স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীসহ সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নাশকতা ও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধের লক্ষ্যে দেশজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জামায়াতের আমির ও সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসিকে কেন্দ্র করে এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজধানীসহ দেশব্যাপী এ কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে এর চারপাশে এবং রাজধানীর মোড়ে মোড়ে মোতায়েন করা হয় প্রচুর পুলিশ। সচিবালয়, সংসদ ভবন, সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও মন্ত্রীপাড়ায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পোশাকধারী র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মোতায়েন করা হয়। কারা অধিদপ্তরের গেট থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া দেশের সব কয়টি কারাগারেও বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। গতকাল সন্ধ্যার পরপরই নগরীতে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত র্যাব-পুলিশ।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, জামায়াতের আমির নিজামীর ফাঁসির রায় যে কোনো সময় কার্যকর করা হতে পারে। আর এ জন্যই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মহানগরী, জেলাশহর ও উপজেলা পর্যায়ে পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। বিশেষ করে জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত জেলাগুলোতে পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়।
পুলিশের আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, সরকারি সম্পদ এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া পুলিশের দায়িত্ব। কোনো বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুর্বৃত্তরা যাতে কোনো ধরনের নাশকতা করতে না পারে সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করাই পুলিশের দায়িত্ব, তাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।
কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, কারাগারকেন্দ্রিক নিরাপত্তাকর্মীরা আগত লোকজন এবং যানবাহনে নজরদারি করছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টার পর কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে পুলিশের সঙ্গে র্যাব দিয়ে তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরী করা হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও সাদা পোশাকে সামনের রাস্তা দিয়ে চলাচল করা মানুষের গতিবিধি নজরদারি করেন। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় কারাগারের আশপাশ এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
চকবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বারেক জানান, কারাগারের প্রধান গেটের সামনে চার প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে এ সংখ্যা বাড়তে পারে। র্যাবের শতাধিক সদস্যও যোগ দিয়েছে। র্যাব-১০ সার্বক্ষণিক কাজ করছে।
লালবাগ জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মুফিদুল ইসলাম বিকেলে বলেন, রাতে নিরাপত্তা আরো বাড়ানো হতে পারে। এ জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক ফোর্স মোতায়েন রয়েছে।
কারা সূত্র আরো জানায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদ- যে কোনো সময় কার্যকর করা হবে।
থমথমে সাঁথিয়া, নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা পাবনা
জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকরকে ঘিরে গতকাল (মঙ্গলবার) নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয় গোটা পাবনা জেলা। নিজামীর জন্মস্থান জেলার সাঁথিয়ায় নেওয়া হয় অতিরিক্ত সতর্ক ব্যবস্থা। যে কোনো পরিস্থিতি ঠেকাতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতয়েন করা হয়। গতকাল বিকেল থেকেই পুরো সাঁথিয়াজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে।
পুলিশ সুপার আলমগীর কবির এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, যে কোনো নাশকতা ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, নিজামীর জন্মস্থান সাঁথিয়ার মনমথপুর গ্রাম এবং জামায়াত অধ্যুষিত গ্রামগুলো, যেমনÑসলন্দি, ধোপাদহ, পুরাট, কুঠিপাড়া, সোনতলা এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। ৭টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়। সন্দেহভাজনদের তল্লাশি ও নজরদারি করা হয়।
সাঁথিয়া থানার ওসি নাসির উদ্দিন জানান, পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ জন জামায়াত-শিবির কর্মীকে নাশকতার আশঙ্কায় গ্রেফতার করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন