বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

ইসলাম প্রচারে হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহ.

প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো: তালহা তারীফ

হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী মধ্য এশিয়ার খোরাসানের অন্তর্গত ইরান ও আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী জেলার সঞ্জর নামক গ্রামে ১১৩৮ ইংরেজী ৫৩৭ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ খাজা গিয়াস উদ্দিন, মাতার নাম সৈয়দা উম্মুল ওয়ারা মাহেনুর। পিতার দিক থেকে তিনি শেরে খোদা হজরত আলির চতুর্দশতম এবং মাতার দিক থেকে তিনি হজরত ফাতেমার দ্বাদশতম বংশধর। তার যখন পনের বছর হয় তখন তার পিতা ও মাতা মৃত্যু বরণ করেন।
হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি প্রথমে তার পিতার নিকট থেকে দ্বিনী শিক্ষা অর্জন করেন। তিনি সাত কিংবা নয় বছর বয়সে পবিত্র কোরআন তরজামাসহ মুখস্ত করেন। অতঃপর ১৩ বছর পর্যন্ত পিতার সার্বিক তত্ত্বাবধানে কোরআন, হাদিস, ফিকাহ, উসুল, তাফসির, আরবী, সাহিত্য ব্যাকরণ, মানতিক, হিকমত দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। তাছাড়া তিনি প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হজরত হুসামুদ্দীন (রহঃ) এর নিকট দীর্ঘ ৫ বছর অধ্যায়ন করেন।
হজরত মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ:) ১৫ বছর বয়সে এলমে তাসাওফ সর্ম্পকিত মূল্যবান একটি গ্রন্থ প্রণয়ন করেছিলেন, তিনি তাসাওফ তত্ত্বে অগাধ জ্ঞান অর্জনের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। তারপর তার ওস্তাদ হযরত হিসাম উদ্দীন বুখারী এর নির্দেশ ক্রমে তিনি হজরত খাজা ওসমান হারুনী (রহ:)-এর কাছে মুরিদ হতে যান। নিশাপুরের কাছে হারুন নামের একটি ছোট শহরে বাস করতেন এই মহাসাধক হজরত ওসমান হারুনী (রহ:)। তিনি ছিলেন শরীফ জিলানী-এর মুরিদ ও প্রধান খলিফা। তার কাছে হিজরী ৫৬০ সালের ১১ শাওয়াল বুধবার যোহরের নামাজের পর খাজা মাঈনুদ্দীন চিশতি (রহ:) মুরিদ হয়েছিলেন। মুরিদ হওয়ার ২.৫ বছর পর হজরত ওসমান হারুনী (রহ:) তাকে খেলাফত দান করেন। হজরত ওসমান হারুনী তাকে চার কোনা বিশিষ্ট একটি টুপি পড়িয়ে দেয়, টুপিটি তিনি তার পির শরীফ জিলানী-এর কাছ থেকে প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
হজরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহ:) বহু দেশ সফর করেছেন। সফর করার পূর্বে কঠোর ইবাদাত বন্দেগী এবং মুরাকাবা মুশাহাদা করেছিলেন। তিনি হজ্জ পালন করেন। সফররত অবস্থায় হজরত মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ:) বহু পীর ওলীর সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন এমনকি স্বয়ং গাওসে পাক হজরত বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহ:)-এর সান্নিধ্য প্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং ৫৭ দিন তার সাথে অবস্থান করেন। গাওছে পাক তাকে বলেছিলেন, ইরাকের বেলায়ত সাহাবুদ্দিন সরোওয়ার্দীকে দান করা হয়েছে, আর তোমাকে প্রদান করা হয়েছে হিন্দু স্থানের বেলায়ত। এই সংবাদ নিজ পীর খাজা ওসমান হারুনীর সাথে মদিনায় অবস্থান ও জিয়ারত কালে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পক্ষ থেকে পেয়েছিলেন।
হজরত মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ:) ৫৮৬ সালে মাত্র ৪০জন সফর সঙ্গীকে নিয়ে হিন্দুস্থানে আসেন। এরপর বিরতিহীনভাবে বিভিন্ন ধর্মালম্বীদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দেন। তিনি আরব হতে ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান হয়ে প্রথমে লাহরে পরে দিল্লি হয়ে আজমিরে আগমন করেন। আজমিরে পৌঁছালে সেই সময়ের হিন্দু রাজা পৃথ্বি রাজের প্রতিরোধের মুখে পড়েন। পৃথ্বিরাজ খাজা মঈনুদ্দীনকে উৎখাত করার জন্য বিখ্যাত যাদুকর রামেদেওকে পাঠান, কিন্তু যাদুকর রামেদেও খাজার অত্যাধিক শক্তির কাছে নতস্বীকার হয়ে মুসলান হয়ে নাম রাখেন মোহাম্মদ সাতাফি।
হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ:) ছিলেন দরদি মনের মানুষ এবং চরিত্র ও তার আখলাক ছিল মহাশক্তি এবং অমোঘ অস্ত্র যেই কারণেই জাতী ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই তার সংশ্রবে এসে আকৃষ্ট হয়ে পড়ত এবং তাকে আন্তরিক ভক্তি ও শ্রদ্ধা করত।
হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ:) ৬৩৩ হিজরীর ৬ই রজব রবিবার পবিত্র আজমির শরীফে ইহধাম ত্যাগ করেন। তখন তার বয়স হয়েছিলেন ৯৭ বছর। গরীবে নেওয়াজের বড় সাহেবজাদা হজরত খাজা ফখরুদ্দিন চিশতী তার জানাজার ইমামতি করেন জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি হজরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার খাকী (রহ:) কে খিলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করে সিলসিলার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন