কর্পোরেট রিপোর্ট : পোশাক খাতে চলমান সংস্কার ব্যয়ে সহায়তা হিসেবে বিদেশি ঋণের ৫০০ কোটি টাকা অলস পড়ে আছে দুই বছর ধরে। জাপান সরকারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা এবং বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) দেয়া এ তহবিল থেকে ঋণ নিতে আগ্রহ নেই উদ্যোক্তাদের। সংস্থা দুটির নামমাত্র সুদের হার উদ্যোক্তা পর্যায়ে প্রায় ১০ শতাংশে এসে ঠেকছে। এ কারণে সংস্কারে অর্থ সংকট সত্ত্বেও এ অর্থে আগ্রহ নেই উদ্যোক্তাদের। জাইকার ১০০ কোটি টাকার তহবিল থেকে গত দুই বছরে ঋণ নিয়েছে মাত্র দুটি কারখানা। অন্যদিকে আইএফসির ৪০০ কোটি টাকা থেকে ঋণ নেয়নি কেউ। ঋণের হার বেশি হওয়ার বিষয়টি সামনে আসার পর সংস্কার অর্থায়নে সুদের হার ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গঠিত এ সংক্রান্ত কমিটি। গত মাসে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। সংস্কারে বিদেশিদের সহায়তা তহবিলে বেশি হারের সুদের বিষয়ে বিজিএমইএ সহনীয় হারে নির্ধারণে দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছিল। এদিকে সংস্কার অর্থায়ন ঋণে সুদের হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার আশ্বাস দিয়েছেন অর্থসচিব মাহবুুবুর রহমান। সম্প্রতি সচিবালয়ে বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এ আশ্বাস দেন তিনি। বৈঠক শেষে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এ ঋণে অযৌক্তিক সুদের হারের বিষয়টি অর্থ সচিবকে অবহিত করেছেন তারা। প্রায় ১০ শতাংশ হারে সুদের কারণে উদ্যোক্তারা এ ঋণ নিতে আগ্রহী নন। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর পোশাক খাতে কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা-দুর্বলতার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এর পর সব পোশাক কারখানা ভবনের কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা মান পরিদর্শন করে ইউরোপের ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি, উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি ও আইএলও সহযোগিতায় সরকারের পক্ষে জাতীয় উদ্যোগ (এনআই)। পরিদর্শনে চিহ্নিত ত্রুটি এখন সংস্কার করা হচ্ছে। প্রতিটি কারখানা সংস্কারে গড়ে ৫ কোটি টাকা নতুন করে বিনিয়োগ প্রয়োজন। ছোট ও মাঝারি আকারের কারখানা মালিকদের পক্ষে কঠিন হওয়ায় অর্থ সংকটে সংস্কার কাজ চালিয়ে যাওয়া দুঃসাধ্য। সংস্কারে ধীরগতির কারণে অসন্তুষ্ট দুই ক্রেতাজোট এরই মধ্যে শতাধিক কারখানার সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, বিদেশিদের এ ঋণ সহায়তায় সরকার মুনাফা করতে চায়। এ কারণে শূন্য দশমিক শূন্য এক (০.০১) শতাংশ সুদের ঋণ উদ্যোক্তা পর্যায়ে যেতে ১০ শতাংশে গিয়ে ঠেকছে। অথচ গত কয়েক মাস ধরে স্থানীয় ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে আরো কম সুদে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বিদেশিদের ঋণে আর আগ্রহ নেই তাদের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন