিমাশ্ক, খ. ৬, পৃ. ৩১৯” সস্প্রদায়ের জন্যও সুদ হারাম ছিল। “আল-কুরআন, ১১ : ৮৭ :”
গ্রিক সভ্যতার মত রোমান সভ্যতায়ও সুদকে প্রকৃতি বিরোধী উপার্জন ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। “ইনসাইক্লোপিডিয়া অব আমেরিকানা, ইন্টারন্যাশনাল সংস্করণ, নিউইয়ার্ক : ইউ এস ইউ আর ওআই, ১৯৭৭, খ. ২৭, পৃ. ১৭৯”
জাহেলী যুগে ও আরব কুরাইশরা সুদকে সম্পদ অর্জনের অনিষ্টকর পদ্ধতি হিসেবে গণ্য করতো। দেখা যায় রসূল স.-এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পাঁচ বছর আগে যখন কাবা সংস্কার করা হচ্ছিল তখন আবূ ওয়াহাব সকলকে এ কাজে সুদের অর্থ ব্যবহার করতে নিষেধ করেছিল। “ইবেন হিশাম, আস-সীরাতুন্নাববীয়্যাহ, আল-কাহেরা : মাকতাবাতুল কুল্লীয়্যাতুল আযহারিয়্যাহ, ১৯৭৪, খ. ১, পৃ. ১৭৯”
জাহিলী যুগে কাফির, ইয়াহুদী এবং মুশরিকরা সুদকে ব্যবসা মনে করতো, অথচ ব্যবসা ও সুদ এক জিনিস নয়, যা পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ৭টি আয়াতের মাধ্যমে সুদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন এবং সুদের সাথে সংশ্লিষ্টদের মন্দ পরিণতি, হাশরের ময়দানে তাদের লাঞ্জনা, ভ্রষ্টতা ও কঠোর শাস্তির বাণী শুনিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন: ‘‘যারা সুদ খায়, তারা সে ব্যক্তির ন্যায় দন্ডায়মান হবে, যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে দিয়েছে। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলে, নিশ্চয় ব্যবসা তো সুদেরই অনুরূপ, অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন, আর সুদকে করেছেন হারাম। অতএব যার নিকট তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে উপদেশ এসেছে, অনন্তর সে বিরত রয়েছে তবে যা অতীত হয়েছে তা তারই এবং তার কৃতকর্ম আল্লাহর প্রতি নির্ভর। আর যারা পুনরায় সুদ গ্রহন করতে, তারা দোযখবাসী হবে। সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে।’’ “আল-কুরআন, ২ : ২৭৫”
অন্য এক আয়াতে সুদ ভক্ষণ করা থেকে বিরত থাকার কথা উল্লেখ আল্লাহ্ তাআলা বলেন: ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ ভক্ষণ করো না, আল্লাহকে ভয় কর, যেন তোমরা সুফল প্রাপ্ত হও। আর ভয় কর ঐ আগুনের যা কাফিরদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে’’। “আল-কুরআন, ২ : ২৭৯”
সুদ খাওয়া আল্লাহর সাথে যুদ্ধ করার নামান্তর। পবিত্র কুরআনে মোট ৭টি আয়াত, আর ৪০টিরও অধিক হাদীস এবং ইজমা দ্বারা সুদ হারাম প্রমাণিত। সুদের অবৈধতা এবং সুদের সাথে সংশ্লিষ্টদের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কিত হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
আবূ হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ স. বলেছেন: ‘‘তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় হতে বিরত থাক। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, যে আল্লাহর রসূল! সাতটি বিষয় কী কী? তিনি বললেন: আল্লাহর সাথে র্শিক করা, যাদু করা, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ করা, যুদ্ধ হতে পরায়ন করা এবং সতী-সাধবী মুমিন স্ত্রীগণের প্রতি অপবাদ আরোপ করা’’। “আবূ হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত : ইমাম বুখারী, সহীহ আল-বুখারী, খ. ৯, পৃ. ৩১৫, হাদীস নং-২৫৬; ইমাম মুসলিম, সহীহ মুসলিম, খ. ১, পৃ. ২৪৪, হাদীস নং-১২৯, ইমাম আবূ দাউদ, আস-সুনান, খ. ৮, পৃ. ৬৮, হাদীস নং-২৪৯০।”
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন