নির্বাচনকালীন সহিংসতা এড়াতে ট্রেন চলাচলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বিগত নির্বাচনে সারা দেশে অবরোধজনিত কারণে রেলওয়ের ওপর নাশকতা হয়েছিল। বিষয়টি মাথায় রেখে এবার নির্দিষ্ট কিছু জেলার গুরুত্বপূর্ণ সেকশনে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, সিলেট, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও হবিগঞ্জ জেলাকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গত সপ্তাহে হবিগঞ্জে নাশকতার উদ্দেশ্যে রেললাইন কেটে ফেলার ঘটনার পর যাত্রী ও রেলের নিরাপত্তার স্বার্থে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
গত ২১ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের মাধবপুরে দুটি স্লিপারের মাঝখানে রেললাইন কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় সারা দেশের সঙ্গে সিলেটের ট্রেন যোগাযোগ ৬ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। আখাউড়া-সিলেট সেকশনে সংঘটিত ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত রোববার উপজেলার অপু মোল্লা নামে একজনকে আটক করে পুলিশ। ২০১৪ সালে সংসদ নির্বাচনের সময় রেলপথেই সহিংসতার ঘটনা ঘটে সবচেয়ে বেশি। ওই সময় সারা দেশে শতাধিক নাশকতার ঘটনা ঘটে। বেশকিছু ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছিল নাশকতার জেরে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জারি করা এক অফিস আদেশ সূত্রে জানা গেছে, নাশকতার উদ্দেশ্যে রেলপথের ক্ষতি এড়াতে ও আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ (ঢাকা) ও বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ (ঢাকা)-কে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে সদর দপ্তর থেকে বিশেষ সতর্কতা জারির অনুরোধ জানানো হয়। এজন্য ঢাকা, লালমনিরহাট, পাকশী, সিলেট, চট্টগ্রাম ছাড়াও রেলের গুরুত্বপূর্ণ সেকশন ও জেলাগুলোয় বিশেষ পেট্রোলিং ট্রেন বা ইমার্জেন্সি শাটল মজুদ রাখা হয়েছে। জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন চলাচলের আগে ইমার্জেন্সি শাটল বা পেট্রোলিং ট্রেন আগে গিয়ে রেলপথের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবে। এরপর নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে যাত্রীবাহী ট্রেন যাত্রা করবে। ২০১৪ সালে টানা কয়েক সপ্তাহ এভাবে ট্রেন চালিয়েছিল রেলওয়ে।
সূত্র জানায়, নির্বাচনকালীন রেলের প্রতিটি কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুমে একজন করে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা (পরিবহন বিভাগ) শিফটিং ভিত্তিতে কাজ করবেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখা ও রেলপথে নাশকতার ঘটনা এড়াতে ২১ ডিসেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর ফলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, লালমনিরহাট, পাকশী, পাহাড়তলী ছাড়াও সব কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম ২৪ ঘণ্টাই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার তদারকিতে রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ বিশেষ সতর্কতা বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, গৌরীপুর-শ্যামগঞ্জ-জারিয়াজানজাইল, শ্যামগঞ্জ-ঠাকুরাকোনা, জামালপুর-তারাকান্দি, গৌরীপুর-আঠারবাড়ী, টঙ্গী-নরসিংদী, মুকুন্দপুর-হরষপুর, মনতলা-নোয়াপাড়া, নোয়াপাড়া-শাহাজীবাজার, রশিদপুর-শ্রীমঙ্গল, শ্রীমঙ্গল-বরমচাল সেকশনগুলোকে বিশেষ সতর্কতায় রাখা হয়েছে। এছাড়া সারা দেশের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথে নাশকতার ঘটনা এড়াতে পরিবহন বিভাগের কর্মীদের বিশেষভাবে নজরদারির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলসংশ্লিষ্টরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন