নাছিম উল আলম : ভাটি মেঘনায় সুষ্ঠু ফেরি পারপার নিশ্চিত না হওয়ায় চট্টগ্রাম-বরিশাল-খুলনা বিভাগীয় সদরসহ দেশের ৩টি সমুদ্রবন্দরের সরাসরি সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা এখনো বিপর্যয়ের কবলে। ইলিশা ঘাটে ভাঙনের কারণে গত ১২ এপ্রিল থেকে ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মধ্যবর্তী ভাটি মেঘনার ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিএ এবং আইডব্লিউটিসি। বিকল্প ব্যবস্থায় ভোলার ভেদুরিয়া ঘাট থেকে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট পর্যন্ত ফেরি চলাচল শুরু করতে গিয়ে এ রুটের দূরত্ব বেড়ে যায় ২৮ কিলোমিটারের স্থলে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। গত বছরও বর্ষা মওসুমে প্রবল ¯্রােত ও ভাঙনের কারণে ইলিশা ঘাট বন্ধ করে দিয়ে বিকল্প রুটে ফেরি চালু করা হলেও এতে পারাপারে যথেষ্ট সমস্যা সৃষ্টি হয়। বিকল্প রুটে পারপারের সময় লাগছে আড়াই ঘণ্টার স্থলে প্রায় সাড়ে ৭ ঘণ্টা। ফেরিগুলোতে যানবাহন বোঝাই ও খালাস করতে আরো লাগছে অন্তত এক ঘণ্টা। এতে করে ভোলা-লক্ষ্মীপুর সেক্টরে বিআইডব্লিউটিসির কে-টাইপ ফেরি ‘কিষানী’ ও ‘কনকচাঁপা’ দৈনিক গড়ে দু’টি রাউন্ড ট্রিপে ১ শ’ যানবাহানও পারাপার করতে পারছে না।
ফলে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর ছাড়াও চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগীয় সদরসহ এ অঞ্চলের জেলাসমূহ এবং বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দরের সাথে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সরাসরি সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের ওপর যানবাহনের চাপও বাড়ছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাথে ভোলা, বরিশাল, খুলনা, যশোর এবং বেনাপোল ও ভোমরা এলাকার সড়কপথে দূরত্বও বেড়ে গেছে দেড় শ’ থেকে আড়াই শ’ কিলোমিটার পর্যন্ত।
২০০৮ সালে সাময়িকভাবে দু’টি কে-টাইপ ফেরির সাহায্যে ভোলা-লক্ষ্মীপুর ফেরি সার্ভিস চালু করা হলেও আজ পর্যন্ত ঐ সেক্টরে যেমনি কোনো উপকূলীয় ফেরি সংগ্রহ করা হয়নি, তেমনি ভোলা প্রান্তের ইলিশাতে ফেরিঘাটটিও টেকসই এবং বারো মাস পরিচালন উপযোগী করতে সচেষ্ট হয়নি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ তাদের অধীনস্থ সংস্থাগুলো।
ফলে বছরজুড়েই এ ফেরি সেক্টরে হয় নাব্যতা সঙ্কট, নয়তো প্রবল ¯্রােতে ভাঙনের কবলে পড়ে ফেরিঘাট বিপন্ন হচ্ছে। ফলে কখনো মাঝ মেঘনায় ডুবো চরে ফেরি আটকা পড়ছে, নয়তো ভোলা প্রান্তের ইলিশঘাট দিয়ে ফেরি পরিচালন ব্যাহত হচ্ছে। এবার গত এপ্রিলের প্রথম ভাগ থেকে ভাঙনজনিত কারণে ইলিশা ঘাটটি পরিত্যক্ত হলেও ভাটির সময় ফেরিগুলো লক্ষ্মীপুর প্রান্তের ঘাটের অদূরে রহমতখালী চ্যানেলে প্রবেশ করতে পারছে না।
গত ১৫ এপ্রিল থেকে ইলিশা ঘাটের পরিবর্তে প্রায় ৭০ কিলোমিটার ঘুরে ফেরিগুলো ভেদুরিয়া থেকে লক্ষ্মীপুরে যানবাহন পারাপার করলেও এক মাসের মাথায় একটি বিকল্প চ্যানেল চালু করতে যাচ্ছে বিঅইডব্লিউটিএ। ‘মহিষের চর’ চ্যানেলটি চালু হলে এ ফেরি সেক্টরে দূরত্ব বর্তমানের ৭৫ কিলোমিটারের স্থলে ৪৫ কিলোমিটারে হ্রাস পাবে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএর দায়িত্বশীল মহল। আজকালের মধ্যেই নতুন চ্যানেলে ফেরি চলাচল শুরু করবে বলে কর্তৃপক্ষ জানালেও ইলিশাঘাট চালু করে কবে নাগাদ দেশের দীর্ঘতম এ ফেরি সেক্টরে যানবাহন পারপার নির্বিঘœ করা সম্ভব হবে তা বলতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
তবে এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভোলা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী গতকাল ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, ‘ইলিশাঘাট এলাকায় প্রায় ৫ কিলোমিটার নদীভাঙন রোধে ২৮০ কোটি টাকার একটি নদী তীর রক্ষা প্রকল্প একনেকের অনুমোদন লাভ করছে। আগামী অর্থবছরে ঐ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন শুরু হবে। প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী সিসি ব্লক দিয়ে মেঘনার ৫ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন রোধ সম্ভব হলে ইলিশা ফেরিঘাটটিও সারা বছর পরিচালন উপযোগী হবে’। পাশাপাশি আসন্ন বর্ষায় ভাঙনের তীব্রতা রোধে আগামীকাল থেকেই ইলিশার আগে-পরের অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরুর হবে বলেও জানিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। এতে করে আসন্ন বর্ষায় ভোলার ঐ এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা কিছুটা হলেও প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জানিয়েছেন।
এদিকে ভোলার ইলিশা প্রান্তে বর্তমান ফেরিঘাট থেকে দুই কিলোমিটার উজানে ‘জোড়া খালের মুখ’ এলাকায় ফেরিঘাটটি স্থানান্তর করতে পারলেও বর্ষা মওসুমের ভাঙন ও শুষ্ক মওসুমে ঘাটের নাব্যতা সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান মিলবে বলে আশা করছে বিআইডব্লিউটিএর প্রকৌশল বিভাগ। তবে মহাসড়ক থেকে নদীতীর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার রাস্তাটি এলজিইডির এবং তা ভারী যানবাহন চলাচল উপযোগী নয়। যত দ্রুত সম্ভব ঐ সড়কটুকু উন্নয়নের লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার নৌপরিবহন মন্ত্রী স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে একটি ডিও লেটার প্রদান করেছেন বলে জানা গেছে। তবে এ লক্ষ্যে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও ঐ রাস্তা উন্নয়ন করে ফেরিঘাট স্থানান্তর করতে অন্তত এক বছর সময় লাগতে পারে। অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভোলা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর মতে, ২০১৭ সালের বর্ষার আগে তারা ইলিশা প্রান্তের বর্তমান ফেরিঘাটটি ঝুঁকিমুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছেন।
ফলে দেশের দীর্ঘতম ভোলা-লক্ষ্মীপুর সেক্টরে ফেরি সার্ভিস উন্নয়নে ন্যূনতম আরো এক বছর অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন