বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কাগতিয়ার পীর সাহেবের দাফন সম্পন্ন : জানাজায় লাখো মানুষের ঢল

প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : লাখো মানুষের উপস্থিতিতে নামাজে জানাজা শেষে উপমহাদেশের প্রখ্যাত ও প্রবীণ আলেমেদ্বীন চট্টগ্রামের রাউজান কাগতিয়া আলিয়া দরবারের প্রতিষ্ঠাতা ‘গাউছুল আজম’ খ্যাত শাহ্ সূফি হযরত আল্লামা ছৈয়দ তফাজ্জল আহমদ মুনিরী (ম.জি.আ.) পীর সাহেব কাগতিয়ার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার রাত ১১টার পর দরবারের পাশের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে কাগতিয়া এশাতুল উলুম কামিল (এমএ) মাদরাসা ময়দানে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন পীর সাহেবের ছোট পুত্র আল্লামা ছৈয়দ মুনির উল্লাহ আহমদী। জানাজায় লাখো মানুষের সমাগম হয়। জনতার স্রোত কাগতিয়া মাদরাসা ময়দান ছাড়িয়ে আশেপাশের সড়ক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় ময়দান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
নামাজে জানাজায় শরিক হতে রাউজান ছাড়াও বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পীর সাহেবের ভক্ত-মুরিদানরা ছুটে আসেন। জানাজায় ভক্ত-মুরিদদের কান্নায় এক হৃদয়-বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সবার মুখে ছিল দোয়া-দরুদ। শোকাবহ পরিবেশে দরবারের পাশে পীর সাহেবকে দাফন করা হয়। জানাজায় রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, ভাইস চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ, উরকিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল জব্বারসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, রাজনৈতিক দলের নেতারা শরিক হন।
চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, রাউজান থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, রাউজানের সাবেক এমপি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী পৃথক পৃথক বিবৃতিতে কাগতিয়ার পীর সাহেবের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ ও রূহের মাগফিরাত কামনা করেছেন।  
পীর সাহেব বুধবার সকাল ১০টায় রাজধানী ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ওইদিন হেলিকপ্টারযোগে কফিন কাগতিয়ায় নিয়ে আসা হয়। তিনি ১৯২৩ সালে চট্টগ্রামের রাউজান থানার কাগতিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানে তিনি সুবিশাল ও অত্যাধুনিক আলিয়া মাদরাসা, খানকাহ্সহ বিভিন্ন ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও কাগতিয়া আলিয়া দরবার প্রতিষ্ঠা করেন। মুনিরিয়া তবলিগ ও যুব তবলিগ কমিটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। চট্টগ্রামসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও দেশ ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অরাজনৈতিক, তরিকতভিত্তিক ও সুশৃঙ্খল এ আধ্যাত্মিক সংগঠনের শাখা রয়েছে। এসব শাখা থেকে নিয়মিত এশায়াত মাহফিল ও বার্ষিক এশায়াত সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। দেশের তরুণ-যুবকদের সঠিকপথে পরিচালিত করার ক্ষেত্রে কাগতিয়ার পীর সাহেবের প্রতিষ্ঠিত এসব সংগঠনের ভূমিকা, অবদান অপরিসীম ও ব্যতিক্রমী।
রাউজানের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ নামাজে জানাজা
রাউজান উপজেলা সংবাদদাতা : কাগতিয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা, উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন হাজার হাজার ওলামায়ে কেরামের ওস্তাদ কাগতিয়া কামিল মাদরাসার সাবেক প্রিন্সিপাল জনদরদী পীরে ত্বরিকত আল্লামা তফাজ্জল আহমদ মুনীরির (রহ.) ইন্তেকালের রাউজানসহ সমগ্র চট্টগ্রাম অঞ্চলে শোকের ছায়া নেমে আসে। বুধবার সকাল ১১টায় ইন্তেকালের খবরটি মোবাইল ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার আশেক ভক্তরা জানতে পারেন। হুজুরের হাজার হাজার ভক্ত মুরিদানরা ছুটে আসতে থাকে কাগতিয়ার দরবার শরিফে। বুধবার মাগরিবের পর সেখানে দেখা যায় হাজার হাজার ভক্ত-মুরিদান আশেক বিভিন্ন উপজেলা জেলা থেকে বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে কাগতিয়ায় ছুটে এসেছে। কাগতিয়া বাজারের আশপাশসহ দশ কিলোমিটার জুড়ে মুল রাস্তাসহ কোনোদিকে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। শুধু মানুষ আর মানুষ। আশেক ভক্তদের কান্না কেউ থামাতে পারছে না। পাঞ্জাবি ও টুপি পরিহিত হাজার হাজার মুসল্লি শুধু কাগতিয়া দরবারে ঢুকছে। নোয়াপাড়া সড়কের এক কিলোমিটার জুড়ে শুধু মানুষ আর মানুষ। মূল সড়ক থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পশ্চিমে কাগতিয়া আলিয়া গাউছুল আজম দরবার শরিফ। মূল সড়ক থেকে হাজার হাজার মুসল্লির স্রোত দরবারের দিকে। সে সময় জনস্রোত সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও কাগতিয়া দরবারের নিজস্ব শত শত স্বেচ্ছাসেবককে। এরপরও সকলের নজর হুজুরের চেহারা মোবারক শেষবারের মতো একবার দেখতে হবে। হাজারো মুসল্লির চোখে অশ্রুধারা। মাদরাসা ময়দানের পশ্চিম পার্শে¦ মধ্যখানে বিশাল প্যান্ডেল তৈরি করা হয়, যেখানে হুজুরের লাশ রেখে জানাজা পড়ানো হয়। মাদরাসা মাঠটি হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে মাগরিবের নামাজের সময় ভরপুর হয়ে যায়। হুজুরের রফে দরাজাতের জন্য অসংখ্য ওলামা ও আশেক মুরিদানরা পবিত্র খতমে কোরআন পড়তে থাকেন। হুজুরের ইন্তেকালের পর থেকে শুরু হওয়া খতমে কোরআন জানাজার নামাজের পূর্বে পর্যন্ত চলে। রাত দশ টায় নামাজে জানাজায় কয়েক লাখ লোক শরিক হন। নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণ করার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে কাগতিয়ায় ছুটে আসেন লাখো ভক্ত। রাউজানের এই জানাজাটি সর্বকালের বৃহৎ জানাজা হিসেবে ইতিহাস হয়ে থাকবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন