শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

লাইফস্টাইল

রূপচর্চায় শাক সবজির ব্যবহার

ডা: মাও: লোকমান হেকিম | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০১৮, ৭:১৬ পিএম

আমরা সবাই জানি আল্লাহ তায়ালা এ জগতে যে সব কিছু সৃষ্টি করেছেন তা কোন না কোন ভাবে মানব জাতির উপকারে আসে। এর মধ্যে শাক সবজিতো প্রয়োজনের তাগিতে প্রতিনিয়তই ব্যবহার করে আসছি আমরা। আমরা জানি, বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন রোগের আগমন ঘটে। কিন্তু আল্লাহ এতই মেহেরবান যে, ওইসব মৌসুমী রোগ প্রতিরোধের জন্য হরেক রকম শাকসবজি ও ফলমূলও দান করেন, যাতে তার প্রিয় বান্দারা সুস্থ থাকতে পারে ওইসব শাকসবজি, ফলমূল খেয়ে। আসুন আমরা রূপচর্চায় শাক-সবিজর ব্যবহার সম্পর্কে জানি-

গাজর : সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজির মধ্যে গাজর অন্যতম । গাজর তরকারী, সালাদ, হালুয়া করে খাওয়া হয়ে থাকে। এর পাতা শাক হিসেবেও খাওয়া যায়। প্রতি একশ’ গ্রাম গাজরে রয়েছে ১২.৭ গ্রাম শ্বেতসার, ১৫ মি: গ্রাম: ভিটামিন-সি এবং ২৭ মি: গ্রাম ক্যালসিয়াম। নারীর রূপর্চচায় গাজরের রস একটি বিশেষ উপকরণ। মুখের লাবণ্য বৃদ্ধির জন্য একটি গাজর পানিতে ধুয়ে পরিচ্ছন্নতার সাথে পাটায় মিহি করে বেটে এর মধ্যে দু চা-চামচ দুধ এবং এক চা চামচ বেসন মিশিয়ে এই পেস্ট সারামুখে মেখে নিতে হবে। প্রায় ১০-১৫ মিনিটকাল অপেক্ষা করে প্রথমে হাল্কা গরম পানিতে ও পরে ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে নিয়মিত গাজরের পেস্ট মাখলে উপকার পাওয়া যায়।
মুলা : পুষ্টিবিদরা বলে থাকেন, ‘সবজির চেয়ে শাক ভাল’। সে দৃষ্টিতে মুলা শাক বেশ পুষ্টিকর। শীতের সবজির মধ্যে মুলাই বেশি উৎপাদিত হয়ে থাকে এবং মৌসুমে বেশ সস্তায় পাওয়া যায়। প্রতি একশ’ গ্রাম মুলা শাকে রয়েছে ১.৭ গ্রাম আমিষ, ২.৫ গ্রাম শ্বেতসার এবং ১৪৮ মি: গ্রাম ভিটামিন-সি। মুলা তরকারি ও সালাদ রূপে খাওয়া হয়ে থাকে । নারীর রূপচর্চায় মুলা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। রোদে চলাফেরা এবং কাজ করলে মুখে কালো ছোপ পড়তে পারে। কালো ছোপের হাত থেকে রক্ষা পেতে মুখে মুলা বাটার প্রলেপ লাগানো যায়। এজন্য কয়েক টুকরা মুলা ধুয়ে পরিস্কার পাটায় বেটে নিতে হবে। এবারে বাটা মুলা মুখে মাখতে হবে এবং আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করে প্রথমে হাল্কা গরম ও পরে ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করা হলে উপকার পাওয়া যাবে।
টমেটো : একটি পুষ্টিকর সবজি ফল । টমেটো দিয়ে স্যুপ, সজ, জ্যাম, জেলী ইত্যাদি তৈরি করা হয়ে থাকে। প্রতি একশ’ গ্রাম পাকা টমেটোতে রয়েছে ৩.৬ গ্রাম শ্বেতসার, ২৭ মি: গ্রাম ভিটামিন সি। স্বাস্থ্য রক্ষায় ও রূপচর্চায় টমেটোর ভূমিকা অনেক। ত্বক শুষ্ক অথবা কালচে হয়ে গেলে সেখানে টমেটোর রস মাখলে উপকার পাওয়া যায়। এজন্য টমেটো চাকচাক করে কেটে নিয়ে শুষ্ক এবং কালচে হয়ে যাওয়া স্থানে অর্থাৎ মুখ, হাত পায়ে ১৫-২০ মিনিট ভাল করে ঘষে নিতে হবে এবং প্রায় ১৫-২০ মিনিটকাল অপেক্ষা করে প্রথমে হাল্কা গরম এবং পরে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে। রোদে পুড়ে রঙ বিবর্ণ হলে চিন্তার কারণ নেই। এজন্য একটি পাকা টমেটো ভাল করে চটকিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। এ পেস্টের সাথে আধা কাপ পরিমাণ ঘোল মিশিয়ে ঘাড়, গলা, মুখ, হাতে মালিশ করতে হবে। এরপর ২০ মিনিট অপেক্ষা করে প্রথমে হাল্কা গরম ও পরে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। তাহলে রোদে জ্বলে যাওয়া রঙ মিলিয়ে যাবে। এছাড়া একটি পাকা টমেটোর রস বের করে তার সাথে ৪-৫ ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে মুখ, গলা, ঘাড় ও হাত পায়ে মাখলে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
বাঁধাকপি : ভাজি হিসেবে বাঁধাকপির জুড়ি নেই। এর পাতা কুচিকুচি করে কেটে শুকিয়ে বহুদিন সংরক্ষণ করা যায় এবং সেমাইয়ের মত মিষ্টান্ন তৈরি করা যায়। সালাদ হিসেবে তাজা পাতা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্রতি একশ’ গ্রাম বাঁধাকপিতে ৬০ মি:গ্রাম ভিটামিন-সি, ৪.৭ গ্রাম শ্বেতসার, ৩১ মি:গ্রাম ক্যালসিয়াম আছে। এটি শরীরের পক্ষে বিশেষ উপকারী। নারীর মুখ কোমল ও মসৃণ রাখতে বাঁধাকপির পেস্ট ব্যবহার করা যায়। এজন্য বাঁধাকপি বেটে রস বের করে পরিমাণমত রস নিয়ে তাতে আধা চা-চামচ ইস্ট, এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে ঘন পেস্ট বানিয়ে সারা মুখে মেখে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করে প্রথমে হাল্কা গরম ও পরে ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। বাঁধাকপির পেস্ট নিয়মিত ব্যবহার করলে মুখের শ্রী বৃদ্ধি পাবে।
শিম : শিম ভিটামিন-সি। ছোট ছেলেমেয়ের মাথার চুল ফেলে দেয়ার পর কেশহীন মাথায় শিম পাতার রস দিলে চুল ঘনকালো হয়ে উঠে। এটি গ্রাম বাংলার একটি সনাতন চর্চা । এছাড়া পরিমাণমত শিমের রসের সাথে সামান্য কর্পুর মিশিয়ে কটা চুলে মেখে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করে মাথা ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে নিয়মিত শিমের রস মাখলে চুলের রঙ কালো হয়ে উঠবে এবং মাথায় চুল সুন্দর দেখাবে।
লাউ : লাউ একটি উপাদেয় সবজি। শীতকালীন সবজির মধ্যে এটি একটি উৎকৃষ্ট সবজি। লাউ শরীরের জন্য যথেষ্ট উপকারী। এর ডগা, পাতা সবই খাওয়া যায়। লাউ সহজে হজম হয় এবং শরীরকে বেশ ঠান্ডা রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। লাউও নারীর রূপচর্চায়ও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ত্বকে পোড়া দাগ পড়লে লাউ-এর রস ব্যবহারে ভাল ফল পাওয়া যায়। লাউয়ে প্রতি একশ’ গ্রামে শ্বেতসার আছে ১৫ গ্রাম এবং লাউশাকে ভিটামিন সি আছে ৯০ মি: গ্রাম আর ক্যালসিয়াম রয়েছে ৮০ মি: গ্রাম । ত্বকের পোড়া দাগ নিবারণের জন্য কয়েক টুকরা লাউ পরিস্কার পাটায় বেটে রস বের করে নিয়ে দাগ স্থানে সে রস নিয়মিত মাখলে উপকার পাওয়া যায়। গায়ের ছুলি দূরীকরণে এক টুকরা লাউ থেঁতলে নিয়ে ঘষতে হবে। এভাবে নিয়মিত ঘষলে ছুলি দূর হবে। ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর করতে লাউ ব্যবহার করা হলে উপকার পাওয়া যাবে।

চিকিৎসক, কলামিষ্ট, সিলেট। ০১৭১৬২৭০১২০।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন