১। অন্ডকোষ নেমে না আসাঃ অন্ডথলির মূল উপাদান অন্ডকোষ, শুক্র নালী, রক্তনালী আর কিছু তরল। গর্ভাবস্থায় প্রথম ৭-৮ মাস অন্ডকোষ পেটের মধ্যে থাকে। এরপরে এটি নামতে নামতে জন্মের আগেই অন্ডথলিতে অবস্থান নেয়। যদিও অপরিপক্ক জন্ম নেওয়া ছেলে শিশুদের প্রতি তিন জনের এক জনের (৩০%) অন্ডকোষ জন্মের আগে থলিতে নেমে নাও আসতে পারে, পরিপক্কদেরও ৩% এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। তবে তাদেরও অনেকেরই প্রথম ৩-৬ মাসের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে এটি নেমে যথাস্থানে অন্ডথলিতে এসে পড়ে। তবে এর মধ্যে (৬ মাসের মধ্যে) না নামলে স্বাভাবিক ভাবে নেমে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আবার দেখা যায় ৯০ ভাগের যেকোনো এক দিকের অন্ডকোষ নামা থাকে।
নেমে না আসা অন্ডকোষ পেটে, কুঁচকিতে, আধাআধি কুঁচকি আর থলিতে এমনকি তলপেটের ভিতরে কোনো ভাঁজেও লুকিয়ে থাকতে পারে। এটা থেকে সমস্যা গুলো তিনভাগে ভাগ করা যায়। ব্যথা, সংক্রমণ, গুঁটি হওয়া এক ধরণের সমস্যা। হরমোন জাতীয় সমস্যা থেকে এই বাচ্চাদের পরে পুরুষত্বের প্রকাশ কিংবা সন্তান তৈরিতে অক্ষমতা হতে পারে। আর আরেকটি সমস্যা হচ্ছে এখান থেকে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি।
শল্য চিকিৎসা করে যথাস্থানে অন্ডকোষ নামিয়ে আনাই মূল চিকিৎসা। ৯-১৫ মাসের মধ্যে (অনেকের মতে ৬ মাস বয়সেই) এটি করে ফেলা উচিত। অনেকসময় আলট্রাসনোগ্রাফিতে লুকিয়ে থাকা অন্ডকোষ খুঁজে না পাওয়া গেলে ল্যাপারোস্কোপি করে অন্ডকোষ খুঁজে নিতে হতে পারে।
২। অন্ডথলি ফুলে যাওয়াঃ সাধারণত অন্ডকোষ প্যাচিয়ে যাওয়া, অন্ডকোষের আগা প্যাচিয়ে যাওয়া, এপিডিডাইমিসের প্রদাহ, আঘাত, মাম্পস পরবর্তী প্রদাহ, রক্তনালীর প্রদাহ হলে তীব্র ব্যথা হয়। আবার থলিতে পানি জমা (হাইড্রোসিল), হার্নিয়া, জনন নালীর সাথে সম্পর্কিত রক্তনালী বা শুক্রাণু নামার নালীতে প্রদাহ, টিউমার, এইচএসপি অসুখে নগণ্য ব্যথা বা শুধু অস্বস্তি হতে পারে। এদের মধ্যে অন্ডকোষ প্যাচিয়ে গেলে খুব দ্রুত শল্য চিকিৎসা করা লাগতে পারে। কিছুক্ষেত্রে বিশ্রাম, এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়। হাইড্রোসিল, হার্নিয়া সমস্যাতে প্রাথমিক উন্নতি না হলে শল্যচিকিৎসা লাগতে পারে।
৩। প্রস্রাবের ছিদ্রের অবস্থানের ত্রুটিঃ স্বাভাবিকভাবে মূত্রনালি শিশ্নের মাথার মাঝামাঝি বরাবর ছিদ্রে শেষ হয়। ত্রুটিযুক্ত হলে এই ছিদ্র শিশ্নের নিচের দিকে (হাইপোস্পেডিয়াস) বা উপরের দিকে (এপিস্পেডিয়াস) এসে প্রকাশ পেতে পারে। প্রায়ই এদের সাথে অন্যান্য সমস্যা দেখা যায়। শিশ্নের আকার ছোট আর বাঁকা হয়ে নিচের দিকে টানটান সূতার (কর্ডি) মত অংশ দেখা যায়। অনেকেরই লিঙ্গ নির্ধারণে সমস্যা, মলদ্বারের সমস্যাও থাকতে পারে। দুর্লভ কিছু শিশুদের পেটের মাংসপেশি দুর্বল থেকে প্রস্রাবের থলি বা অন্যান্য পেটের অভ্যন্তরের অঙ্গ বাইরে বের হয়ে থাকতে পারে। অন্ডকোষ থলিতে না থেকে পেটে রয়ে গেছে কিনা সেটা দেখতে হয় ভালো করে।
শল্যচিকিৎসা করে এই ত্রুটি সারানো হয়। মনে রাখতে হবে, এসবক্ষেত্রে খৎনা করা যাবে না। শরীরের অন্য কোথাও সমস্যা রয়ে গেছে কিনা সেটা বের করা চিকিৎসকের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেয়।
৪। কর্ডিঃ হাইপোস্পেডিয়াস ছাড়াও কর্ডি হতে পারে। এসব শিশ্নের মাথার আলগা চামড়া ‘হুড’হয়ে ফুলে থাকে। অনেকসময় মূত্রনালি শল্য চিকিৎসা করে সঠিক আকারে আনতে হয়।
৫। ফাইমোসিস এবং প্যরাফাইমোসিসঃ শিশ্নের আগার চামড়া অনেক সময় এমনভাবে থেকে যায় যে পেশাবের সময় ছিদ্র ঠিকমতো ফুটে না। ছিদ্র প্রায় বন্ধ বা চামড়া পিছনে টানা না গেলে ফাইমোসিস বলা হয়। জন্মের সময় স্বাভাবিক ভাবেই ফাইমোসিস থাকতে পারে। খৎনা না করলেও ৮০ ভাগ বাচ্চার এই সমস্যা ৩ বছরের মধ্যে ঠিক হতে পারে। হাইড্রোকরটিসোন জাতীয় মলম চামড়া আলগা করে থাকে। তবে এরপরেও খৎনা করে ফেলা উত্তম।
প্যরাফাইমোসিস হচ্ছে ঠিক উল্টো সমস্যা। অর্থাৎ আলগা চামড়া এমনিতেই পিছনে এসে আটকে ফুলে থাকে। একে টেনে সামনে আনা যায় না। অনেকসময় রক্ত জমে তীব্র ব্যথা হলে পূর্ণ অজ্ঞান করে খৎনা করাও লাগতে পারে।
৬। প্যাঁচ লাগা শিশ্নঃ অনেকসময় খৎনা করার সময় এটি ধরা পড়ে। সাথে হাইপোস্পেডিয়াস না থাকলে এটি তেমন সমস্যা করে না।
৭। অতিক্ষুদ্র শিশ্নঃ বয়সের সাথে শিশ্নের আকারের একটি বিশেষ গ্রোথ চার্ট আছে। সেই চার্টের সাথে মিলিয়ে (২.৫ এসডি’র নিচে) মন্তব্য করতে হয় শিশ্ন অতিক্ষুদ্র কিনা। এছাড়া অনেকসময় অন্ডথলির চামড়ার নিচে শিশ্ন ঢাকা পড়ে যায়। আবার অনেকের তলপেটের অতিরিক্ত চর্বি কিংবা খৎনার পরে শিশ্ন খুব ছোট দেখায়। চিকিৎসককে কয়েকটি বিষয় নিয়ে ভাবতে হয়। এটি হরমোনজনিত কোনো রোগের জন্য কিনা, লিঙ্গ নির্ধারণে কোনো সন্দেহের কারণ আছে কিনা আর পরবর্তীতে সন্তান উৎপাদনে সমস্যা করবে কিনা। স্থুল শিশুদের অভিভাবককে তাই শিশুর ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বলা খুব জরুরি।
৮। শিশ্ন দাঁড়িয়ে থাকা (প্রায়াপিজম)ঃ যৌন উত্তেজনা ছাড়াই দীর্ঘসময় (৪ ঘণ্টা বা এর অধিক) শিশ্ন দাঁড়িয়ে থাকলে বেশ কিছু অসুখের নির্দেশ করে। এদের মধ্যে সিকল সেল ডিজিজ নামে একটি রক্তরোগ খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৯। মিয়েটাল স্টেনোসিসঃ নবজাতক শিশুর কিংবা অনভিজ্ঞ হাতে খৎনার পরে অনেক সময় ছিদ্র খুব ছোট হয়ে বিন্দুর মত সরু হয়ে যেতে পারে। খুব কষ্ট করে অতিসরু নালি দিয়ে প্রস্রাব বের হয়। এর চিকিৎসায় শল্য ব্যবস্থা নিতে হয়।
প্রস্রাবের রাস্তা আর শিশ্নের এসব সমস্যার আরেকটি দিক হচ্ছে এদের সাথে কিডনির সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ। অনেক সময় অবহেলায়, সংক্রমণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার এদের কিছু সমস্যায় কিডনি আদৌ জন্মগতভাবে সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা সেটাও বের করতে হয়। চিকিৎসককেও এক্ষেত্রে হতে হয় সতর্ক এবং চৌকস। তাই এগুলোর কোনটা সন্দেহ হলে বা দেখা গেলে কোন অনভিজ্ঞ কারো প্ররোচনায় দেরি না করে খুব দ্রুতই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. আহাদ আদনান
রেজিস্ট্রার, আইসিএমএইচ, মাতুয়াইল, ঢাকা।
মোবাইল: ০১৯১২২৪২১৬৮।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন