এক
ইলম অর্জন করা প্রত্যেকের উপর ফরজে আইন। ইলম অর্জন থেকে কাউকে বিরত থাকা যাবে না। যে ইলম অর্জন করা ফরজে আইন, যে ইলম অর্জন থেকে কাউকে বিরত থাকা যাবে না সেই মাহিমান্বিত ইলম হচ্ছে ইলমে দ্বীন। মানব-জীবনে ইলম দ্বীন বা ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের গুরত্ব অপরিসীম। ধর্ম ছাড়া যেমন কেউ মানুষ হতে পারে না তেমনি ইলমে দ্বীন ছাড়া কেউ মনুষ্যত্ব অর্জন করতে পারে না। মনুষ্যত্ব বিকাশের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ইলমে দ্বীন। এজন্য আল্লাহপাক মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাজিল করে সর্বপ্রথম ইলমে দ্বীন শিক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে- “পড়, তোমার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন- সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আ’লাক হতে। পড়, আর তোমার প্রতিপালক মহামহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানতো না”(সূরা আলাক : আয়াত-১-৫)। ইলমে দ্বীন হচ্ছে সেই ইলম যা অর্জন করে আল্লাহকে চিনা যায়, জানা যায়, তাঁর নৈকট্য লাভ করা যায়, সত্য ও সঠিক পথে চলা যায়, এবং সব সমস্যার সার্থক সমাধান করা যায়। ইলমে দ্বীন অর্জন করেই মানুষ দুনিয়া-আখেরাতে শান্তি ও মুক্তি লাভ করতে পারবে বলেই আল্লাহপাক সর্ব প্রথম ইলমে দ্বীন শিক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন। যার মধ্যে ইলমে দ্বীন নেই সে সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজ হতে বাধ্য। দ্বীনি শিক্ষার অভাব সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অশান্তির মূল কারণ। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষা নেই বললেই চলে। এজন্য আমাদের সমাজে অশান্তির অগ্নিশিখা দাউ দাউ করে জ্বলছে। শান্তির দূরতম লক্ষণ কোথাও দৃষ্টি গোচর হচ্ছে না। স্থানে স্থানে স্কুল কলেজ ভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এসব কলেজ-ভার্সিটি থেকে অগণিত শিক্ষিত লোক বের হয়ে দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত আছেন। প্রশ্ন হল- এত শিক্ষিত লোক থাকার পরও নীতিবান লোক পাওয়া যাচ্ছে না কেন? দুর্নীতি মামলার আসামী এমন সকল সরকারী কর্মকর্তাদের দেখা যায় যারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। প্রশ্ন হলো এত উচ্চ শিক্ষিত হয়ে এরা দুর্নীতিতে আসক্ত কেন? এরা দুর্নীতি করে কেন? সন্ত্রাসীদের বেলায়ও আমার একই প্রশ্ন। এর জবাব হল- স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেয়া হয় না বলেই এখান থেকে নীতিবান লোক বের হয় না। নীতিবান হওয়ার মূল মন্ত্র হচ্ছে ইলমে দ্বীন। ইলমে দ্বীন তথা ইলমে শরীয়ত ও ইলমে মারিফতের অধিকারী কোন ব্যক্তি কখনও সন্ত্রাস-দুর্নীতিতে লিপ্ত হতে পারে না, সন্ত্রাস দুর্নীতিতে সহযোগিতা করতে পারে না। নৈতিকতা শিক্ষার একমাত্র স্থান হচ্ছে দ্বীনি প্রতিষ্ঠান। দ্বীনি প্রতিষ্ঠান থেকেই দ্বীনি শিক্ষা লাভ করতে হয়।
এজন্য দ্বীন শিক্ষার প্রসারের জন্য দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার গুরুত্ব অপরিসীম। যারা ইলমে দ্বীন অর্জন করে তাদের মার্যাদা অতি উচ্চ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে- “তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছে এবং তোমাদের মধ্য থেকে যাদেরকে ইলম (ইলমে শরীয়ত ও ইলমে মারিফত) দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন” (সূরা মুজাদালাহ : আয়াত-১১)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে “বল, যারা জানে ও যারা জানে না তারা কি সমান? (সূরা জুমার : আয়াত-৯)। উক্ত আয়াতগুলোতে ইলম বলতে ইলমে শরীয়ত ও ইলমে মারিফত উভয় প্রকার ইলমকেই বুঝানো হয়েছে।
কারো মধ্যে উক্ত দুপ্রকার ইলমের কোন একটি অনুপস্থিত থাকলে তাকে কখনও আলেম বলা যাবে না। আলেম হতে হলে তাকে ইলমে শরীয়ত ও ইলমে মারিফত অবশ্যই অর্জন করতে হবে। ইলমে শরীয়ত ও ইলমে মারিফতের পূর্ণাঙ্গ রূপই হচ্ছে ইলমে দ্বীন। এই বিশ্বে চিকিৎসাবিদ, ভূতত্ত¡বিদ, গণিতবিদ ও দার্শনিক হিসেবে যারা বিশ্বখ্যাতি অর্জন করেছেন তারা সবাই ছিলেন ইলমে দ্বীনে অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী। ইলমে দ্বীন ব্যতীত কেউই চিকিৎসাবিদ, বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক হতে পারবেন না। সকল ক্ষেত্রে প্রকৃত জ্ঞান, তথ্য ও তত্ত¡ পেতে হলে তাকে অবশ্যই ইলমে দ্বীন অর্জন করতে হবে।
দুনিয়া ও আখেরাতের অশেষ কল্যানে ইলমে দ্বীন শিক্ষার বিকল্প নেই। ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া মুক্তির কোনো উপায় নেই। ইলমে দ্বীন শিক্ষার গুরুত্ব বিষয়ক কয়েকখানা আয়াত নিম্নে উপস্থাপন করা হল:-
১.“তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দেন, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সবিশেষ অবহিত” (সূরা বাকারা : আয়াত ২৮২)। ২.“আল্লাহ তোমার প্রতি কিতাব ও হিকমত নাজিল করেছেন এবং তুমি যা জানতেনা তা তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন, তোমার প্রতি আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে। (সূরা নিসা : আয়াত-১১৩)। ৩.“বল, হে আমার প্রতিপালক, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি কর” (সূরা ত্বাহা : আয়াত-১১৪)। ৪.“তিনি উম্মীদের মধ্যে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্যে হতে যে তাদের নিকট আবৃত্তি করে তাঁর (আল্লাহর) আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমত : ইতিপূর্বে তো এরা ছিল ঘোর বিভ্রান্তিতে” (সূরা জুমআ : আয়াত-২-৩)। ৫.“অতঃপর তারা সাক্ষাত পেল আমার বান্দাদের মধ্যে একজনের, যাকে আমি আমার নিকট হতে অনুগ্রহ দান করেছিলাম ও আমার নিকট হতে শিক্ষা দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান ” (সূরা কাহাফ : আয়াত-৬৫)। ৬. এবং বোধশক্তি সম্পন্ন লোক ব্যতীত কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না” (সূরা আল-ইমরান : আয়াত-৭)। ৭.“আমি তোমাদেরকে যা বলবো তা আমার প্রতিপালক আমাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা হতে বলবো।” (সূরা ইউসূফ : আয়াত-৩৭)। ৮.“আর আমি তাকে তোমাদের জন্য বর্ম নির্মাণ শিক্ষা দিয়েছিলাম, যাতে তা তোমাদের যুদ্ধে তোমাদেরকে রক্ষা করে সূতরাং তোমারা কি কৃতজ্ঞ হবে না? (সূরা আম্বিয়া : আয়াত-৮০)। ৯.“আল্লাহ তাকে (দাউদ আ.) রাজত্ব ও হিকমত দান করলেন- এবং যা তিনি ইচ্ছা করলেন তা তাকে শিক্ষা দিলেন” (সূরা বাকারা : আয়াত-২৫১)।
ইলমে দ্বীন ছাড়া মানবতার মুক্তির কোন উপায় নেই। ইলমে দ্বীন অর্জন করা প্রত্যেকের উপরই ফরজ। এজন্য হাদীসে ইলম শিক্ষার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। হযরত আনাস (রা.) বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- “ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নরনারীর উপর ফরজ” (ইবনে মাজাহ)। ইলমে দ্বীন অর্জন করা বা ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেয়া এতই মর্যাদাপূর্ণ যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেন- একবার রাসূল (সা.) তার মসজিদে দুটি মজলিসের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি বললেন- উভয় মজলিসেই ভালো কাজ চলছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন