শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভার বৈঠকে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সময় এ প্রস্তাব দেন তিনি। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সূত্র জানায়, বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ৬০ ভাগ, ৭০ ভাগ, ১০০ ভাগ, দেড়শ’ ভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা তো সচ্ছল। তারা খেতাবের ভাতা পান, সাধারণ ভাতা পান, শহীদের ভাতা পান, অনেকের বাড়ি-ঘর করে দেওয়া হয়েছে। তাদের কোনো সমস্যা নেই, তারা তো স্বয়ংসম্পূর্ণ। ভাতা বেশি করে বাড়ানো দরকার সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের।
সূত্র জানায়, এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা অনেক কষ্টে আছেন। কারো কারো বাড়ি-ঘর নেই, রিকশা চালিয়ে, শ্রম দিয়ে কেউ কেউ জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়তে পারে, কিন্তু এত কেন? ভাতা তো বেশি বাড়া উচিত সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের। এ সময় প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবটি ফেরত পাঠানোর পরামর্শ দেন এবং পরে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা সমন্বয় করে প্রস্তাব তৈরির কথা বলেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় এখন সুশৃঙ্খলভাবে চলছে। আগে এই মন্ত্রণালয়ে অনেক বিশৃঙ্খলা ছিল। এখন সুশৃঙ্খলভাবে কাজ চলছে।
ড. কামালের সমালোচনা
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে একপর্যায়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইন নিয়ে আলোচনা ওঠে। এই আইনের বিরোধিতা করায় ড. কামাল হোসেনের সমালোচনা করা হয়। আলোচনাটি শুরু করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি (তোফায়েল) আইনমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ’৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় এ আইনটি তো ড. কামাল হোসেনই করেছিলেন। এখন ড. কামাল হোসেন এই আইনের বিরোধিতা করছেন কেন?
এ সময় আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, এর আগে ড. কামাল হোসেন এই ধরনের আইনের পক্ষে মত দিয়েছিলেন। আমার কাছে এর প্রমাণ আছে। তিনি (ড. কামাল) ভারতের উদাহরণ টেনে বলেছিলেন, ভারতের মতো এ ধরনের আইন আমরাও করতে পারি।
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য গত সপ্তাহে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইন-২০১৬ পাস হয়।
কোম্পানিগুলোর করবহির্ভূত রাজস্ব দ্বিগুণ হচ্ছে
দেশের প্রাইভেট ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিগুলোর নিবন্ধনসহ সব ধরনের ফিস (করবহির্ভূত রাজস্ব) প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। এই ফিস পুনর্নির্ধারণের ফলে ৭০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হবে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা। মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের তফসিল-২ অনুযায়ী এই ফিস পুনর্নির্ধারণ করা হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বিষয়টি জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের দুই নম্বর তফসিল অনুযায়ী ফিস পরিবর্তন আনা হয়েছে। আট বছর পর কোম্পানিগুলোর ফিস পুনর্নির্ধারণ করা হলো। এর আগে একবার পুনর্বিন্যাস করা হয়। আট বছর পার হয়ে গেছে। আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামো অনেক বড়, তাই রাজস্ব সংগ্রহে কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। রাজস্ব সংগ্রহজনিত বাধ্যবাধকতার কারণে ফিস বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয় মন্ত্রিসভায়। সচিব জানান, আমরা এই খাত থেকে ৭০ কোটি টাকা পাই। রাজস্ব বৃদ্ধি পেলে দেড়শ’ কোটি টাকা এ খাত থেকে আসবে।
উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শেয়ার মূলধন সম্পন্ন কোম্পানিগুলোর নামে মূলধন অনধিক ২০ হাজার টাকা হলে নিবন্ধন ফিস ছিল ৩০৭ টাকা, তা বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। প্রথম ২০ হাজার টাকার ঊর্ধ্ব থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতি ১০ হাজার বা এর অংশবিশেষের জন্য জন্য ১৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা করা হয়েছে।
মূলধন ৫০ হাজারের ঊর্ধ্বে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রতি ১০ হাজার বা এর অংশবিশেষের জন্য ৪৫ টাকা ছিল, তা বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়েছে। প্রথম ১০ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রতি ১০ হাজার বা এর অংশবিশেষের জন্য ফিস ২৪ টাকা ছিল, সেটাকে ৫০ টাকা করা হয়েছে।
একইভাবে এ আইনের অধীন অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কিছু অনুমোদন বা নিবন্ধনের জন্য লিপিবদ্ধ করতে ফিস ২০০ টাকা ছিল, তা বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করা হয়েছে। রিসিভার নিয়োগ নিবন্ধন ফিস ২০০ টাকা ছিল, তা বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করা হয়েছে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দ্বিগুণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রিপষিদ সচিব শফিউল আলম বলেন, মূলধনবিহীন কোম্পানি এবং ধারা ২৮ এর অধীন প্রদত্ত লাইসেন্সের ক্ষেত্রে সমবিধি অনুসারে কোনো কোম্পানির সদস্য সংখ্যা অনধিক ২০ জন, সে ক্ষেত্রে ফিস ৬০০ টাকা ছিল, তা বাড়িয়ে ১২০০ টাকা করা হয়েছে। সদস্য সংখ্যা ২০-এর অধিক ১০০ পর্যন্ত হলে নিবন্ধন ফিস ১৫০০ টাকা ছিল, তা বাড়িয়ে ৩০০০ টাকা করা হয়েছে। সংঘ স্মারকের জন্য ৩০০ টাকা ছিল, তা বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়েছে। আর অন্যান্য দলিলের জন্য ১০০ টাকা ছিল, তা বাড়িয়ে ২০০ টাকা করা হয়েছে। সাধারণ ক্ষেত্রে নথিপত্র পরিদর্শনের জন্য ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা এবং সত্যায়িত অনুলিপি পরিদর্শনের জন্য ১০০ টাকা ছিল, তা বাড়িয়ে ২০০ টাকা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ-কুয়েত বিনিয়োগ চুক্তির খসড়া অনুমোদন
সরকারি পর্যায়ে কুয়েতের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ যোগাযোগ বাড়াতে একটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। এই চুক্তি হলে কুয়েত পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারবে। দুই দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনে ভিসা সুবিধা পাবেন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে এলে দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর হবে।
তিনি জানান, ২০০৫ সালে এই চুক্তি প্রণয়নে কাজ শুরুর পর ২০১৫ সালে কুয়েত খসড়া দেয়। বেশ কয়েকটি সভার পরে গত ১১-১৩ এপ্রিল ঢাকায় বৈঠকে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়। ওই খসড়াতেই মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে।
শফিউল আলম বলেন, কুয়েত সরকার জিটুজি ভিত্তিতে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে কর্মসংস্থান বাড়বে। প্রযুক্তি হস্তান্তরের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ক্ষমতাও বাড়বে।
কুয়েতে ভিসা লাগবে না সরকারি কর্মকর্তাদের
বাংলাদেশের কূটনৈতিক, বিশেষ ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা কুয়েতে ভিসা অব্যাহতির সুযোগ পেতে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের একটি প্রস্তাবেও মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এ চুক্তি হলে কূটনৈতিক, বিশেষ ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা কুয়েতে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারবেন। কুয়েতের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরাও বাংলাদেশে এ সুযোগ পাবেন। বর্তমানে ১৪টি দেশের সঙ্গে কূটনীতিক, বিশেষ ও সরকারি পাসপোর্টধারীদের এই ভিসা অব্যাহতির সুবিধা চালু আছে। এছাড়া সিআইপি বা বিশেষ সংস্থার প্রতিনিধিসহ আরও কিছু ব্যক্তি ‘বিশেষ পাসপোর্ট’ ব্যবহার করেন বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।
বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, ভারত, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, চীন, চিলি, তুরস্ক, লাওস, কম্বোডিয়া, বেলারুশ, ব্রাজিল ও কম্বোডিয়ায় সঙ্গে বাংলাদেশের ভিসা অব্যাহতি চুক্তি রয়েছে। আরও ১০টি দেশের সঙ্গে একই ধরনের চুক্তি সইয়ের বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সার্ক বিদ্যুৎ ফ্রেমওয়ার্ক
সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ আমাদানি-রপ্তানির জন্য ‘ফ্রেমওয়ার্ক’ তৈরিতে একটি কাঠামো চুক্তিতে অনুসমর্থনের প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সার্ক ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট ফর এনার্জি কো-অপারেশনে (ইলেকট্রিসিটি) অনুসমর্থনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। কনসার্ন সিগনেটরি সই করলে এটা কার্যকর করব।
তিনি বলেন, ভারত থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছি, আসাম থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছি। এ জাতীয় অঞ্চলের অনেক দেশের বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত আছে। ভুটান ভারতে বিদ্যুৎ রপ্তানি করে, আমরাও সেই শেয়ারিংয়ে অন্তর্ভুক্ত হতে পারি, এজন্য এই চুক্তিটি আনা হয়েছে।
রেলওয়ে সম্পত্তি আইন
রেলের সম্পত্তি চুরি বা অবৈধ দখল ঠেকাতে আগের মতোই সাত বছরের জেল-জরিমানার বিধান রেখে নতুন ‘রেলওয়ে সম্পত্তি (অবৈধ দখল উদ্ধার) আইন, ২০১৬’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সামরিক সাশনামলে প্রণিত আইনগুলোকে বাংলায় ভাষান্তরের বাধ্যবাধকতা থাকায় ১৯৭৯ সালের এ আইনকে নতুন করে বাংলায় করা হচ্ছে।
সচিব বলেন, আগের আইনকেই বাংলায় ভাষান্তর করা হয়েছে। আইনে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তির পরিমাণও একই রাখা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
৬ এপ্রিল, ২০১৮, ৭:০৬ পিএম says : 0
সাধারন মুওিযোদ্দাদের ভাতা বাড়ানো খুবই ধরকার তারা বেশির ভাগই অসচ্ছল হাসিনা সুন্দর কথা বলেছেন
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন