বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অবসরে গিয়ে রায় লেখা : প্রধান বিচারপতির বক্তব্য নিয়ে সংসদ উত্তপ্ত

প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : সম্প্রতি প্রধান বিচার প্রতি দেয়া অবসরে যাওয়ার পরে রায় লেখা অসাংবিধধানিক এবং বেআইনি এমন বক্তব্য গতকাল উত্তপ্ত হয় দশম জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশন।
মঙ্গলবার মাগরিবের নামাজের বিরতির পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে উত্তপ্ত বক্তব্য দেন স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তুম আলী ফরাজী। পরে এতে আরো অংশ নেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক আইন মন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু বক্তব্য দেন। এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি এক বাণীতে প্রধান বিচারপতি বলেন, অবসরের পর বিচারপতিদের রায় লেখা অসাংবিধানিক ও অবৈধ। তার এ বক্তব্যে আদালত অঙ্গন ছাড়িয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও বিতর্ক শুরু হয়। বিএনপিসহ কয়েকটি দলের পক্ষ বলা হয়, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় অবসরের পর লেখেছিলেন। তাই ওই রায় অবৈধ। বর্তমান সরকারও অবৈধ। তবে সরকারী দলের পক্ষ বলা হয়, অবসরের পর রায় লেখায় বাধা নেই। অতীতের কোনো রায়ে এর প্রভাব পড়বে না। প্রধান বিচারপতিকে কম কথা বলারও পরামর্শ দেন দলটির সিনিয়র এক নেতা।
আলোচিত এ ইস্যুতে এবার সংসদেও গড়াল। আগের বক্তারা প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন। তবে আইনমন্ত্রী বিতর্কের অবসান চেয়ে বলেন, আপিল বিভাগের রায় এজলাসেই দিতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা নেই। সংক্ষিপ্ত রায় দিতে হবে। প্রধান বিচারপতি যে কারণে এ কথা বলছেন, সে সমস্যা আমরা অনুধাবন করছি। কোনো কোনো বিচারপতির রায় লেখায় বিলম্বের কারণে জনগনের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে তিনি একথা বলেছেন। রায় দ্রুত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তার এই বক্তব্য নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা পরিষ্কার পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছেন।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বক্তব্যের বিরোধিতা করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, অবসরে যাওয়ার পর কোনো বিচারপতির রায় লেখা অসাংবিধানিক হতে পারে না।
সহকর্মীদের নিয়ে বিচারপতি সিনহার বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যে মঙ্গলবার সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় একথা বলেন আইনমন্ত্রী।
আনিসুল হক বলেন, আমাদের যে সংবিধান তার কোনো আর্টিকেলে এ কথা লেখা নাই যে বিচারপতি তার অবসরে গ্রহণের পর রায় লিখতে পারবেন না। তা যদি হয় তাহলে এটা আর যাই হোক অসাংবিধানিক হতে পারে না।
আইনমন্ত্রী বলেন, হাই কোর্ট ডিভিশনের স্টাবলিশ রুলস এ যেটা আছে, রায় যতদূর সম্ভব এজলাসে বসেই দেয়ার কথা। কিন্তু যদি এমন হয় তারা রায়টা এজলাসে দিতে পারছেন না মামলার চাপের জন্য। তাহলে অর্ডারিং পোর্শন বলার পরে এজলাসের বাইরে রায় লেখার অধিকার রাখে।
এপিলেট ডিভিশন রুলস আছে। সেখানে কিন্তু একথা নাই যে এজলাসে দিতে হবে। পরিষ্কার লেখা আছে। রায় দিতে হবে- ওপেন কের্টে অর্ডারিং পোর্শন পর্যন্ত। রায় পরে লেখা হবে। অবসরে যাওয়ার পর আর লেখা যাবে না সেটা লেখা নাই। কোনো রুলস বা আইন দ্বারা বারিত নয় বলে অবসরে যাওয়ার পরে রায় লেখা বেআইনি নয়।
বিএনপির সমালোচনা করে আইনমন্ত্রী বলেন, যারা বাসে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ মেরেছেন তারা প্রধান বিচারপতির বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। তারা বলছেন, আগের সব অবৈধ হয়ে গেছে। কিন্তু প্রধান বিচারপতি এও বলেছেন, আগের রায় বাতিল হবে না।
আইন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত্র সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে বিচার বিভাগকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, তা পৃথিবীর অন্য দেশে দেয়া হয়নি। সার্বভৌম সংসদের আইন সংবিধানসম্মত না হলে আদালত তা বাতিল করতে পারে।
প্রধান বিচারপতির বক্তব্যকে শপথের পরিপন্থি বলে মন্তব্য করেন সুরুঞ্জিত। তিনি বলেন, সংবিধানের রক্ষক সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি যে কথা বলে বসলেন, এ কথা বলা শপথের পরিপন্থী। এটি যদি অসাংবিধানিক হয়, তাহলে রাষ্ট্রের সব কিছুই অসাংবিধানিক হয়ে যায়। বিরোধী দল কথাটি লুফে নিয়ে নিয়ে বলল, এই সরকার নাকি অবৈধ। কারণ ওই রায়টা নাকি লেখা হয়েছে, অবসরের পর।
প্রধান বিচারপতি বক্তব্যের পেছেনে ‘উস্কানি’ থাকতে থাকতে পারে বলে মনে করেন সুরুঞ্জিত। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন স্থিতিশীল হয়ে এসেছে, তখন একটি বিশাল উস্কানি। আমরা ঘর পোড়া গরু। কোনো অসাংবিধানিক শক্তির সঙ্গে আঁতাত করে সাংবিধানিক শক্তি এ ধরনের কথা বলছেন বলে মনে করতে হবে।’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরুঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, দুই একজন বিচারপতির ব্যক্তিগত কাদা ছুঁড়াছুড়ি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা যাবে না। প্রধান বিচারপতি যদি মনে করেন অবসরের পর রায় লেখার রেওয়াজ খারাপ, তাহলে তিনি নতুন কিছু করতে পারেন। কিন্তু পেছনে ফেরার সুযোগ নেই।
আব্দুল মতিন খসরু বলেন, প্রধান বিচারপতির জনসম্মুখে বলা উচিত হয়নি। প্রধান বিচারপতি কোন ব্যক্তি নন, তিনি প্রতিষ্ঠান। তিনি জনগণের শেষ আস্থার প্রতীক। যখন যা ইচ্ছা বলতে পারেন না। পূর্ণাঙ্গ রায় লেখতে এক দুই বছর সময় লাগা উচিত নয়। এক দুই সপ্তাহ বা দুই এক মাসের বেশী লাগা উচিত নয়।
রুস্তম আলী ফরাজি বলেন, অন্যান্য দেশেও অবসরের পর পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা হয়। অতীতের রায় নিয়ে যদি বিতর্ক করা হয়, তাহলে রাষ্ট্রে শূন্যতা সৃষ্টি হবে। ভবিষ্যতে যেনো অবসরের পর রায় লেখতে না হয়, তার জন্য রুল দিতে পারেন প্রধান বিচারপতি। অবসরের ছয় মাস আগে যেনো কোন বিচারপতিকে মামলা দেয়া না হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন