বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এক শতাব্দী আগের ভুল থেকে ইরাক ও সিরিয়ার মানুষকে মুক্তি দিতে হবে

প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : এ মাসে সাইকস-পিকো চুক্তির শত বছর পূর্তি হচ্ছে। এ সেই কুখ্যাত গোপন ভাগাভাগির চুক্তি যা মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্রকে বদলে দিয়েছিল এবং অটোম্যান সা¤্রাজ্যের ব্যবচ্ছেদ ঘটিয়ে সৃষ্টি করেছিল ইরাক, সিরিয়াসহ কয়েকটি দুর্বল দেশের।
গত কয়েকটি সপ্তাহ নাটকীয়ভাবে নতুন সাক্ষ্য প্রমাণ থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সৃষ্টি করা ঔপনিবেশিক কাঠামো কাজ করছে না। দেখা যাচ্ছে যে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ১৯১৬ সালের ১৯ মে অটোম্যান সা¤্রাজ্যের এক বিরাট অংশকে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিতে গোপন চুক্তি করেছিল। সে চুক্তির মাধ্যমে এ দুই ঔপনিবেশিক শক্তি ইরাক ও সিরিয়া নামে যে দু’টি দেশ সৃষ্টি করেছিল আজ তা ভেঙে টুকরো টুকরো হওয়ার সম্মুখীন। ইরাক ইতোমধ্যেই কার্যত তিনটি যুযুধান অঞ্চলে ভাগ হয়ে গেছে : আইএস শাসিত একটি সুন্নী এলাকা, প্রায় স্বায়ত্তশাসিত একটি কুর্দি এলাকা এবং রাজধানী বাগদাদ থেকে দক্ষিণ দিকে বিস্তৃত শিয়া সরকার শাসিত এলাকা। সিরিয়াতেও একই রকম বিভক্ত এলাকা কাঠামো দেখা যাচ্ছে। উভয় দেশেই কেন্দ্রীয় সরকার অদৃশ্য হয়েছে।
ইরবিলমুখী পাহাড়ি সদর দফতর থেকে এক সাক্ষাৎকারে কুর্দি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাসরুর বারজানি বলেন, এক শ’ বছর ধরে ইরাকে যে ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল তা আজ ব্যর্থ হয়েছে। ইরাক কখনোই সঠিক ভিত্তির ওপর সৃষ্টি হয়নি। ইরাকের সৃষ্টিই হয়েছিল বৃহৎ শক্তির স্বার্থসিদ্ধির জন্য। এক শ’ বছরের ব্যর্থতা যথেষ্ট। আমাদের এখন নতুন পথ খুঁজতে হবে।
ইরাক ও এ অঞ্চল যে এক ক্রান্তিলগ্নে উপনীত হয়েছে, অনুরূপ কথা বলেছেন কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ইরাকের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী বারহাম সালিহ। বর্তমানে তিনি সুলায়মানিয়ায় আমেরিকান ইরাক-সুলাইমানি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, এটা একটা সরকারের সংস্কার করার ব্যাপারে নয়, ২০০৩-উত্তর সময়ে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক দাঁড় করানো রাজনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। এটা নতুন যুগ। এখন যুদ্ধবাজদের গোলযোগ অথবা একটি নয়া সাংবিধানিক ব্যবস্থা যা সম্ভবত অধিকতর বিকেন্দ্রীকৃত, অখ- ইরাক সৃষ্টি করবে, তার মধ্যে একটিকে বেছে নিতে হবে।
আমার ইরাক সফরকালে যেসব কুর্দি নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল তাদের কাছেও আমি একই কথা শুনেছি। এমনকি কিছু সুন্নির কাছেও। তারা বলেছেন, ইরাক ও সিরিয়া বিভক্তির সম্মুখীন। সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন হচ্ছে ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) পরাজিত করা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামো নিয়ে মিত্রদের সাথে কথা বলা যা স্যার মার্ক সাইকস ও ফ্রাঁসোয়া জর্জেস-পিকোট কর্র্তৃক বালুর বুকে টানা সীমান্তরেখা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ২০০৩-উত্তর নব্য উপনিবেশবাদী হঠকারিতার বিকল্প।
এ বিপর্যয় রোধের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কিভাবে সৃজনশীলতার সাথে ভাবা উচিত, সে ব্যাপারে ১৯৪৪ সালের আমেরিকান নীতির দিকে দেখা যেতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ের দিনটি আজ পর্যন্ত একটি রক্ত¯œাত বছর। কিন্তু যুদ্ধের পর শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় রাখবে এমন সব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করার দূরদৃষ্টি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের ছিল। সে বছরের শেষে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল, বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের জন্য বিশদ পরিকল্পনা শুরু হয়।
প্রেসিডেন্ট ওবামার মেয়াদের শেষ দিনগুলো ও পরবর্তী প্রেসিডেন্টের অফিসে প্রথম কয়েকটি মাসের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন ব্যবস্থার জন্য ভিত্তি নির্মাণ করা যা সুন্নি, শিয়া ও কুর্দি এবং ঐ অঞ্চলের মধ্যে বসবাসরত ক্ষুদ্র সংখ্যালঘুদের অধিক নিরাপত্তা, সুশাসন ও আর্থিক কল্যাণ এনে দেবে। এ বিধ্বস্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য কার্যকর শাসন কাঠামো তৈরি ও তা বহাল রাখতে হবে।
কুর্দিরা শিগগিরই যে প্রশ্নের জবাব চাইবে তা হচ্ছে গণভোট, যাতে তাদের লোকজনদের কাছে জানতে চাওয়া হবে যে, তারা ইরাকি কুর্দিস্তানের স্বাধীনতা চায় কি না। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তা সমর্থন করা, তবে তা হওয়া উচিত ও হতে হবে বাগদাদে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে আলাচনার মাধ্যমে পৌঁছা চুক্তির প্রেক্ষিতে। অনেক সুন্নি ও শিয়া নেতা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বলেছেন যে, তারা একটি কনফেডারেল ইরাকের জন্য নতুন সংবিধান চান যাতে একটি সুন্নি ও কুর্দি সরকার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সিরিয়ায় রাজনৈতিক উত্তরণের অংশ হিসেবে শিথিল কেন্দ্রীয় বা কনফেডারেল সিরিয়ার জন্য আলোচনা করা উচিত।
জোর করে টুকরোগুলোকে এক রাখার চেষ্টা করায় কাজ হবে না। যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এখন ইরান সে চেষ্টা করে নিজেকে অসমর্থ দেখতে পাচ্ছে। গত সপ্তাহে ইরাকের শিয়া প্রধান পার্লামেন্টে তুলকালাম কা- একই বিষয়কে তুলে ধরেছে যা শিয়াবনাম শিয়া বিরোধের ফল।
একজন বিশিষ্ট ইরাকি বলেন, ২০০৩ সালের পর যুক্তরাষ্ট্র যে ভুল করেছিল, ইরানিরা সেই একই ভুল করছে। তারা প্রচ- শক্তি নিয়ে নেমেছে। তারা ভাবছে যে, সবই করতে পারবে। কিন্তু শিয়া একাধিপত্য ভেঙে পড়ছে।
মধ্যপ্রাচ্যের বিপর্যয় রোধ করা এক প্রজন্মের কাজ। এক শতাব্দী আগে যে ভুল ও অন্যায় করা হয়েছিল তা থেকে ইরাক ও সিরিয়ার লোকদের চূড়ান্তরূপে মুক্ত করার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, রাশিয়া, সউদি আরব ও ইরানকে জরুরি ভিত্তিতে ভাবতে হবে। সূত্র দি ওয়াশিংটন পোস্ট।
নিবন্ধকার ডেভিড ইগনাশিয়াস ওয়াশিংটন পোস্টের ওপিনিয়ন রাইটার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন