রাজধানীর যাত্রাবাড়ি (মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার) থেকে ডেমরা (সুলতানা কামাল সেতু) পর্যন্ত মহাসড়কটি ৪ লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এটিসহ ৮টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক)। গতকাল মঙ্গলবার নতুন সরকারের প্রথম একনেক বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৮৯৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি টাকায় এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। অর্থমন্ত্রী ও একনেকের বিকল্প চেয়ারপারসন আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষি মন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক; বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি; গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীরা সভার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় পরিকল্পনা সচিব মো. জিয়াউল ইসলাম, সাধারন অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ, পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস ও আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোহাম্মদ দিলোয়ার বখতসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিং-এ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমার একটাই লক্ষ্য গতি বৃদ্ধি করা। উন্নয়নের পথে আমরা সবাই তীর্থ যাত্রী। তাই সবাই মিলেই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবো। গতি বৃদ্ধি করা অর্থ হচ্ছে বর্তমানে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য যে গতি ছিল তা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, ভূমি ধ্বসের মতো বিজয়ের মধ্যেদিয়ে আমরা উঠে এসেছি। আমাদের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে উন্নয়ন। তিনি জানান, জনগনের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সবসময় সাবধানতা অর্জন করবো। প্রয়োজন ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত খরচ করবো না।
একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- পিপিআর রোগ নিমূল এবং ক্ষুরারোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩৪৫ কোটি টাকা। এছাড়া দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে পুষ্টি সমৃদ্ধ উচ্চ মূল্যেও অপ্রধান শস্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ কর্মসূচি, ব্যয় ২০৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। বিদ্যমান ৭টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের উন্নয়ন ও নতুন ৬টি টেক্সটাইল ভোকেশনার ইনস্টিস্টিটিউট স্থাপন, ব্যয় ৩৫৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের জাদুঘর ভবন সম্প্রসারণ এবং অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, ব্যয় ১৪৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। গোপালগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণ, ব্যয় ১০২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। নেত্রকোণা জেলার চল্লিশা (বাগড়া)-কুনিয়া- মেদনী-রাজুরবাজার সংযোগ মহাসড়ক নির্মান, ব্যয় ২৫৭ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং গোবিন্দগঞ্জ ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়কে বিদ্যমান ৯টি সরু ও জরাজীর্ণ সেতুর স্থলে ৯টি আরসিসি পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১১১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
ব্রিফিং এ জানানো হয়, যাত্রাবাড়ী (মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার)-ডেমরা (সুলতানা কামাল সেতু) মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩৬৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, যাত্রাবাড়ী-ডেমরা-শিমরাইল-নারায়নগঞ্জ সড়কটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যা দুটি প্রধান জাতীয় মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক ও ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়কে সংযুক্ত করেছে। অনুমোদিত সড়কাংশটি ইতিমধ্যেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মূল অংশের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কাচঁপুর সেতু ও পোল্ডার সড়ক নির্মাণের ফলে এই সড়কাংশ হতে নতুন সড়কে যান চলাচল বেড়ে যায়। যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর অংশটি বর্তমানে ৮ লেন বিশিষ্ট মহাসড়ক যেখানে দেশের পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সকল যান এসে মিলিত হয়। ফলে এই এলাকায় নিয়মিত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার এর টোলের কারণে যাত্রাবাড়ী-ডেমরা সড়কাংশে যান চলাচলের অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু সংখ্যক বাণিজ্যিক শিল্প প্রতিষ্ঠান আশেপাশে গড়ে উঠায় যান চলাচলের পরিমাণ অনেকাংশে বৃদ্ধি পেেেয়ছে। কাচঁপুর সেতুর যানজট এড়ানোর জন্য সিলেট থেকে আগত যানবাহন তারাবো-যাত্রাবাড়ী সড়কাংশ ব্যবহার করে। ঢাকা-ডেমরা-শিমাইল সড়কের দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার এবং বিদ্যমান প্রস্থ ৭ দশমিক ৩ মিটার তাই প্রকল্পের আওতায় এই সড়কটি ১৫ দশমিক ৬০ মিটার প্রস্থে ৪ লেন সড়ক হিসাবে নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ধীরগতির যান চলাচলের জন্য প্রস্তাবিত মূল ৪ লেন সড়কের উভয় পাশে ২ লেন বিশিষ্ট পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ করা হবে।#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন