শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

এবার বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে দমকা হাওয়া, সংঘর্ষ

প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে ক্ষোভ, অসন্তোষ এমনকি আর্থিক লেনদেনের বিস্তর অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল কয়েক মাস ধরে। গতকাল রোববার দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের ভেতরে সেই ক্ষোভ দমকা হাওয়া হয়ে মারামরিতে রূপ নেয়, রক্তাক্ত হন এক নেতা। বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের ভেতরে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এই প্রথম। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ৬ষ্ঠ ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ ভালুকার ১১টি ইউনিয়নে নির্বাচনের মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। গুলশান কার্যালয়ে যে রুমে অতি গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক কার্যক্রম হয়, সেই রুমে ঘটে এ ঘটনা।
ইউপি নির্বাচনের শুরু থেকে মনোনয়ন বাণিজ্যের কথা বলা হচ্ছিল। অনেকেই বলছেন, মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে একটি সিন্ডিকেট বাণিজ্য করছেন, যা সবাই জানেন। কিন্তু যে লাগাম ধরার কেউ নেই।
মনোনয়ন বাণিজ্যের পাশাপাশি সম্প্রতি দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন নিয়েও গণমাধ্যমে নানা কথা হচ্ছে। এখানেও অভিযোগ সেই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। কিন্তু ওই সিন্ডিকেটের একজন চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের প্রভাশালী কর্মকর্তা। তিনি চেয়ারপারসনকে বলছেন, একটি গোয়েন্দা সংস্থার পত্রিকাগুলো এসব লিখছে। গতকাল রক্তারক্তির ঘটনার পর ওই কর্মকর্তার জবাব কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন গুলশানের কার্যালয়ের আরেক কর্মকর্তা।
অভিযোগ রয়েছে, মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামত কেন্দ্রে এলে তা পাল্টে যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। সুপরিশকে পাশ কাটিয়ে তারা মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে নিজেদের পছন্দের লোককে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন দিচ্ছেন।
জানা গেছে, গতকাল বেলা ১২টার দিকে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ইউপি নির্বাচনের জন্য চেয়ারম্যার পদে মনোয়নয়ন প্রত্যায়নপত্র নিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফখরুদ্দীন আহম্মেদ বাচ্চুসহ ৭/ ৮জন নেতাকজর্মী গুলশান কার্যালয়ে আসেন। কার্যালয়ের নিচ তলার দাপ্তরিক রুমে ইউপি মনোনয়ন সংক্রান্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্সের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় বাচ্চুর। এর কিছুক্ষন পর সেখানে উপস্থিত হন ভালুকা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান মজু। মজুকে দেখা মাত্রই বাচ্চুু আরও ক্ষুব্ধ হন। এক পর্যায়ে ফখরুদ্দিন বাচ্চু ও মজিবুর রহমান মজু এবং তাদের সমর্থকদের মধ্যে মারামারির শুরু হয়।
সভাপতি পক্ষের অভিযোগ, সাংগঠনিক সম্পাদকের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে মনোনয়ন দিচ্ছেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স। এ খবরে ক্ষিপ্ত হয়ে সভাপতি পক্ষের লোকেরা কার্যালয়ে অবস্থান নেন। এসময় বাচ্চু ছিলেন কার্যালয়ের দপ্তর কক্ষে। তারা এমরান সালেহ প্রিন্সের কাছে এর কারণ জানতে চান। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সেখানে প্রবেশ করেন সাংগঠনিক সম্পাদক। এসময় পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠে। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সেখানে থাকা ভালুকা বিএনপির সভাপতি, যুবদল সভাপতি তারেক উল্লাহ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক রফিবুল হাসান রাসেল, ময়মনসিংহ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর মোহাম্মদ আলম হামলা করেন মজিবর রহমান মজুর ওপর। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রিন্সসহ সেখানে উপস্থিত নেতারা উভয়পক্ষকে কার্যালয় থেকে বের করে দেন। বাইরে দুপক্ষে আরেক দফা মারামারি হয়। মজুসহ কয়েকজনকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাচ্চুর বিরুদ্ধেও অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে তদবির-লবিংয়ের অভিযোগ আছে। এর আগে পৌরসভা নির্বাচনেও বাচ্চুর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আছে কেন্দ্রে। উপজেলা সভাপতি হওয়ায় বাচ্চু ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। যার পক্ষের লোকদের মনোনয়ন দেন।
ফখরুদ্দিন বাচ্চু মারামারির ঘটনা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি অতো বড় কিছু না। মজিবুর রহমান মজু ও স্থানীয় ছাত্রদল নেতা তুহিন (ভালুকা ছাত্রদলের নতুন কমিটি এখনো ঘোষণা হয়নি) মধ্যে হাতাহাতি হয়। অনেক মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আহত হতে পারেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে কি-না সংশ্লিষ্টরাই ভালো বলতে পারবেন।
সাংগঠনিক সস্পাদক মজিবুর রহমান মজু অভিযোগ করেন, ফখরুদ্দিন বাচ্চু, তারেক উল্লাহ চৌধুরী, রফিবুল হাসান রাসেল, আলমগীর মোহাম্মদ আলম তার ওপর হামলার চালিয়েছে। তার অভিযোগ, পুরনো চেয়ারম্যানদের মনোনয়ন না দিয়ে যারা আওয়ামীলীগের সঙ্গে জড়িত তাদের পক্ষে তদবির করছিলেন বাচ্চু।
মারামারির পর বিকেল ৪টার দিকে বিএনপি সমর্থিত ভালুকার বর্তমান ইউপি চেয়াম্যান মোরশেদ আলমসহ কয়েকজন নেতাকর্মী ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে আহত মজুকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর উত্তরায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাসায় যান। আহত মজুকে দেখে ফখরুল বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। যা ঘটেছে তা অত্যান্ত দু:খজনক ও গুরুতর অপরাধ। আপনারা এ বিষয়ে লিখিতভাবে দপ্তরের জমা দেন। প্রকৃত অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন বিএনপি মহাসচিব।
এদিকে ৬ষ্ঠ ধাপের নির্বাচনে সাভার উপজেলার বনগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. সাইফউদ্দিনকে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন, সাভার উপজেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, বনগাঁও ইউনিয়ন বিএনপিসাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন ও সাংগঠনিক সম্পাদক একলাছ উদ্দিন সুপারিশ করেন। কয়েক দিন আগে প্রত্যায়নপত্রের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শাহজাহানের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করেন ডা. সালাউদ্দিন। তখন শাহজাহান তাকে জানান, আমি এ বিষয়ে কিছু জানিনা। আপনি মহাসচিবের সঙ্গে দেখা করেন। শাহজাহানের সঙ্গে কথা বলা শেষে বের হয়ে যাওয়ার সময় সেখানে উপস্থিত এমরান সালেহ প্রিন্সের সঙ্গেও কথা বলেন সালাউদ্দিন। ওই সময় প্রিন্স এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান। সে দ্বিতীয় পছন্দের তালিকায় রয়েছে। এরপর তিনি গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দেখা করেন। সে সময় মির্জা ফখরুল সালাউদ্দিনকে আশ্বস্ত করেন বলেন, সালাহউদ্দিনের প্রার্থীকে (তৃণমূলের সুপারিশ যার পক্ষে) মনোনয়ন দেওয়া হবে। কিন্তু মহাসচিব ও তৃণমূলের নির্দেশ উপেক্ষা করে গতকাল দুপুরে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের পছন্দের প্রার্থী সোহেলকে মনোনয়ন দেয়া হয়।
বিএনপি নেতারা বলছেন, যোগ্য ব্যক্তি যোগ্য স্থানে না থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। আরো আগেই মনোনয়ন বাণিজ্যের বিষয়ে কঠোর হওয়া উচিত ছিল।
এদিকে কয়েকদিন আগে মনোনয়ন দেওয়ার প্রক্রিয়া কাজ করতে বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীমকে সম্পৃক্ত করতে চাইলেও তিনি রাজি হননি। চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসসহ বিএনপির এক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শামীম এ নির্দেশ দেন। তবে শামীমের বক্তব্য ছিল, এখানে নির্বাচনের নামে মনোনয়ন বাণিজ্য হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভূক্ত হয়ে তিনি বাণিজ্যের অপবাদ নিতে চান না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন