রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে- মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংবিধানে ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা সরকারের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মানসিকতা। গতকাল সোমবার বিকালে দোয়া মাহফিলে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে বিচার বিভাগÑতারা যখন তাদের স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য রায় দিচ্ছেন, সরকার সেখানে তাদের বিরোধিতা করছে। কারণ তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে চায় না।
দেশে চলমান সংকট নিরসনে সরকারকে আবারো সংলাপে মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের উপায় বের করার আহ্বানও জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে যে সংকটে পড়েছে, তা রাজনৈতিক সংকট, সাংবিধানিক সংকট। এ থেকে মুক্ত হতে হলে সত্যিকার অর্থে জনগনের সরকার ছাড়া এর কোনো বিকল্প নেই। আর সেজন্য দেশনেত্রী যে আহ্বান জানিয়েছেন, তিনি বারবার সরকারকে বলেছেন। আসুন আগে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করি। কিন্তু তারা তা কর্ণপাত করছেন না।
তাই আমাদেরকে সংঘবদ্ধ হয়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারকে বাধ্য করতে হবে, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে সত্যিকার অর্থে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার।
রাজধানীর গোপীবাগে ‘সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারে’ যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার রোগমুক্তি কামনায় এই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে সূত্রাপুর-ওয়ারি-গে-ারিয়া-বংশাল-কোতয়ালী থানা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনসমূহ। এতে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী, এলাকার গণমান্য ব্যক্তিরা অংশ নেন।
সাদেক হোসেন খোকা নিউইয়র্কের মেরোরিয়াল স্নোন কেটারিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দুই-এক দিনের মধ্যে তার একটি জটিল অস্ত্রোপচার হবে।
দেশের বর্তমান অবস্থাকে সংকটজন আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সাদেক হোসেন খোকাসহ বিরোধী দলের এমন কোনো নেতা-কর্মী নেই, যাদের বিরুদ্ধে ২০-৩০-৫০ মামলা নেই। বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান সাহেবের বিরুদ্ধেও একটি নয়, দুটি নয়, অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এভাবে এই সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে চায়।
তিনি বলেন, আজকে (সোমবার) সকালে আমি জামিনের জন্য আদালতে গেছি। সেখানে অসংখ্য নেতা। তারাও প্রত্যেকে আসামি। পরে তাদেরকে জামিন নিতে হয়েছে। আজকে এরকম একটা কারাগারে মধ্যে আমাদেরকে আবদ্ধ করে রেখেছে অনির্বাচত সরকার। তারা জানে নির্বাচন হলে তারা নির্বাচিত হয়ে আসতে পারবে না। সেকারণে মিথ্যা মামলা দিয়ে, জুলুম করে, মানুষকে হয়রানি করে এমনকি খুন-গুম করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। ঢাকা মহানগরের শতাধিক নেতা-কর্মী গুম হয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব।
গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ঢাকা মহানগরকে নতুন করে সংগঠিত হতে হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমি আশা করবো, মহানগর নতুন করে সংগঠিত হয়ে দেশনেত্রীর যে আহবানে সাড়া দিয়ে তারা গণতন্ত্রের আন্দোলনকে সফল করবেন। আমাদের এই আন্দোলনে জয়ী হতে হবে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরে পাবার জন্য আমাদেরকে গণতন্ত্রের এই আন্দোলনে সফল হতে হবে। এতে ঢাকা মহানগরকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে অসুস্থ সাদেক হোসেন খোকাসহ কারাগারে নির্যাতিত হয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, এমকে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, কারাবন্দি সম্পাদক শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমান অসুস্থ হয়েছেন উল্লেখ সকলের জন্য দোয়া চান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।
ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে প্রহসন-তামাশা হচ্ছে। জনগণ তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে না। নির্বাচনে আগের রাতে সব ভোট নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এভাবে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে একে একে ধবংস করে ফেলা হয়েছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কিভাবে সকাল ১০টার মধ্যে সব ভোট নিয়ে নিয়েছে, তা ঢাকাবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। এই দোয়া মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানও বক্তব্য রাখেন। পরে সাদেক হোসেন খোকার আশু রোগমুক্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
এই অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, যুব দলের সাইফূল ইসলাম নিরব, মহিলা দলের শিরিন সুলতানা, ছাত্রদলের রাজীব আহসান, মহানগর নেতা কাজী আবুল বাশার, মোহন, মকবুল ইসলাম খান টিপু, মোজাম্মেল হক মুক্তা, আব্দুুল কাদের, নবী উল্লাহ নবী, বজলুল বাসিত আনজু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুলের মুক্তি দাবি
এর আগে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে শাসন ক্ষমতায় এসে বর্তমান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
ক্ষমতাসীনদের এমন প্রচেষ্টার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, অতীত ইতিহাস ভুলে গেলেও আওয়ামী লীগ অন্তত এটুকু অনুধাবন করতে পারছে যে, জনগণের ওপর অত্যাচার নিপীড়ণের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে এবার ক্ষমতা হারালে আগামীতে ক্ষমতায় আসার সুযোগ অত্যন্ত ক্ষীণ। এই চিন্তা মাথায় রেখেই বর্তমান শাসকগোষ্ঠী এখন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর ক্রমাগত জুলুম নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, তারই ধারাবাহিকতায় খুলনা মহানগর বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফখরুল আলমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ এবং বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার ও নিপীড়ন নির্যাতন চালিয়ে কোনো স্বৈরশাসকই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে সক্ষম হয়নি।
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল খুলনা মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুলকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন