শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মেঘনার ভাঙন বৃদ্ধি - জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে ভোলায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন

প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এম এ বারী, ভোলা জেলা সংবাদদাতা : ভোলায় জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ভোলায় নদীভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে। গত প্রায় ৪ দশকে মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার অর্ধশতাধিক বর্গ কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে বাস্তুহারা হয়েছেন লাখের বেশী মানুষ। ভাঙন রোধে এলাকাবাসীর দীর্ঘ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৮০ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হলেও এখন পর্যন্ত সেই কাজ শুরু হয়নি। এতে একের পর এক সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে সমগ্র উপকূলের মানুষ। গবেষণার মাধ্যমে দ্বীপজেলাকে ভাঙন থেকে রক্ষার দাবী এ জেলার আতঙ্কিত মানুষের।
বঙ্গোসাগরের কোল ঘেঁষেই দ্বীপজেলা ভোলায় সত্তর দশকের দিকে শুরু হয় ভাঙন। ৮০ দশকে যার তীব্রতা আরো বাড়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, অপরিকল্পিত বাঁধ, ভাঙন রোধে টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ না করা ও মানবসৃষ্ট নানা কারণে বর্তমানে ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, হাকিমুদ্দিন, তজুমদ্দিন চরফ্যাশন ও মনপুরা পয়েন্ট দিয়ে মেঘনা তেঁতুলিয়ায় তীব্র ভাঙন চলছে। এই ভাঙন এখন ভোলাবাসীরকে শঙ্কিত করে তুলছে।
এমএ তাহের (৭৩) নামে একজন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ভোলা, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন ও চরফ্যাশনে ব্যাপক ভাঙন চলছে। কিন্তু ভাঙন রোধে যে কাযক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে তা কোন কাজেই আসছে না। তাই ভাঙন রোধে টেকশই ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তা না হলে ভোলাকে রক্ষা করা যাবে না।
ভোলা স্বার্থ রক্ষা কমিটির আহবায়ক অমিতাভ রায় অপু বলেন, প্রায় ৭০ দশক থেকে ভাঙন শুরু হলেও আশির দশকে তা অনেক কম ছিলো। কিন্তু দিন দিন এ ভাঙ্গনের পরিমাণ বাড়ছে। এর কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।
তিনি বলেন, নদী ও সাগর মোহনায় লবণাক্ততা বেড়ে গেছে, এই লবণ পানি ও অতি জোয়ার উপকূলে আঘাত হানলে ভাঙ্গনের তীব্রতা আরো বেড়ে যায়। দিন দিন এর রেশ বাড়ছে আর এ কারণেই আমরা ভোলাবাসী হুমকির মুখে রয়েছি।
বোরহানউদ্দিন গঙ্গাপুর এলাকার বাসিন্দা আসলাম শিকদার (৬০) বলেন, ১৯৭০ থেকেই তেঁতুলিয়ার ভাঙন শুরু হয়, এ ভাঙনে ইতোমধ্যেই ৪টি গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছে। কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধ হচ্ছে না।
এদিকে ভোলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব বাহাউদ্দিন বলেন, জলবায়ু নিয়ে কথা হলেও এর থেকে উত্তোরনের কোন কাজ হচ্ছে না। তাই স্থায়ী গবেষণার মাধ্যমে ভোলাকে রক্ষা করতে হবে।
অন্যদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে গত চার দশকে প্রায় ৫৭ কিলোমিটার এলাকা মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাস্তুহারা হয়েছে লাখো মানুষ। বসতভীটা, স্কুল, কলেজ মাদ্রাসাসহ হাটবাজারসহ নানা স্থপনা নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় মানচিত্র থেকে ছোট হয়ে আসছে ভোলা। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ভোলার উপকূলীয় এলাকা। আগামী কয়েক বছরে দ্বীপজেলার জন্য অশনি সংকেত বলেও মনে করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এ ব্যাপারে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন, ভোলার নদী ভাঙনের তীব্রতা অনেক বেশী, বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে দিন দিন ভোলা ছোট হয়ে আসছে।
(পাউবো) বর্তমান উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ ইউনুস বলেন, ভাঙন রোধে বরাদ্দ হয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হবে। এরপরেই কাজ শুরু হবে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজ হবে পরবর্তী মৌসুমে সিসি ব্লকের কাজ শুরু হবে।
পাউবো ডিভিশন-২ চরফ্যাশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহে আলম ও মনপুরার উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম বলেন, প্রতি বছরই বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে মনপুরা ও চরফ্যাশনের ভাঙনের কবলে পড়ছে। বেশী ভাঙছে মাদ্রাজ এবং চর ফয়েজউদ্দিন পয়েন্ট দিয়ে। নদী ভাঙনসহ নানা প্রকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে গ্যাস সমৃদ্ধ ভোলাকে রক্ষার দাবী জানিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন