আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে বিশ্বের প্রধান ও উদীয়মান অর্থনৈতিক অবস্থান সম্পন্ন দেশগুলোর সম্মেলন গ্রুপ অফ টোয়েন্টি বা জি-২০। ১৯ টি দেশ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নিয়ে জি-২০ গঠিত। সম্মেলনের প্রথম দিন গতকাল শুক্রবার সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে সাক্ষাত করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুই দেশের নিরাপত্তা, জ্বালানি ও কৃষিতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন দুই নেতা।
মোদি ও যুবরাজ মোহাম্মদ দুজনই জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিতে বর্তমানে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে অবস্থান করছেন। যুবরাজের আবাসস্থলেই দেখা করেন মোদি। যুবরাজ জানান, ভারতে জ্বালানি রফতানি করতে প্রস্তুত সউদী আরব। জাতীয় বিনিয়োগ ও অবকাঠামো তহবিলে তিনি দ্রুতই প্রাথমিক বিনিয়োগ চূড়ান্ত করতে যাচ্ছেন।
সম্মেলনে অংশ নেয়া ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে বলেন, আমরা প্রত্যাশা করছি-আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ভারতে সউদী বিনিয়োগ তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেড়ে যাবে। দুই দেশ অস্ত্র উৎপাদন ও সউদী আরবের নিজস্ব অস্ত্র কারখানা উন্নয়ন বিষয়েও তাদের কথা হয়েছে। জ্বালানি মূল্যের স্থিতিশীলতার ওপর জোর দেন নরেন্দ্র মোদি। বিশ্বের শীর্ষ অপরিশোধিত তেল সরবরাহকারী দেশ হিসেবে সউদী আরব জ্বালানিমূল্য বিশেষ করে ভারতের জন্য স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করতে পারে বলে দুই নেতা আলোচনা করেন। বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ তেল আমদানিকারক দেশ হচ্ছে ভারত।
সউদী তেল রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান আরামকোর ভারতে বিনিয়োগ নিয়ে মোদির সঙ্গে কথা বলেন মোহাম্মদ বিন সালমান। ভারতের পশ্চিম উপকূলে বড় তেল পরিশোধন প্রকল্প তৈরিরও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
রয়টার্স জানায়, সউদী সমর্থিত ভিশন ফান্ড-এর মাধ্যমে সৌরশক্তিতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়েও কথা বলেন দুই নেতা। বৈঠকে অস্ত্র তৈরি ও রফতানিতে যৌথ প্রয়াসের ব্যাপারে কথা বলেন বিন সালমান ও মোদি। অক্টোবরে ইস্তান্বুলে সউদী সাংবাদিক জামাল খাশোগী হত্যার ঘটনার পর কোনো বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সউদী যুবরাজের এটাই প্রথম যোগদান।
গোখলে জানান, বন্দর, মহাসড়ক নির্মাণ ও অন্যান্য প্রকল্প নির্মাণে গতি সঞ্চারের লক্ষ্যে ভারতীয় জাতীয় বিনিয়োগ ও অবকাঠামো তহবিলে প্রাথমিক সউদী বিনিয়োগের বিনিয়োগের বিষয়টি শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে বলে সউদী যুবরাজ মোদিকে জানিয়েছেন।
দুইদিন ব্যাপী জি-২০ সম্মেলনের প্রথমদিন শুক্রবারের মধ্যেই বুয়েন্স আয়ার্সে পৌছে যান প্রায় সব সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা। এদিন তারা অনেকগুলো পারস্পরিক দ্বি-পক্ষীয় বেঠক করেন। শনিবার মূল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
এ বছর, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার চীনা প্রতিপক্ষ শি জিনপিং এ মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক এবং যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তির (ইউএসএমসিএ) দিকেই মূলত দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকবে। খাশোগি ইস্যুতে সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও ব্রেক্সিট ইস্যুতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের দিকেও সবার মনোযোগ থাকবে।
ইতোমধ্যে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে বৈঠক বাতিল করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। খাশোগি ইস্যুতে থেরেসা মে যুবরাজ মোহাম্মদের সাথে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল মাঁখোও যুবরাজের সাথে বৈঠক করবেন।
উল্লেখ্য, গ্রæপ অব টোয়েন্টি ফিন্যান্স মিনিস্টারস অ্যান্ড সেন্ট্রাল ব্যাংক গভর্নরস (জি-২০) হল বিশ্বের ১৯টি দেশের অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সমন্বয়ে গঠিত একটি জোট বা গ্রæপ। অপর সদস্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট এবং ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিত্ব করেন। জি২০ দেশসমূহের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকারপ্রধানও গ্রুপের সম্মেলনে তাদের নিজ নিজ দেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন। সমষ্টিগতভাবে জি২০ এর অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহ পৃথিবীর মোট জাতীয় উৎপাদনের ৮৫%, বিশ্ব বাণিজ্যের ৮০% এবং বিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যার প্রতিনিধীত্ব করে। কানাডার সাবেক অর্থমন্ত্রী পল মার্টিন প্রথম জি২০ গঠনের প্রস্তাব করেন। এর উদ্দেশ্য বিশ্বের প্রধান ও উদীয়মান অর্থনৈতিক পরাশক্তি সম্পন্ন দেশসমূহের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা, আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ইত্যাদি। সূত্র: নিউজ এইটটিন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন