রূপর্চচার জন্য লেবু একটি শ্রেষ্ঠতম উপাদান। সৌন্দর্য চর্চায় লেবুর ব্যবহার আজ থেকে হয়নি। প্রাচীন মিশর এবং গ্রীস্মের রাজকুমারীরাও লেবুর সমাদর করতেন। লেবুকে তারা তাদের রূপচর্চার একটি বিশেষ উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করতেন। এজন্য চীন দেশে লেবুকে বলা হত ‘লিমংু’। অর্থাৎ মেয়েদের জন্য উপকারী। চীনের উপকথায় আছে, কোনো এক রূপসী সম্রাজ্ঞী লেবু থেকে তার রূপচর্চার উপকরণ তৈরি করতেন এবং তার সৌন্দর্যের তথ্যটি গোপন রেখেছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর ব্যাপারটি জানাজানি হয়ে গেল। আর তখন থেকে মেয়েরা রূপচর্চায় লেবু ব্যবহার করে আসছেন।
আমাদের দেশে লেবু অতি সহজেই পাওয়া যায়। সৌন্দর্য বাড়াতে লেবুর কার্যকারীতা অনেকখানি। প্রসাধন সামগ্রী হিসাবে আপনি যে মেকআপ ব্যবহার করছেন তাতে আপনার মুখে যে পরিচ্ছন্নতা বা সৌন্দর্য ফুটে ওঠে, তা সাময়িক। কিন্তু প্রাকৃতিক সামগ্রীর ব্যবহারে সৌন্দর্য হয় স্থায়ী।
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই যদি একগ্লাস কুসুম গরম পানি অর্ধেকটা পাতিলেবুর রস সামান্য মধু অথবা চিনি দিয়ে মিশিয়ে খান তাহলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। শরীরের চামড়ায় ফুটে উঠবে আভা। চোখ-মুখে বিবর্ণতা মুছে গিয়ে ত্বকের উজ্জলতা বাড়বে বহুগুণ। আপনার চামড়া যদি তৈলাক্ত হয় তাহলে দিনের মধ্যে কয়েকবার লেবুর রস পান করুন। চামড়ার তেলতেলে ভাব কয়েকদিন পরই কমে আসবে। মুখের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য এক টুকরো লেবুর রসের সাথে দু’চামচ দুধ মিশিয়ে তুলার সাহায্যে মুখে প্রলেপ লাগাবেন। পনেরো-বিশ মিনিট এই প্রলেপ রাখার পর ধুয়ে ফেলবেন। যাদের মুখে ব্রণ আছে তারা দুধ বাদ দিয়ে শুধু লেবুর রসই লাগাবেন। মনে রাখবেন মুখের ব্রণ এবং ব্রণের দাগ সরানোর জন্য লেবুর রস ত্বকে মাখা একান্তভাবেই দরকার। তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। লেবু কিংবা গাজরের রস অল্প একটু চিনির সাথে মিশিয়ে খেলে এর হাত থেকে সহজেই রেহাই পাওয়া যায়। শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের কমনীয়তা আনার জন্য লেবুর রস, গোলাপজল ও শসার রস সমপরিমাণে মিশিয়ে ঘাড়, গলা ও দেহের অন্যান্য অংশে মাখুন। পনেরো-বিশ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ডিমের সাদা অংশের সাথে অর্ধেকটা লেবুর রসও কুসুম গরম পানি পেস্টের মতো করে মিশিয়ে নিন। এই প্রলেপটি আস্তে আস্তে মাখুন। শুকিয়ে যাবার পর ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন। তেলতেলে ত্বকের পক্ষে এটি ভীষণ উপকারী। লেবুর রস ও শসার রস সমপরিমাণে মিশিয়ে নিন। ব্যস, হয়ে গেল অ্যান্ট্রিনজেন্ট লোশন তৈরি। এটি ত্বকে লাগিয়ে দেখুন। কয়েক দিনের মধ্যেই ত্বকের তেলতেলে ভাব কমে যাবে। রাতে ঘুমাতে যাবার আগে ১ চামচ দুধের সরের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ধীরে ধীরে ত্বকে মালিশ করে নিন। সকালে উঠেই তা ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের উপরে দাগগুলো উঠে যাবে। দেহ ত্বকের কোমল এবং দাগ মুক্ত রাখার জন্য লেবু একটি চমৎকার উপাদান।
ত্বকে অনেক সময় কালো দাগ দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে একটি ছোটো শসার সাথে একটি পাতিলেবুর রস ১ চামচ ব্রান্ডি ও ১ চামচ ডিমের সাদা অংশ, দু‘চামচ গোলাপজল মিশিয়ে ত্বকে ধীরে ধীরে মালিশ করবেন। কালো দাগ তো দূর হবেই, সেই সাথে ত্বক হবে আকর্ষণীয়, কোমল ও উজ্জ্বল। হাতের কনুই, হাঁটু, পায়ের গোড়ালি এসব জায়গায় বেশি ময়লা জমে। এ নিয়ে অনেকেরই দুঃশ্চিন্তার শেষ নেই। আধা টুকরো লেবু নিয়ে এই জায়গাগুলোতে ভালো করে ঘষে নিলে ময়লা উঠে গিয়ে ঝকঝকে হয়ে উঠবে। পায়ের রুক্ষভাব দূর করতে লেবুর রসের সাথে অল্প মিহি চিনি শিশিয়ে মালিশ করে নেবেন। দশ মিনিট পর হাত ধুয়ে নিন কুসুম গরম পানিতে। দেখবেন হাত-পা কেমন পেলব কোমল মসৃণ হয়ে উঠেছে।
ঘরের কাজ যেমন কাপড় কাচা, বাসনমাজা, ঘরমোছা, এসব কাজ করতে করতে কড়া পড়ে যায়। হাতের মোলায়েম ভাব নষ্ট হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে গোলাপজলের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে হাতের পাতায় মাখুন। এছাড়া হাতের রুক্ষতা দূর করার জন্য নিয়মিত টমেটো রস, লেবুর রস ও কাঁচা দুধ একসাথে মিশিয়ে গোসলের আগে পনেরো-বিশ মিনিট ত্বকে মেখে নেবেন।
মুখের মেছতা বা অন্যান্য দাগ দূর করতে স্কিনের উপর ভ্যাপার নেবার পর ১ চামচ মালতানি মাটি ও আদা চামচ ট্যালকম পাউডার গোলাপজলের সাথে মিশিয়ে সেই মিশ্রণে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন ও লেবুর রস মেশান। মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে এই মিশ্রণটি ৩/৪ দিন ব্যবহার করবেন।
অতুলনীয় সৌন্দর্যময় কেশরাজির পরিচর্যায় লেবুর প্রয়োজন সর্বাধিক। প্রতিদিন গোসলের আগে একটা লেবু চিপে রস বের করে সেই রস চুলের গোড়ায় বিলি কেটে কেটে ঘষে লাগিয়ে দিন। এতে চুলের গোড়া পরিষ্কার, শক্ত ও চুলের খুসকি দূর হয়। এ ছাড়া চায়ের পানি ছেঁেক সেই পানি একটা লেবুর রস মিশিয়ে শ্যাম্পু করার পর সেই পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেললে চুলের রুক্ষভাব কেটে চুল হবে রেশমের মতো কোমল-মসৃণ ও উজ্জ্বল।
আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন