স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় কার্যকরের আদেশ অতিসত্বর বাতিল করার দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক নিজামীর পক্ষের সাক্ষীর সংখ্যা কমানো, সরকারি সাক্ষীদের জেরা করতে না দেয়া, বিচারকের স্কাইপ কেলেঙ্কারী, বিচারাধীন মামলা নিয়ে বহিরাগত ব্যক্তির সঙ্গে বিচারকের গোপন পরামর্শ করে কৌশল নির্ধারণ, বিচার প্রক্রিয়ায় আসামিকে আইনগত অধিকার না দেয়া, গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির বিচার আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী না হওয়া এবং ন্যায়বিচার নিয়ে প্রশ্ন থাকার অভিযোগে এই রায় কার্যকর করা থেকে বাংলাদেশ সরকারকে বিরত থাকার জন্য বলেছে সংগঠনটি। একইসঙ্গে সংগঠনটি বলছে, ট্রাইব্যুনালের দেয়া আগের মৃত্যুদ-াদেশগুলোর ক্ষেত্রেও ন্যায় বিচার নিয়ে একাধিক প্রসিদ্ধ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক তাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। গত সোমবার রাতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করেছে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন এইচআরডব্লিউ।
আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংগঠনটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যেকোন পরিস্থিতিতেই মৃত্যুদ-কে স্থায়ী সমাধান মনে করে না। এটাকে অমানবিক ও নিষ্ঠুর শাস্তি হিসেবেই বিবেচনা করে সংগঠনটি।
অ্যাডামস বলেন, যখন একটি বিচার প্রক্রিয়ার ন্যায়বিচার ও আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড রক্ষা করার বিষয়ে একাধিকবার প্রশ্ন ওঠে, তখন তা বিশেষ একটি সমস্যা হিসাবেই থেকে যায়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ খুব জোরালোভাবেই চায় যে, বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাপরাধের যে ঘটনা ঘটেছে, তার সুষ্ঠু বিচার ও জবাবদিহিতা হোক। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়ায় যেভাবে ত্রুটিপূর্ণ বিচার হচ্ছিল তার অনেকগুলোর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল ন্যায়বিচারের প্রশ্নে। কিন্তু সেগুলো আমলে নেয়া হয়নি। কিছু মামলার ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার না করা নিয়ে যথেষ্ট প্রমাণ থাকার পরেও মৃত্যুদ-াদেশ দিয়েছে আদালত।
আন্তর্জাতিক এই সংগঠনটি বলছে, বাংলাদেশের সংবিধানের সমস্যাগ্রস্থ অনুচ্ছেদ ৪৭এ (১) ধারায় বলা হয়েছে, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা করা হবে না। দ্রুত বিচার করার ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালও এর আওতায় থাকে। সংবিধান সংশোধন করে আনা এই ক্ষতিকর অনুচ্ছেদের কারণে বিচক্ষণ বিচারকগণ অন্যান্য আসামিদের মত যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের আইনগত অধিকার ও বিচার প্রক্রিয়াকে অস্বীকার করেছে। অর্থাৎ সাধারণ মামলার আসামিরা যেভাবে আইনি সুবিধা ও বিচার প্রক্রিয়া পায়, তা এ যুদ্ধাপরাধের অপরাধে অভিযুক্তদের দেয়া হয়নি।
অ্যাডামস বলেন, বিচারপতি শুধু ন্যায় বিচারের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থার সেবা করে যাবেন আর এটাই হওয়া উচিৎ। তিনি আরো বলেন, অতি দ্রুত ফাঁসির রায়সহ এই রকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে সম্ভাব্য সব রকম ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে করে অভিযুক্ত ব্যক্তি তার সকল প্রশ্ন ও আনীত অভিযোগের ব্যাপারে সঠিক উত্তর পায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন