শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

নির্বাচনী সহিংসতা অব্যাহত নিহত ২ : আহত অর্ধশত

প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : দেশের বিভিন্নস্থানে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। এসব সহিংসতায় কমপক্ষে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি এর মধ্যে এবং নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর অবস্থা আশংকাজনক।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জনান, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় ১০ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় নুরুল হক নামে একজনের হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে। আহতদের ফুলবাড়ী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সহিংসতা এড়াতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার নাওডাংগা ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মুসাব্বের আলী মুসা (ধানের শীষ) প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন। নির্বাচনে ইউনিয়ন আ’লীগ সম্পাদক আইয়ুব আলী ভাগ্নে ও বিএনপি প্রার্থী মুসাব্বের আলী মুসা’র পক্ষে কাজ করার অভিযোগে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি হাছেন আলী পরাজিত হওয়ার পর তাকে পার্টি অফিসে মারধোর করে বের করে দেয়। এ ঘটনার পর মুসার সমর্থকরা কুরুষাফেরুষা গ্রামের পল্লী চিকিৎসক নুরুল হকের বাড়িতে হামলা ও তাকে মারপিট করে। পরে পার্শ্ববর্তী বালারহাট বাজারে নুরুল হকের ছেলে শাহীন মিয়া ও আমিনুল ইসলাম নামে অপর একজনকে আটকে রেখে মারপিট করে। খবর পেয়ে আ’লীগের কর্মী-সমর্থকরা সংঘবদ্ধ হয়ে আহত দু’জনকে উদ্ধার করে ফুলবাড়ী হাসপাতালে ভর্তি করে এবং ইউনিয়ন বিএনপি কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
এদিকে ছেলেকে আটকে রেখে মারপিটের কথা শুনে বাবা নুরুল ইসলামের হার্ট অ্যাটাক করে। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে রোববার রাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এ খবরে সোমবার বিক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ কর্মীরা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী পশ্চিম ফুলমতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল হকের বাড়িতে এবং গোরকমন্ডলে বিডিআর বাজারের মোশারফ ও সফুর আলির মুদির দোকানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এসময় মোশারফ, সফুর আলি, হোসেন আলী, আলেপ উদ্দিন, গৌরাঙ্গ আহত হন।
বাগমারায় আরো একজনের মৃত্যু
বাগমারা উপজেলা সংবাদদাতা জানান, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নেই গত ৭মে চতুর্থ ধাপের নির্বাচন স্থগিতের পর ভোটের আমেজ কেটে গিয়ে দেখা দিয়েছে আতংকের ছোঁয়া। দিনে দিনে ভোটার ও প্রার্থীদের মাঝে নেমে আসছে চরম হতাশা ও আতংক। এমন অবস্থায় বাগমারায় সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় নির্বাচন কমিশন গত ৫মে নির্বাচন স্থগিত করে দেয়। এরপরও প্রার্থীরা নির্বাচনী ইমেজ ও নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে এলাকায় মহড়া দেয়া অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন ইউনিয়নে নৌকার ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে কয়েকদফা সংঘর্ষ ও মামলার ঘটনা ঘটে। এদিকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ৭ মে আউচপাড়া ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সরদার জান মোহাম্মাদ এবং বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শহিদের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে হাটগাঙ্গোপাড়া বাজারে সংঘর্ষ বাধে। এসময় সরদার জান মোহাম্মাদ গ্রুপের লোকজন শহিদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। পরে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুজ্জামান শহিদ, পুলিশ ও জান মোহাম্মাদ পক্ষের ত্রিমুখী সংঘর্ষের এক পর্যায়ে সিদ্দিকুর রহমান নামের একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরে রমজান আলী রঞ্জু নামের আরেকজনের মৃতদেহ পাওয়া যায়। এদিকে এঘটনায় গুলিবিদ্ধ জাহিদুল ইসলাম বুলু (৩৮) গতকাল সোমবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।
দেলদুয়ারে পুণঃভোট গণনার দাবি
দেলদুয়ার উপজেলা সংবাদদাতা : টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে পুণঃভোট গণনার দাবিতে থানা ঘেরাও করেছে এক প্রার্থীর সমর্থকরা। উপজেলার আটিয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাজ্জাত হোসেন আজাদের ঘোড়া প্রতীকের সমর্থকরা সোমবার সকালে থানা ঘেরাও করতে এলে এ সংঘর্ষ বাধে। চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম মল্লিক ৩ হাজার ৬শ’ ২৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়। ঘোড়া প্রতীকে সাজ্জাত হোসেন আজাদ পায় ৩ হাজার ৩শ’ ৭৯ ভোট। আজাদের সমর্থকরা পুনঃভোট গণনার দাবিতে থানা ঘেরাও ও ভাঙচুর করায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ ঘটে। এসময় পুলিশ গুলি ছুঁড়ে, লাঠি চার্জ ও টিআর গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়। পরে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহাদত হোসেন কবির জানান, আটিয়া ইউনিয়নের ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী সাজ্জাত হোসেন আজাত তার কাছে পুণঃভোট গণনার দাবি করেন। তিনি তাকে জেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করার পরামর্শ দেন।
ঝিকরগাছার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে জখম
যশোর ব্যুরো : যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নে বেসরকারিভাবে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান নেসার উদ্দিনকে কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। সোমবার বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার রাজবাড়ীয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সদস্য।
স্থানীয়রা জানান, সদ্য নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান নেসার উদ্দীন উপজেলার নায়রা গ্রামে আত্মীয়র বাড়ি থেকে ভাইপোর সাথে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। রাজবাড়ীয়া এলাকায় পৌঁছালে ৮-১০ জন যুবক পথরোধ করে তাকে কুপিয়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। চিৎকার শুনে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় বাঁকড়া ক্লিনিকে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
মনোহরগঞ্জে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তা-ব
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সংবাদদাতা : নির্বাচনে জয়লাভের এক দিন পরেই কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের মৈশাতুয়া ইউনিয়নের হাজিপুরা এলাকায় তা-ব চালিয়েছে স্থানীয় চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও তার বাহিনীর সদস্যরা। গত রোববার সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত একটানা এ তা-ব চালিয়ে অন্তত ৭টি বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে ওই সন্ত্রাসীরা। এছাড়া হাজিপুরা বাজার এলাকায় প্রায় অর্ধশত দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে তারা। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে নেছার আহমদ ও শরীফ উদ্দিনসহ ৫ জনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, গত শনিবার মনোহরগঞ্জ উপজেলার মৈশাতুয়া ইউপিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোক্তার হোসেন সুমনের কর্মী-সমর্থক ও এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে পিটিয়ে বের করে বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে কেন্দ্র দখল করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তফা কামাল। পরদিন রোববার বিকেলে ওই ইউনিয়নের হাজিপুরা এলাকার ভোটারদের সঙ্গে দেখা করতে যান ওই স্বতন্ত্র প্রার্থী মোক্তার হোসেন সুমন। খবর পেয়ে চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল প্রায় অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে এলাকাবাসী উপর তান্ডব শুরু করে। এ সময় মোস্তফা কামালের লোকেরা মোক্তার হোসেন সুমনকে হত্যার চেষ্টা চালায়। তবে অল্পের জন্য তিনি রক্ষা পান। পরে মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে তার বাহিনীর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মতিনের বাড়িসহ অন্তত ৭টি বাড়িতে পেট্রল ঢেলে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। এছাড়া হাজিপুরা বাজারে প্রায় অর্ধশত দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় তারা। হামলায় ২০জন গুরুতর আহত হন।
ব্রাহ্মণপাড়ায় বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সংবাদদাতা : কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মহালক্ষ্মীপাড়া গ্রামে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের পরের দিন গত রোববার সন্ধ্যায় সন্ত্রাসীরা ২টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও মারধর করে আহত করে। এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত সাবেক মেম্বার সুজন সাংবাদিকদের জানান, ৮ মে সন্ধ্যায় একই গ্রামের হোসেন, শরিফুল ইসলাম, মামুন, রুহুল আমীন, জাকির, সহিদ, আলমগীর তাদের দল বল নিয়ে আমার বাড়ীতে প্রবেশ করে আমার ঘরে এলোপাতারী হামলা ও ভাংচুর করে ২ লক্ষ টাকার মালামাল লুটপাট করে। একই দিন তারা একই গ্রামের করিম হাজীর বাড়ির সানু মিয়ার বাড়ির ঘরদরজা ভাঙচুর করে মহিলাকে মারধর করে দেড় লক্ষ টাকার মালামাল লুটপাট করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন