শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঢেলে সাজানো হচ্ছে শাহজালাল ও কক্সবাজার বিমানবন্দর

প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : যুগের চাহিদা মোতাবেক দেশের বিমানবন্দরগুলো ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সিভিল এভিয়েশন ইতোমধ্যে দেশের বিমানবন্দরগুলো উন্নয়নের ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে সম্প্রসারিত করে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। নির্মাণ করা হচ্ছে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ নতুন টার্মিনাল ভবনসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো।
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বর্তমান রানওয়ের দ্বিগুণ বড় রানওয়ে নির্মাণ হবে শাহজালাল বিমানবন্দরে। এছাড়া কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার লক্ষ্যে প্রথম দফার কাজও ডিসেম্বরে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় দফার কাজও চলছে। আগামী বছরের শেষ পর্যায়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজার বিমানবন্দরে দেশী-বিদেশী বিমান সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করবে। এছাড়া শাহজালাল বিমানবন্দর সংলগ্ন সিভিল এভিয়েশনের সদর দপ্তরের জন্য দশ তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক ভবনের নির্মাণ কাজও আগামী বছর সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দেশের আকাশ পথে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হবে।
তারা বলছেন, সিভিল এভিয়েশনের উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২০ সালের মধ্যে শাহজালাল এবং কক্সবাজার বিমানবন্দর হবে দক্ষিণ এশিয়ার অত্যাধুনিক বিমানবন্দরগুলোর অন্যতম। শুধু তাই নয়, দূরগামী অনেক দেশের এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রা বিরতির পাশাপাশি জ্বালানি সংগ্রহের জন্য কক্সবাজার, চট্টগ্রাম শাহ আমানত ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে ব্যবহারের সুযোগ পাবে। এতে করে দেশের অর্থনীতি খাতে যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপনের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এহসানুল গনি চৌধুরী বলেন, যুগের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এবং যাত্রী সেবার মান বাড়াতে শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। খুব দ্রুত নির্মাণ করা হবে তৃতীয় টার্মিনাল। তিনি বলেন, কথায় নয় আমরা কাজে বিশ্বাসী। এ লক্ষ্যেই সিভিল এভিয়েশন কাজ করে যাচ্ছে। বিমান চলাচল ও বিমানবন্দরগুলোকে কেন্দ্র করে সরকারের যে সব পরিকল্পনা রয়েছে তা বাস্তবায়নে সিভিল এভিয়েশন বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, শুধু শাহজালাল বিমানবন্দর নয়, দেশের সবক’টি বিমানবন্দরের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারকে বিদেশী পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করতে এবং  দ্রুততম সময়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে যাতে বিদেশীরা আসা যাওয়া করতে পারেন এ জন্য সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক  বিমানবন্দর। এর নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। তিনি আরো বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তাও এখন অনেক ভাল। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। বিমানবন্দরের পরিবেশও এখন অনেক ভাল। টানা পার্টির উৎপাত নেই।
এদিকে বিমান মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের জন্য জাপানকে দায়িত্ব দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হবে।
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দরকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ করার কাজ দেয়া হচ্ছে জাপানকে। বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী বছরের শেষে ওই বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।
বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পের মূল নাম ছিল হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দ্বিতীয় রানওয়ে এবং তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প। পরে এই প্রকল্পের নাম রাখা হয় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প। জাইকা বলেছে, প্রকল্পটি থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ-সংক্রান্ত হলেও পুরো বিমানবন্দরকেই ঢেলে সাজাতে হবে। ডিজাইন রিভাইজ করতে হবে। এসব কাজ শেষ করে ২০২০ সালের মধ্যে থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধন সম্ভব নয়। তারা এ জন্য ২০২৫ সালকে টার্গেট করেছে।
সিভিল এভিয়েশন প্রকৌশল বিভাগ জানায়, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ৩২১ দশমিক ৩৪ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আরো ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। মূল খনন কাজ ও ভূমি উন্নয়নের কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে একদল মেধাবী ও অভিজ্ঞ প্রকৌশলী এ বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছেন অবিরাম। উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছে দেশী-বিদেশী তিনটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে কোরিয়ার ইয়োশিন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন, আইএল শিন হাইটেক ও দেশীয় ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্ট লিমিটেড। প্রকল্পের ঠিকাদারির দায়িত্ব পেয়েছে কোরিয়ার হাল্লা এমএইচ শিওকওয়াং জেভি ও বাংলাদেশের মীর আখতার হোসেন লিমিটেড।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এয়ার ভাইস মার্শাল এহসানুল গনি চৌধুরী বলেন, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত হিসেবে পরিচিত কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার প্রকল্পটি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির ফসল। বর্তমান প্রকল্পের আওতায় রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে ৯ হাজার ফুটে উন্নীতকরণ, প্রস্থ ১৫০ থেকে ২০০ ফুটে উন্নীতকরণ, এয়ারফিল্ড লাইটিং সিস্টেম স্থাপন, ফায়ার ফাইটিং ভেহিকল ক্রয় এবং নাব্য যোগাযোগ যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক বেশ কিছু কাজ চলছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের (প্রথম পর্ব) কাজ শেষ হবে।
এদিকে সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, নানা দিক বিবেচনা করে শাহজালাল বিমানবন্দরে থার্ড টামিনাল নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে জাপানকে। বর্তমানে দু’টি টার্মিনাল দিয়ে বছরে আট মিলিয়ন যাত্রী আসা-যাওয়া করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ৬ দশমিক ৭ মিলিয়ন যাত্রী আসা-যাওয়া করছে। থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ হলে প্রতিবছর ২৪ মিলিয়ন যাত্রী আসা-যাওয়া করতে পারবে। এয়ারক্রাফট ওঠানামাও বেড়ে যাবে প্রায় দ্বিগুণ। বর্তমান টার্মিনাল দিয়ে বছরে দুই লাখ টন কার্গো ওঠানামার ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু বছরে দুই লাখ ৩৭ হাজার টন কার্গো ওঠানামা করে। থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ হলে বছরে সাত লাখ টন কার্গো ওঠানামা করবে।
থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়ে গত বছরের ১৩ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে নতুন ভিভিআইপি লাউঞ্জ, অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল, কার্গো ভিলেজ সংযুক্ত করতে বলেন। এছাড়া প্রয়োজনীয় রোড, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, মাল্টি লেভেল কার পার্কিংসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা রাখার জন্য নির্দেশ দেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন