দিকনির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী
সড়কে যেভাবে চলবেন : ডিএমপি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের পর আগামীকাল শনিবার বিজয় সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। বিশাল এ বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে করা হচ্ছে নানা আয়োজন। অনুষ্ঠানস্থল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ সাজানো হচ্ছে আশেপাশের পুরো এলাকা। নেতাকর্মীদেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে উৎসব আমেজে সমাবেশে আসার। দলটি আশা করছে সমাবেশে কয়েক লাখ নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ যোগ দেবে।
এ সমাবেশ সর্ব-বৃহৎ সমাবেশে রুপান্তরীত করতে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী জেলার নেতাকর্মীরাও যোগ দেবে। বিজয় উদযাপন করতে ব্যানার, ফেস্টুন, ঢাক-ঢোল, নৌকা বানিয়ে নিয়ে আসবে। আগামীকাল দুপুর আড়াইটায় এ সমাবেশ শুরু হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা তৃতীয় বার ও মোট চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হওয়াতে দলের প্রধান শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনাও জানাবে আওয়ামী লীগ। দলটি বলছে, একাদশ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়েল সকল কৃতিত্ব দলের সভাপতি শেখ হাসিনার। সমাবেশে অংশ নেবেন আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের শরিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, সাংবাদিক, কবি-সাহিত্যিক, পেশাজীবী, সংস্কৃতি ও বিনোদন জগতের প্রতিনিধি, কৃষক-শ্রমিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
গতকাল সভাস্থল ঘুরে দেখা গেছে নৌকা আকৃতির মঞ্চ প্রস্তুতের কাজ শেষ পর্যায়ে। শিল্পী ও শ্রমিকেরা কাজ করছেন পুরো দমে। প্যান্ডেলের ভিতরে সরকারের নানা উন্নয়ন ও দলের বিভিন্ন সময়ের চিত্র তুলে ধরতে নেয়া হচ্ছে নানা প্রস্তুতি।
পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে সাজানো হচ্ছে রঙিন সাজে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস, শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, শিক্ষা ভবন মোড়, সচিবালয়ের আশপাশ এলাকা, মৎস্য ভবন, কাকরাইল, সমাবেশস্থল থেকে গণভবন পর্যন্ত সড়কেও জ¦লবে লাল-সবুজ বাতি। টানানো হচ্ছে নানা রঙের ব্যানার-ফেস্টুন।
এদিকে সমাবেশের দিন সকাল থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবে সেচ্ছাসেবক লীগ। আর এ বিষয়ে সমন্বয় করবেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। সকাল ১১টা থেকে সমাবেশে প্রবেশের জন্য খুলে দেয়া হবে। মহিলাদের প্রবেশের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে।
দুপুর ১২টা থেকে শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দেশ বরেণ্য শিল্পীরা নাচ গানের মাধ্যমে প্রাণবন্ত করে রাখবে সমাবেশ। দলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীশ কুমার উকিল ইনকিলাবকে বলেন, জয় বাংলার গান, স্বাধীনতার গানের মাধ্যমে শুরু করা হবে অনুষ্ঠান। এছাড়া এবারের নির্বাচনী থিম সং’এর দ্বিতীয় ভার্সনে ‘জিতেছে এবার নৌকা’ উপস্থাপন করা হবে। অনুষ্ঠানে গান গাইবেন শিল্পী মমতাজ বেগম, রফিকুল ইসলাম, চন্দনা মজুমদার, আঁখী আলমগীর, জলের গান ব্যান্ড। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিবেদন করে ‘আপনার জন্ম একটি নতুন সময়েল ইঙ্গিত’ কবিতা আবৃত্তি করবেন কবি রাশেল আশেকী।
সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা সকলেই মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন। সাথে গুণীজনেরাও মঞ্চে উপবিষ্ট থাকবেন। দলের নেতারা বলছেন, বিজয়েল পরবর্তী দিক নির্দেশনা মূলক বক্তব্য দিবেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে গতকাল সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা বর্তমান সরকারের মেয়াদে মুজিব বর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। আমরা উন্নত বাংলাদেশ ও ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহন করেছি। এসকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেবেন। এছাড়া ঢাকাবাসীকে সাময়িক দুর্ভোগের জন্য অগ্রীম দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে সমাবেশে বৃহৎ শো-ডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা লীগ। থানায় থানায় বর্ধিত সভা হচ্ছে। ভাগ করে দেয়া হচ্ছে দায়িত্ব।
এদিকে শনিবারের সমাবেশের উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও আশেপাশের এলাকায় যান চলাচলে সুনির্দিষ্ট বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। গতকাল সকালে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় বলা হয়, সমাবেশে রাজধানীর গাবতলী, মিরপুর রোড হয়ে আসা নেতাকর্মীরা সাইন্সল্যাব-নিউমার্কেট হয়ে নীলক্ষেতে নেমে পায়ে হেঁটে টিএসসি হয়ে বিভিন্ন গেট দিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করবেন।
আগতদের বাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর এবং নীলক্ষেত থেকে পলাশী পর্যন্ত রাস্তার উভয়পাশে এক লাইনে পার্কিং করা যাবে। উত্তরা থেকে এয়ারপোর্ট রোড হয়ে মহাখালী-মগবাজার-কাকরাইল চার্চ-রাজমনি ক্রসিং-নাইটেংগেল-পল্টন মোড়-জিরো পয়েন্ট অথবা খিলক্ষেত ফ্লাইওভার-বাড্ডা-গুলশান-রামপুরা রোড- মৌচাক ফ্লাইওভার-মালিবাগ-শান্তিনগর-রাজমনি ক্রসিং-নাইটেংগেল হয়ে পল্টনমোড়/জিরোপয়েন্ট হয়ে আগত ব্যক্তিরা পল্টন মোড় নেমে পায়ে হেঁটে দোয়েল চত্বর হয়ে উদ্যানের বিভিন্ন গেট দিয়ে প্রবেশ করবেন এবং তাদের বাসসমূহ মতিঝিল এলাকায় পার্কিং করবেন। উত্তরা থেকে আসা গাড়ি সমূহের পার্কিং স্থান মতিঝিল, গুলিস্থানে সংকুলান না হলে প্রয়োজনে হাতিরঝিল এলাকায় পার্কিং করা যাবে।
পূর্বাঞ্চল থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে এবং দক্ষিণাঞ্চল থেকে পোস্তগোলা হয়ে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে আগত ব্যক্তিবর্গ গুলিস্তানে নেমে পায়ে হেঁটে জিরো পয়েন্ট- দোয়েল চত্বর হয়ে অনুষ্ঠানস্থলে গমন করতে বলা হয়েছে এবং তাদের বাসসমূহ মতিঝিল/গুলিস্থান এলাকায় পার্কিং করা যাবে।
এছাড়া যারা মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে চাঁনখারপুল হয়ে গমন করবেন তারা চাঁনখারপুল নেমে পায়ে হেঁটে দোয়েল চত্বর হয়ে উদ্যানের বিভিন্ন গেট দিয়ে প্রবেশ করবেন এবং তাদের বাসসমূহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়াম মাঠে পার্কিং করা যাবে। বাবুবাজার ব্রিজ হয়ে আগত ব্যক্তিরা গোলাপশাহ মাজারে নেমে পায়ে হেঁটে হাইকোর্ট- দোয়েল চত্বর হয়ে উদ্যানের বিভিন্ন গেট দিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করবেন এবং তাদের বাসসমূহ গুলিস্তান এলাকায় পার্কিং করবেন।
শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত সড়ক সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য বন্ধ থাকবে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারদিকের রাস্তায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। অনুষ্ঠানস্থলে প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন ব্যক্তির যাতায়াত উপলক্ষে ওইদিন ভোর হতে অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনুষ্ঠান স্থলের চারপাশের বিভিন্ন ইন্টারসেকশন যেমন- বাংলামটর, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, শাহাবাগ, কাটাবন, নীলক্ষেত, পলাশী, বকশীবাজার, চাঁনখারপুল, গোলাপশাহ মাজার, জিরো পয়েন্ট, পল্টন, কাকরাইল চার্চ, অফিসার্স ক্লাব, মিন্টু রোড ক্রসিংগুলো থেকে গাড়ি ডাইভারশন দেয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। অনুষ্ঠানস্থলে আগত ব্যক্তিদের কোনো প্রকার হ্যান্ডব্যাগ, ট্রলি ব্যাগ, দাহ্য পদার্থ বা ধারালো কোনো বস্তু বহন না করাসহ কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া সর্বসাধারণকে অনুষ্ঠানস্থল এবং এর আশেপাশের এলাকা দিয়ে ভারী/হালকা যানবাহনসহ গমনাগমন পরিহার করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন